
কোরবানি নিয়ে মানুষের মাঝে কিছু প্রচলিত ভ্রান্ত ধারণা রয়েছে। তার মধ্যে একটি হলো মৃত ব্যক্তিদের পক্ষ থেকে কোরবানি দিতে হবে, জীবিতদের নয়। এমনকি অনেকেই ভাবেন, কোরবানি শুধু মৃত আত্মীয়দের জন্যই প্রযোজ্য। বাস্তবে এই ধারণা কতটা সঠিক, ইসলাম কী বলে চলুন জেনে নেওয়া যাক।
'কোরবানি' শব্দটি এসেছে আরবি ‘কুরবান’ থেকে, যার অর্থ হলো উৎসর্গ করা, আর ‘কুরবান’ শব্দটি উৎপন্ন ‘কুরবু’ ধাতু থেকে, যার মানে আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া।
রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবিরা একবার জিজ্ঞেস করেন, “হে আল্লাহর রাসূল! এই কোরবানির অর্থ কী?” তিনি বলেন, “এটি তোমাদের পিতা ইব্রাহিম (আ.)-এর সুন্নত।” সাহাবিরা আবার জানতে চান, “এতে আমাদের কী ফায়দা?” নবীজি বলেন, “প্রতিটি পশমের বিনিময়ে একটি করে নেকি রয়েছে।” (ইবনু মাজাহ)
এই হাদিস থেকে বোঝা যায়, কোরবানি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদত। তবে কোরবানি শুধু মৃতদের পক্ষ থেকে করতে হবে এই ধারণার ভিত্তি নেই। কোরবানি মূলত জীবিত ব্যক্তির ওপর ওয়াজিব হয়, যদি তার সামর্থ্য থাকে।
তবে ইসলাম মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে কোরবানি করাকে পুরোপুরি অস্বীকারও করে না। এটি একটি সওয়াবের কাজ এবং করা জায়েয। কেননা কোরবানি একটি সাদকা। আর যেমন করে মৃতের নামে সদকা করা যায়, তেমনি তার নামে কোরবানিও করা যায়। এতে করে মৃত ব্যক্তি উপকৃত হবেন ইনশাআল্লাহ।
এ প্রসঙ্গে হাদিসে এসেছে হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি নবী (সা.)-কে এসে বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আমার মা হঠাৎ ইন্তেকাল করেছেন। কোনো অসিয়ত করে যেতে পারেননি। আমি যদি তার পক্ষ থেকে সদকা করি, তাহলে কি সে সওয়াব পাবে?” নবীজি বললেন, “হ্যাঁ।” (সহিহ বুখারি ১৩৩৮, সহিহ মুসলিম ১০০৪)
এই হাদিসের ব্যাখ্যায় ফকিহরা বলেন, যদি সদকার সওয়াব পৌঁছে, তবে কোরবানির সওয়াবও পৌঁছবে। কারণ কোরবানিও এক ধরনের সদকা।
তবে যাদের ওপর কোরবানি ওয়াজিব, তাদের উচিত প্রথমে নিজের পক্ষ থেকে কোরবানি আদায় করা। এরপর ইচ্ছা করলে মৃত আত্মীয় বা অন্যের পক্ষ থেকেও কোরবানি করতে পারেন।
এমন নজিরও আছে যে, রাসূলুল্লাহ (সা.) একবার দুইটি দুম্বা কোরবানি করেন। একটি তার নিজের ও পরিবারের জন্য, অপরটি তার উম্মতের জন্য যারা আল্লাহর একত্ব ও তার রিসালাতের সাক্ষ্য দিয়েছে। (ইবনে মাজাহ ৩১২২)
আধুনিক ফকিহদের মতে, কেউ যদি তার ওয়াজিব কোরবানির নিয়তের পাশাপাশি কোনো মৃত আত্মীয়ের উদ্দেশ্যে সওয়াব পৌঁছানোর নিয়ত করেন, তাহলেও কোরবানি সহি হবে এবং উভয়ের জন্যই সওয়াব হবে ইনশাআল্লাহ। এটি সবচেয়ে নিরাপদ ও উত্তম পদ্ধতি। (রদ্দুল মুহতার ৯/৪৮৪)
তবে একটি বিষয় খেয়াল রাখতে হবে যদি মৃত ব্যক্তি কোরবানি করার অসিয়ত করে যান, তাহলে সেই কোরবানি তার সম্পত্তির এক-তৃতীয়াংশ থেকে আদায় করতে হবে এবং সেই গোশত গরিবদের মাঝে সদকা করে দিতে হবে। আত্মীয় বা পরিবার সে গোশত খেতে পারবেন না।
কোরবানি আমাদের ঈমানের প্রতীক, ত্যাগের অনুশীলন। মৃত হোক বা জীবিত প্রত্যেকের জন্য ইহা হতে পারে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের সেতুবন্ধ। তাই ভুল ধারণা নয়, সঠিক জ্ঞান নিয়েই আসুন আমরা কোরবানির ইবাদতে অংশ নিই।
মিমিয়া