ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

আলোকিত রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণে মানুষকে মানুষ হিসেবেই গড়ে তুলতে হবে: প্রিন্স

নিজস্ব সংবাদদাতা, হালুয়াঘাট, ময়মনসিংহ

প্রকাশিত: ১৯:০৮, ১২ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ১৯:০৯, ১২ জুলাই ২০২৫

আলোকিত রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণে মানুষকে মানুষ হিসেবেই গড়ে তুলতে হবে: প্রিন্স

ছ‌বি: জনকণ্ঠ

বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সৈয়দ এমরান সালেহ প্রিন্স বলেছেন, যতই সংস্কার বা পুনর্গঠন হোক না কেন, মানুষের মধ্যে মানবিকতা ও সহনশীলতা জাগ্রত না হলে মানবিক রাষ্ট্র বা সমাজ গড়া সম্ভব না। আলোকিত রাষ্ট্র ও সমাজ বিনির্মাণে মানুষকে মানুষ হিসেবেই গড়ে তুলতে হবে।

শনিবার দুপুরে ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে “আলোকিত হালুয়াঘাট রূপকল্প” শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনায় তিনি এসব কথা বলেন। পৌর শহরের অগ্রযাত্রা কনভেনশন সেন্টারে দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত এই গোলটেবিল বৈঠকে হালুয়াঘাটের গণ্যমান্য ও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ হালুয়াঘাটের সার্বিক উন্নয়নে রূপকল্প ও অভিকল্প প্রণয়ন এবং বাস্তবায়নে তাদের মতামত তুলে ধরেন।

বৈঠকে এমরান সালেহ প্রিন্স, গতকাল ঢাকায় মিডফোর্ট হাসপাতালের সামনে সংঘটিত নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে বলেন, এই নৃশংসতা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, মানুষের মধ্যে যদি মনুষ্যত্ববোধ না থাকে, তবে সে মানুষ নামের অমানুষ।

তিনি বলেন, আমরা যতই উন্নয়নের কথা বলি না কেন, একজন মানুষের মধ্যে যদি মানবিকতা, মনুষ্যত্ববোধ, ভ্রাতৃত্ববোধ ও মমত্ববোধ না থাকে, তবে সেই উন্নয়ন কেবল কথামালা বা অবকাঠামোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে।

তিনি আরও বলেন, ব্যক্তির দায় দল নেবে না। দল সেই দায় নেবে, যা দল নিজে নির্দেশ দেয়। সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দখলবাজি বিএনপির অভিধানে নেই। এসব অনৈতিক কাজে বিএনপি কোনোভাবেই প্রশ্রয় দেয় না—গত কয়েক মাসে তা প্রমাণিত হয়েছে। বিএনপি যদি আওয়ামী লীগের মতো অনৈতিকতাকে প্রশ্রয় দিত, তাহলে বিএনপিকে দোষ দেওয়া যুক্তিসঙ্গত হতো। কিন্তু বিএনপি তা করছে না। এরপরও যারা এসব বিষয়ে বিএনপিকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে চায়, তাদের উদ্দেশ্যই ভিন্ন।

তিনি বলেন, দুর্ভাগ্যজনক কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনাকে একটি-দুটি দল ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে ফায়দা নিতে তৎপর। যাতে নির্বাচন বিলম্বিত হয়। অসত্য কিছু দিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিল করা যায় না। জনগণের ভেতরে বিএনপির শেকড় গভীরে। যারা ভাবেন টোকা দিলে বিএনপি পড়ে যাবে, তারা দিবাস্বপ্ন দেখছেন।

তিনি বলেন, গতকাল পুরান ঢাকায় সংগঠিত বর্বরোচিত হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানানোর ভাষা আমার নেই। আমি ভিডিওতে দেখে স্তম্ভিত, লজ্জিত। যারা এই জঘন্য কাজ করেছে, তারা কোনো দলের হতে পারে না। যিনি নিহত হয়েছেন, তিনি যুবদলের কর্মী। যিনি হত্যাকারী, তিনিও যুবদলের কর্মী। যুবদলের হোক বা না হোক, তিনি বাংলাদেশের একজন নাগরিক। স্বাভাবিক মৃত্যুর গ্যারান্টি সবারই থাকা উচিত। দোষী যেই হোক, তার কঠোর শাস্তি হওয়া প্রয়োজন। এ ক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীরও দায় আছে বলে আমি মনে করি।

এ পর্যন্ত অনৈতিক কাজের জন্য বিএনপি যাদের বহিষ্কার করেছে, তাদের মধ্যে কতজনকে আটক করা হয়েছে? বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী নিজেরা উদ্যোগ নিয়ে সন্ত্রাসী দমনে কী কাজ করেছে, যাতে এসব দুষ্কৃতিকারীরা ভয় বা আতঙ্কে থাকে? আমরা গণ-অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এভাবে দেখতে চাইনি। শক্তিশালী পুলিশিং ব্যবস্থা শান্তিপূর্ণ সমাজের জন্য অপরিহার্য। সন্ত্রাসীরা যদি ভয় না পায়, আতঙ্কে না থাকে, তবে সন্ত্রাসী কার্যকলাপ আরও বিস্তার লাভ করবে।

এই নির্মম হত্যাকাণ্ড আমি মেনে নিতে পারছি না। বিষয়টিকে রাজনৈতিক রঙ না দিয়ে সন্ত্রাস হিসেবে দেখা উচিত। এসবের বিরুদ্ধে সামাজিক প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে। মানবিকতা সবার মধ্যে জাগ্রত করতে হবে।

গোলটেবিল বৈঠকে আরও বক্তব্য রাখেন হালুয়াঘাট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক আসলাম মিয়া বাবুল, পৌর বিএনপির আহ্বায়ক হানিফ মোহাম্মদ শাকের উল্লাহ, বীর মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আমজাদ আলী, বীর মুক্তিযোদ্ধা সুশীল ঘাগড়া, বাবু বিষ্ণু চৌহান, হালুয়াঘাট সাধারণ পাঠাগারের সভাপতি মজিবর রহমান, কয়লা আমদানি ও রপ্তানিকারক গ্রুপের মহাসচিব অশোক সরকার অপু, হালুয়াঘাট বিআরডিবির চেয়ারম্যান আবু হাসনাত বদরুল কবীর, বিআরডিবির সাবেক চেয়ারম্যান শাহ আফাজ উদ্দিন, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী ফরিদ আহমেদ পলাশসহ আরও অনেকে।

এম.কে.

×