
ছবি : সংগৃহীত
অভ্যুত্থানোত্তর প্রায় দশ মাস পার হলেও বাংলাদেশ এখনো রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং প্রশাসনিক অনিশ্চয়তায় রুদ্ধশ্বাস সময় পার করছে। একদিকে গণঅভ্যুত্থনের পক্ষে থাকা শক্তিগুলোর লাগাতার মিছিল ও দাবির মুখে ক্লান্ত অন্তর্বর্তী সরকার, অন্যদিকে সমঝোতার অভাবে আরও জটিল হয়ে উঠছে পরিস্থিতি।
বর্তমান এই অচলাবস্থায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুসের পদত্যাগের সম্ভাবনা নিয়েই শুরু হয়েছে নতুন আলোচনা। বিশ্লেষকদের মতে, এ ধরনের সিদ্ধান্ত দেশের সংকটকে আরও ঘনীভূত করবে।
রাজপথে এখন নিয়মিত চিত্র হয়ে উঠেছে মব এবং দাবি আদায়ের মিছিল। গাজীপুরের বিভিন্ন শিল্পাঞ্চলের শ্রমিকদের আন্দোলন তার একটি উদাহরণ। অন্যদিকে, আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং বিচার ব্যবস্থা নিয়েও জনমনে প্রশ্ন বাড়ছে।
এই পটভূমিতে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক এবং দ্রুত নির্বাচনের আয়োজনের তাগিদ জোরালো হচ্ছে। কিন্তু পরিস্থিতির উন্নতির চেয়ে বরং আরও জটিলতার আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষক বদরুদ্দীন উমর বলেন, “ইউনুস দায়িত্ব ছেড়ে দিলে এখানে একটি বিশৃঙ্খল অবস্থা তৈরি হবে এবং দেশ কোন দিকে যাবে সেটা বলা মুশকিল। আমি এটাকে একটি হুমকি হিসেবেই দেখি।”
তিনি আরও বলেন, সেনাবাহিনী এসে ক্ষমতায় নিয়েও এটা যে খুব সুখে থাকবে বা এই পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করবে এরকমও মনে হয় না। সেনাবাহিনীতে সেরকম কোন ব্যক্তিত্বও নাই।
রাষ্ট্রচিন্তক ফরহাদ মজহার আরও স্পষ্ট ভাষায় বলেন, “এখন যদি তিনি পদত্যাগ করেন, তাহলে আমরা তো মহাবিপদে পড়ে যাব। সেনাবাহিনী যদি তাকে এই পদক্ষেপ নিতে বলে, তাহলে সেটা তার এখতিয়ার বহির্ভূত কাজ। এক্ষেত্রে তিনি রেফারেন্ডামের মাধ্যমে জনগণের মত নিতে পারেন।”
অপরদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাকীব আহমেদ বলেন, “এই সংকট থেকে উত্তরণের জন্য দ্রুত নির্বাচন আয়োজন করা জরুরি। এর পাশাপাশি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসে ভুল বোঝাবুঝি দূর করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ।”
তিনি আরও যোগ করেন, “আর্মি বাংলাদেশের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ স্টেকহোল্ডার। তাই আর্মির সঙ্গে দূরত্ব নয়, বরং সমন্বয় করাই এখন দরকার।”
বিশ্লেষকদের অভিমত, ড. ইউনুসের পদত্যাগ সংকট নিরসনের পথ নয় বরং তা পরিস্থিতিকে আরও খারাপ করে তুলবে। এই মুহূর্তে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠান ও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আস্থা এবং দায়িত্বশীল আচরণ ছাড়া সংকট উত্তরণের বাস্তবসম্মত পথ নেই।
সা/ই