ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পরিত্যক্ত জেলখানা এখন ভূতের বাড়ি

প্রদীপ রায় জিতু, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, বীরগঞ্জ

প্রকাশিত: ০০:১৯, ২৫ মে ২০২৫

পরিত্যক্ত জেলখানা এখন ভূতের বাড়ি

বীরগঞ্জ পুরোনো জেলখানা ভবন অযত্ন-অবহেলায় এখন ভূতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে


দিনাজপুরের বীরগঞ্জ পুরাতন জেলখানা অত্যন্ত অবহেলায় এখন যেন ভুতুড়ে বাড়িতে পরিণত হয়েছে। এটি পরিত্যক্ত হওয়ার পর প্রতিদিন সন্ধ্যার পরে চলে বখাটে নেশাখোর ছেলেদের আড্ডা। দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে অনেকেই এখন জেলখানাটি ভূতের বাড়ি নামেই চেনে। 
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বিগত ৩৩ বছর আগে বীরগঞ্জ উপজেলায় ১০০ শত জন কয়েদির ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন মিনি সাব জেলখানা নির্মাণ করেন। 
জানা যায়, ১৯৯১ সালে সরকার উপজেলা আদালতগুলোকে জেলা শহরে স্থানান্তর করে। সারা বাংলাদেশে ২৫টি উপ-কারাগার ছিল। উপ-কারাগার গুলোকে প্রত্যাহার করলে, এটি গত ৩৩ বছর ধরে পরিত্যক্ত। উপ-কারাগার এর বর্তমান অবস্থা, অযত্ন, অবহেলা আর তদারকির অভাবে কারাগারটির দরজা-জানালা ভেঙে ভুতুড়ে ঘরে রূপান্তরিত হয়েছে। 
জানা যায়, ১৯৮১ সালে সরকারি ভাবে থানাগুলোকে উপজেলায় রূপান্তর করে, সেই সময় প্রতিটি উপজেলা আদালতে বিচার কার্য চালু ছিল। বর্তমান দিনাজপুর জেলা কারাগার ১৮৫৪ সালের উত্তর বঙ্গের বৃহত্তম কারাগার হিসেবে স্থাপিত হয়েছিল। 
স্থানীয়রা আরো জানান, দণ্ডপ্রাপ্ত বন্দিরা ওইসব ভবনে বসে কাজ করতেন। ডান দিকে 'আমদানি ওয়ার্ড' বলে পরিচিত 'যমুনা সেল'। টিনের ছাউনির একতলা লম্বা ঘর। দরজা বলতে লোহার ফটক। তা দিয়ে যতটুকু আলো-বাতাস আসে। ফলে দিনেও ভেতরটা আবছা আঁধার। কারাগারে আসা বন্দিদের প্রথমে এখানে রাখা হতো। আমদানি সেলের মুখে বিশাল তিনতলা ভবন 'মেঘনা'। এটি ছিল সাধারণ বন্দিদের ওয়ার্ড। এর পাশে হাসপাতাল ওয়ার্ড। কারাগারের সবচেয়ে আরামের জায়গা বলে পরিচিত ছিল হাসপাতাল ওয়ার্ড। 
অভিযোগ আছে, কারা কর্মকর্তাদের ঘুষ দিলেই এখানে আরামে থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা হয়ে যেত। সামনের দিকে তিনতলা ওয়ার্ড 'হাসনাহেনা'। বিডিআর বিদ্রোহে জড়িত সদস্যদের এই সেলে রাখা হতো। এর পাশে ফাঁসির আসামিদের সেল। আরও আছে 'চম্পাকলি' সেল। সেনা-সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে গ্রেফতার হওয়া রাজনৈতিক নেতারা এই সেলে থাকতেন। আরেকটি সেলের নাম 'নীলনদ'। বিদেশি বন্দিরা এই সেলে থাকতেন। এ রকম চমৎকার নামের আরও সেল আছে। যেমন পদ্মা সেল, মেঘনা সেল, মণিহার, সুরমা, রূপসা, শাপলা, বনফুল, জলসিঁড়ি, বকুল ইত্যাদি। 
প্রদর্শনী: 'সংগ্রামী জীবনগাঁথা' নামে শেখ মুজিবুর রহমান ও জাতীয় চার নেতার আলোকচিত্র নিয়ে কারাগারের ভেতরে প্রথম প্রদর্শনী শুরু হয়। জেলহত্যা দিবস উপলক্ষ্যে বাংলাদেশ জেল ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জার্নি যৌথভাবে এর আয়োজন করে। 
২২৮ বছরের পুরোনো বন্দিশালা কারাগারটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল ১৭৮৮ সালে। প্রায় ৩৮ একর জায়গার ওপর সুবেদার ইব্রাহিম খাঁ চকবাজারে একটি দুর্গ নির্মাণ করেন। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির আমলে এটি জেলখানায় রূপান্তরিত হয়। এখন সেই কারাগারের জায়গায় হবে বিনোদন কেন্দ্র। বন্দিদশা অনুভব করার জন্য ভাড়া দিয়ে থাকাও যাবে কারাগারের ভেতরে। তৈরি হবে শপিংমল, আধুনিক পার্ক, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র, ব্যায়ামাগার, কনভেনশন সেন্টার ও জাদুঘর। 
দিনাজপুরের উত্তরেও বীরগঞ্জ উপ-কারাগার হয়েছে ১৯৮৪ সালে। যার আয়তন ছিল ২২০ শতাংশ জমি। তবে বর্তমানে কমে ১৮০ শতাংশ জমি। তবে ১৯৯১ সাল থেকে বীরগঞ্জ উপ-কারাগার ৩৩ বছর থেকে পরিত্যক্ত। বীরগঞ্জ উপ-কারাগারের রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে থাকা মো, আব্দুর রহমান জানান, কোন ক্ষয়ক্ষতি করতে না দেয়ায় রাতে আক্রমণ করার চেষ্টা করে অনেকে। 
এ বিষয়ে বীরগঞ্জ সমাজসেবা অধিদপ্তরের কর্মকতা মো. তরিকুল ইসলাম, কারাগারটি ২০০৪ সালের ২২ মার্চ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতে সমাজসেবা অধিদফতরকে হস্তান্তর করেন। রংপুর বিভাগে শিশু অপরাধী সংশোধনী কারাগার না থাকায়, এটিকে রূপান্তরিত করতে পারেন। তিনি আরো বলেন, ঢাকা থেকে আগত একটি টিম পরিদর্শন করেন।

 

সাব্বির

×