
ময়মনসিংহে প্রথম ৭ শতাংশ জমিতে ১৩ জাতের আঙুর চাষ করেছেন কলেজছাত্র সুমন মিয়া, লাল, কালো আর সবুজ রঙের আঙুরে ভরে উঠেছে ময়মনসিংহের একটি বাগান। মাত্র সাত শতাংশ জমিতে বাহারি আঙুর চাষ করে নজর কেড়েছেন কলেজপড়ুয়া তরুণ সুমন মিয়া। ময়মনসিংহের ভালুকা উপজেলার কৈয়াদী গ্রামের কৃষক আব্দুল ছাত্তার (৬৫) ও মা সফিয়া বেগম পরিবারের ২য় সন্তান। টাঙ্গাইলের সখীপুর সরকারি মুজিব কলেজে সমাজকর্ম বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) তৃতীয় বর্ষে লেখাপড়া করছেন। লেখাপড়ার পাশাপাশি আঙুর চাষ সহ বিভিন্ন সবজি বাগান করে সফলতা এনেছেন। ১ লক্ষ টাকা চলতি মৌসুমে আঙুর বিক্রি করার আসাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
সুমন মিয়া বলেন, ছোটবেলা থেকেই কৃষির প্রতি তাঁর আগ্রহ। বাবার কৃষিকাজ ও স্থানীয় বাজারে পরিবারের কীটনাশকের দোকান তাঁকে কৃষিতে যুক্ত হতে উদ্বদ্ধ করে। এলাকাজুড়ে ড্রাগন ফল, পেয়ারা, কলাসহ বিদেশি ফলের ভালো ফলন দেখে আঙুর চাষের প্রতি চিন্তা আসে তাঁর মাথায়। ইউটিউব ও ফেসবুকে বিভিন্ন দেশের চাষপদ্ধতি দেখে ২০২২ সালে যশোর থেকে ভারতীয় জাতের ২৭টি আঙুরের চারা এনে তিনি নিজ বাড়ির পাশে রোপণ করেন।
তিনি আরও বলেন, ‘ইউটিউবে দেখে চাষপদ্ধতি শিখেছি। লতানো গাছের জন্য মাচা উঁচু করে দিয়েছি। ২৫টি গাছ নষ্ট হয়ে গেলেও বাকি ৩৫টি গাছে এবার ফলন ভালো হয়েছে। আঙুরবাগানে শুধু ছত্রাকনাশক ব্যবহার করতে হয়। এ ছাড়া অন্য রাসায়নিক সারের প্রয়োজন পড়ে না। মে মাসের শুরু আঙুর পাকতে শুরু করেছে। জুন মাসের শেষে দিকে আঙুর বাগানের ফল বিক্রি শেষ হবে বলে তিনি আশাবাদী।’
শুক্রবার কথা হয় সুমনের সাথে তিনি জানান, বাগান ঘুরে দেখেন ময়মনসিংহ কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক নাছরিন আক্তার বানু। তিনি বলেন, জেলায় বাণিজ্যিকভাবে আঙুর চাষের উদাহরণ নেই। অনেকের ধারণা, এখানকার মাটিতে আঙুর টক হবে। এই ধারণা ভুল প্রমাণ করেছে সুমনের আঙুর বাগান। তাঁর বাগানের আঙুর মিষ্টি। আঙুরের চারা তৈরিতেও সুমন দক্ষ হয়ে উঠছেন ইতিমধ্যেই। সুমন মিয়া আরও বলেন, লেখাপড়ার পাশাপাশি ইউটিউব দেখে আমি ইউক্রেন, রাশিয়া, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা, ভারত সহ বিভিন্ন দেশের চারা সংগ্রহ করে বাগানে রোপন করেছি। আশা করছি ভবিষ্যতে বাংলাদেশ সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আমার বাগানের আঙুর রপ্তানি করতে পারব।
বাগান দেখতে ও আঙুর কিনতে আসছেন স্থানীয় লোকজন। সবুজ আঙুর ৪০০ টাকা এবং লাল-কালো আঙুর ৪৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি করেছেন সুমন। প্রতিটি গাছে ধরেছে ১৫ থেকে ২০ কেজি ফল। গত ৩ বছরে বাগানে প্রায় এক লাখ টাকা খরচ হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এ বছরই সব খরচ উঠে যাবে আশা করছি। অনেকে আমার বাগান থেকে চারা নিয়ে চাষ শুরু করেছেন। আমি চাই বাংলাদেশে ঘরে ঘরে আঙুরের চাষ হোক। বিদেশ থেকে যেন আর আঙুর আনতে না হয়।’
সুমনের মা সুফিয়া আক্তার বলেন, বাড়ির পাশেই ছেলের শখের আঙুরবাগান। আঙুরের বাগান করার কথা শুনে প্রথমে নিষেধ করেছিলেন। ছেলে বায়না ধরায় শেষ পর্যন্ত আর না করতে পারেননি। গত বছর আঙুর হলেও সেগুলো টক হয়েছিল। কিন্তু এ বছর বাগানজুড়ে আঙুর হয়েছে, খেতেও অনেক মিষ্টি। আঙুর দেখলে মনটা ভালো হয়ে যায়। আগামী বছর ছেলেকে আরও বেশি জমিতে আঙুর চাষ করতে বলবেন বলে জানালেন।
ভালুকা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নুসরাত জামান বলেন, এ উপজেলার মাটি যেকোনো ফল চাষের জন্য উপযোগী। আঙুর সামান্য অম্লীয় মাটিতে ভালো ফলন দেয়। সুমনের বাগানে এখন ভালো ফল দিচ্ছে। সরকারি সহায়তায় পলিনেট হাউস দেওয়া গেলে তিনি এ চাষে আরও বিস্তার করতে পারবেন।
ভালুকা উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা হাসান আব্দুল্লাহ আল মামুন জনকণ্ঠকে বলেন, আমার উপজেলায় ৮/১০ শতাংশ জমিতে ১৩ প্রজাতির সবুজ, কালো সহ বিভিন্ন রঙের আঙুরের চাষ করেছেন সুমন মিয়া। আঙুরের গুণগত মান ভালো। বাজার থেকে বাগানের আঙুরের সাইজ ও দাম দুটিই ভালো। অন্য চাষিরা যদি আগ্রহী হয় তবে কৃষি অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসন তাদের সাথে আছে। তিনি বলেন, ২০২২ সালে ২৭টি আঙুরের চারা দিয়ে বাগান শুরু করেছিল সুমন মিয়া। এক পর্যায়ে তা কেটে ৩৫টি পুরাতন ও ১০টি নতুন সহ মোট বাগানে ৪৫টি চারা আছে।
সায়মা