ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২

মানুষের আগেই মহাকাশে ভ্রমণ করেছে যেসব প্রাণী

প্রকাশিত: ১৯:০৯, ১২ জুলাই ২০২৫

মানুষের আগেই মহাকাশে ভ্রমণ করেছে যেসব প্রাণী

ছবি: সংগৃহীত

মানুষের আগেই মহাকাশ পাড়ি দিয়েছে একঝাঁক সাহসী প্রাণী। কেউ বেঁচে ফিরেছে, কেউ ফিরতে পারেনি—তবে তাদের সকলের অবদানই আজকের মহাকাশযাত্রার ভিত গড়ে দিয়েছে। ফলের মাছি, কুকুর, বানর, কচ্ছপ, এমনকি কৃমিও ছিল সেই তালিকায়।

মহাকাশযাত্রার সূচনালগ্নে প্রাণীর ব্যবহার

মহাকাশযাত্রার শুরুর দিকে মানুষের উপর মাধ্যাকর্ষণহীন পরিবেশের প্রভাব সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের মধ্যে ছিল গভীর উদ্বেগ। মানুষ আদৌ দীর্ঘসময় মহাকাশে টিকে থাকতে পারবে কিনা—তা জানতেই শুরু হয় প্রাণী পাঠানোর পরীক্ষা।

১৯৪০ ও ৫০ দশকে আমেরিকা ও সোভিয়েত ইউনিয়ন একাধিক প্রাণীকে মহাকাশে পাঠায়। ফলের মাছি, কুকুর, বানর, ইঁদুরসহ বিভিন্ন প্রাণীর উপর এসব গবেষণা আজকের মানব মহাকাশ অভিযানের ভিত্তি তৈরি করে।

কুকুর: সোভিয়েত মহাকাশ অভিযানে অগ্রপথিক

লাইকা

মস্কোর রাস্তায় ঘোরাঘুরি করা এক ছোট্ট পথকুকুর লাইকা ১৯৫৭ সালে পৃথিবীর কক্ষপথে প্রথম প্রাণী হিসেবে প্রবেশ করে। যদিও লাইকা ফিরতে পারেনি, তবু মহাকাশ গবেষণায় তার অবদান স্মরণীয়।

বেলকা ও স্ত্রেলকা

১৯৬০ সালে বেলকা ও স্ত্রেলকা নামের দুই সোভিয়েত কুকুর পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে নিরাপদে ফিরে আসে। এটি ছিল মহাকাশযাত্রার ইতিহাসে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সাফল্য।

বানর: মহাকাশযাত্রার প্রস্তুতি মূল্যায়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা

আলবার্ট II

১৯৪৮ সালে আমেরিকা একটি ভি-২ রকেটের মাধ্যমে ‘আলবার্ট II’ নামের রিসাস প্রজাতির বানরকে মহাকাশে পাঠায়। সে প্রায় ৮৩ মাইল উচ্চতায় পৌঁছালেও প্যারাস্যুট অকেজো হওয়ায় তার মৃত্যু হয়।

হ্যাম

১৯৬১ সালে হ্যাম নামের এক শিম্পাঞ্জি মার্কিন ‘মার্কারি-রেডস্টোন’ রকেটে চড়ে ১৬.৫ মিনিটের উপ-কক্ষপথ ভ্রমণ করে। এর মধ্যে ৬.৬ মিনিট ছিল মাধ্যাকর্ষণহীন। সে সফলভাবে ফিরে আসে।

এনোস

১৯৬২ সালে এনোস নামের আরেক শিম্পাঞ্জি প্রথম প্রাণী হিসেবে পৃথিবীর কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করে।

গোর্ডো

১৯৫৮ সালে গোর্ডো নামের একটি স্কুইরেল বানর ৬০০ মাইল উচ্চতায় পৌঁছে। যদিও সে ফেরত আসেনি, তার হৃদস্পন্দন ও শ্বাস-প্রশ্বাসের বিশ্লেষণ বিজ্ঞানীদের আশাবাদী করে তোলে।

মাকড়সা: মাধ্যাকর্ষণহীনতায় জালের আচরণে পরিবর্তন

১৯৭৩ সালে ইউরোপিয়ান গার্ডেন স্পাইডারকে মহাকাশে পাঠানো হয়, শূন্য মাধ্যাকর্ষণের মধ্যে কীভাবে তারা জাল বোনে তা বিশ্লেষণ করার জন্য। গবেষণাটি মাইক্রোগ্র্যাভিটির প্রভাব বুঝতে সাহায্য করে।

কচ্ছপ ও ব্যাঙ: চাঁদের পথে প্রাণীযাত্রা

কচ্ছপ

১৯৬৮ সালে দুইটি রুশ কচ্ছপ চাঁদের কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করে ও নিরাপদে ফিরে আসে। এই মিশনে ছিল ওয়াইন ফ্লাই ও মিলওয়ার্মও।

ব্যাঙ

১৯৭০ সালে ব্যাঙ মহাকাশে পাঠানো হয়েছিল মোশন সিকনেস ও মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে তাদের মানিয়ে নেওয়ার ক্ষমতা বিশ্লেষণের জন্য।

কৃমি: নেমাটোড গবেষণা

নেমাটোড কৃমিকে মহাকাশ গবেষণায় ব্যবহার করা হয়েছিল। এদের মাইক্রোগ্র্যাভিটিতে আচরণ ও বিকাশ নিয়ে গবেষণা মহাকাশ চিকিৎসাবিজ্ঞানের জন্য দিকনির্দেশনা দেয়।

ইঁদুর: স্পাই স্যাটেলাইটে জীবনের পরীক্ষা

১৯৫৯ সালে চারটি কালো ইঁদুর ‘ডিসকভারার-৩’ নামক মার্কিন গোয়েন্দা উপগ্রহ মিশনে পাঠানো হয়। দুঃখজনকভাবে রকেটটি প্রশান্ত মহাসাগরে বিধ্বস্ত হয় এবং ইঁদুরগুলো মারা যায়। এটি ছিল একমাত্র ডিসকভারার মিশন যেখানে প্রাণী পাঠানো হয়েছিল।

মানুষের মহাকাশ অভিযানের ইতিহাস কেবল রকেট বা নভোচারী কেন্দ্রিক নয়—এর পেছনে রয়েছে একদল নীরব অবদান রাখা প্রাণীর গল্প। সাহস, আত্মত্যাগ আর বিজ্ঞানের প্রতি তাদের অবদান আজও স্মরণীয়।

 

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

রাকিব

×