
চা থেকে শুরু করে মিষ্টি, প্রতিদিনকার জীবনে চিনি যেন অদৃশ্য এক সঙ্গী। কিন্তু জানেন কি, এই প্রক্রিয়াজাত চিনি বদলে যদি ব্যবহার করেন প্রাকৃতিক গুড়, তাহলে আপনার শরীরে ঘটতে পারে বেশ কিছু অপ্রত্যাশিত ইতিবাচক পরিবর্তন?
ক্লাউডনাইন হাসপাতাল, নয়ডার ক্লিনিক্যাল নিউট্রিশনিস্ট রক্ষিতা মেহরা জানিয়েছেন, অনেকেই গুড়কে ‘চিনির স্বাস্থ্যকর বিকল্প’ হিসেবে নেন, কিন্তু এ সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে এর ভালো ও খারাপ দুই দিকই জানা জরুরি।
গুড় শুধু একটি মিষ্টি স্বাদই নয়, এটি একেবারে পুষ্টির ভাণ্ডার।
প্রক্রিয়াজাত চিনিতে থাকে শুধুই ক্যালরি, যাকে বলা হয় "ফাঁকা ক্যালোরি"।
অন্যদিকে, গুড়ে থাকে:
- আয়রন
- ম্যাগনেসিয়াম
- পটাসিয়াম
- ক্যালসিয়াম
এই খনিজ উপাদানগুলো আমাদের শরীরের জন্য অত্যন্ত উপকারী।
রক্ষিতা মেহরার মতে, গুড় খাওয়ার ফলে:
- হজমশক্তি বাড়ে, এটি হজমে সহায়তা করে এমন উৎসেচক উদ্দীপিত করে।
- দেহের টক্সিন দূর করতে সাহায্য করে।
- রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায়, কারণ এতে আছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও খনিজ।
- হৃদযন্ত্রের সুস্থতায় ভূমিকা রাখে, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়তা করে।
- ওজন কমাতে সহায়ক, গুড় ধীরে শক্তি ছাড়ে, ফলে ইনসুলিন স্পাইক হয়।
কিন্তু সব গুড় কি নিরাপদ? না, দুর্ভাগ্যবশত নয়। বাজারে পাওয়া অনেক গুড় রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় তৈরি। এইসব গুড়ে থাকে সালফার, ক্যালসিয়াম কার্বাইড বা রঙ, যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
তাই রক্ষিতা মেহরার পরামর্শ, "সবসময় অর্গানিক বা প্রাকৃতিকভাবে প্রক্রিয়াজাত গুড় বেছে নিন।"
তবে যদি আপনি নিচের কোন ক্যাটাগরিতে পড়েন, তাহলে গুড় খাওয়া সীমিত বা এড়িয়ে চলাই ভালো:
- ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ও রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে না থাকলে
- আইবিএস বা হজমের সমস্যা থাকলে
- ক্যালরি নিয়ন্ত্রিত ডায়েট অনুসরণ করলে
- আখ বা গুড়ের অ্যালার্জি থাকলে
এ ছাড়া, যাদের চিনি জাতীয় খাদ্য খেলে ত্বকে র্যাশ, হজমের সমস্যা বা শ্বাসকষ্ট হয়, তাদের জন্য গুড়ও বিপজ্জনক হতে পারে।
তাহলে কি গুড়ই ভবিষ্যতের চিনি?
গুড় নিঃসন্দেহে চিনির তুলনায় অনেক বেশি পুষ্টিকর।
তবে এটাও একধরনের চিনি, তাই পরিমাণে নিয়ন্ত্রণ না রাখলে ক্ষতি হতেই পারে।
রক্ষিতা মেহরার ভাষায়,
"গুড় চিনির তুলনায় ভালো, কিন্তু এটাও চিনি, সঠিক পরিমাণ আর খাঁটি গুড় বেছে নিলেই লাভবান হবেন।"
চিনি বদলে গুড় খান, তবে খাঁটি হলে, আর সীমিত পরিমাণে। গুড় শুধু মিষ্টি নয়, শরীরের জন্য দরকারি খনিজের উৎস। গুড় খেলেও মন রাখুন, সবার জন্য নয়, আর মাত্রা ছাড়ালে ক্ষতি!
সায়মা