ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২৪ মে ২০২৫, ১০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

ট্রাম্পের হুমকির পর ‘সম্মান’ দেখানোর আহ্বান ইইউর  

প্রকাশিত: ১৭:১৪, ২৪ মে ২০২৫; আপডেট: ১৭:২২, ২৪ মে ২০২৫

ট্রাম্পের হুমকির পর ‘সম্মান’ দেখানোর আহ্বান ইইউর  

ছবি: সংগৃহীত।

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে আমদানি করা সকল পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দেওয়ার পর, ইইউ ‘হুমকি নয়, সম্মানের’ ভিত্তিতে একটি বাণিজ্য চুক্তি চায় বলে জানিয়েছে।

ইইউর বাণিজ্য কমিশনার মারোস সেফচোভিচ এক বিবৃতিতে বলেন, “আমরা পুরোপুরি যুক্ত এবং এমন একটি চুক্তি চাচ্ছি যা উভয় পক্ষের জন্য কার্যকর। ইইউ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্ক অতুলনীয় এবং এটি পারস্পরিক সম্মানের ভিত্তিতে পরিচালিত হওয়া উচিত-হুমকির ভিত্তিতে নয়। আমরা আমাদের স্বার্থ রক্ষায় প্রস্তুত।”

এই মন্তব্য আসে ট্রাম্পের ওই মন্তব্যের পর, যেখানে তিনি বলেন আগামী ১ জুন থেকে ইইউর সব পণ্যে ৫০% আমদানি শুল্ক আরোপের পরিকল্পনা চূড়ান্ত। তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, “আমাদের আলোচনা কোনোদিকে অগ্রসর হচ্ছে না।” তিনি আরও বলেন, “যেসব পণ্য যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি, তাদের ওপর শুল্ক পড়বে না।”

সংবাদমাধ্যমকে ট্রাম্প বলেন, “আমি কোনো চুক্তির খোঁজে নেই-চুক্তি আমরা ঠিক করে ফেলেছি।” তবে তিনি ইঙ্গিত দেন, কোনো ইউরোপীয় কোম্পানি যদি যুক্তরাষ্ট্রে বড় বিনিয়োগ করে, তাহলে শুল্ক কার্যকর করার সময় কিছুটা পেছাতে পারেন।

যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ইউরোপীয় ইউনিয়ন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বড় বাণিজ্য অংশীদার। গত বছর ইইউ যুক্তরাষ্ট্রে ৬০০ বিলিয়ন ডলারের বেশি পণ্য রপ্তানি করেছে এবং কিনেছে প্রায় ৩৭০ বিলিয়ন ডলারের পণ্য।

ট্রাম্পের হুমকির জবাবে ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সরকার কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মাইকেল মার্টিন বলেন, “এই পথে যাওয়ার প্রয়োজন নেই। আলোচনাই একমাত্র টেকসই সমাধান।”

ফ্রান্সের পররাষ্ট্রমন্ত্রী লরঁ সেন্ট-মার্টিন বলেন, “আমরা শান্তিপূর্ণ নীতিই অবলম্বন করছি, তবে আমরা প্রতিক্রিয়ার জন্য প্রস্তুত।”

জার্মানির অর্থনীতি মন্ত্রী ক্যাথারিনা রাইখে বলেন, “আমাদের উচিত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সমাধানে পৌঁছাতে সর্বোচ্চ চেষ্টা করা।”

নেদারল্যান্ডসের প্রধানমন্ত্রী ডিক স্কোফ বলেন, “আমি ইইউর কৌশলকে সমর্থন করি। আমরা দেখেছি- যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা চলাকালে কখনো শুল্ক বাড়ে, আবার কখনো কমেও।”

ইইউ সম্মিলিতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসেছে, তবে ট্রাম্পের সাবেক অর্থনৈতিক উপদেষ্টা স্টিফেন মুর বিবিসিকে বলেন, “ইউরোপের কিছু দেশকে যুক্তরাষ্ট্র পৃথকভাবে চুক্তির টেবিলে বসাতে চাইতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, ট্রাম্পের “চূড়ান্ত লক্ষ্য হচ্ছে শুধু যুক্তরাষ্ট্র নয়, বরং পুরো বিশ্বকে চীনের প্রভাব থেকে আলাদা করা-যদি তিনি তা বাস্তবায়ন করতে পারেন, তাহলে তা ভালোই হবে।”

এপ্রিলের শুরুতে, ট্রাম্প এক ঘোষণায় ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ বিভিন্ন দেশের পণ্যের ওপর ২০% শুল্ক আরোপের কথা জানান। পরে তিনি তিন মাসের জন্য এই উচ্চ শুল্ক স্থগিত রাখেন, যা কার্যকর হওয়ার সম্ভাব্য সময় ৮ জুলাই। তবে, তিনি ১০% ভিত্তি শুল্ক বহাল রাখেন।

চীনের ওপর আরোপিত শুল্ক কিছুটা কমানো হলেও, ইইউর স্টিল ও অ্যালুমিনিয়ামের ওপর ২৫% শুল্ক বহাল থাকে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় ১৮ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের মার্কিন পণ্যের ওপর ২৫% শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিল, যদিও সেটি আপাতত স্থগিত রয়েছে। বর্তমানে ইইউ আরও ৯৫ বিলিয়ন ইউরো মূল্যের মার্কিন পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের বিষয়টি পর্যালোচনায় রেখেছে।

ট্রাম্প ইউরোপের বিরুদ্ধে অভিযোগ করে বলেন, ইইউ যুক্তরাষ্ট্র থেকে যতটা কিনছে, তার চেয়ে অনেক বেশি পণ্য বিক্রি করছে, যা একটি অসম বাণিজ্য সম্পর্ক সৃষ্টি করেছে।

তিনি আমেরিকান কোম্পানিগুলোর প্রতি ‘অবিচার’ বলে দাবি করেন, বিশেষ করে গাড়ি ও কৃষি পণ্য সংক্রান্ত নীতিমালার ব্যাপারে। তিনি এমনকি অ্যাপলকেও হুঁশিয়ারি দেন, যদি আইফোন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি না হয়, তবে তার ওপর কমপক্ষে ২৫% শুল্ক আরোপ করা হবে। পরে তিনি এই হুমকি সব ধরনের স্মার্টফোনের জন্যও প্রযোজ্য করেন।

এই হুমকির পর শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় পুঁজিবাজারে পতন হয়। যুক্তরাষ্ট্রের এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচক ০.৭% কমে যায়, আর জার্মানির ড্যাক্স ও ফ্রান্সের ক্যাক ৪০ সূচক ১.৫% এর বেশি কমে দিনের লেনদেন শেষ করে।

মিরাজ খান

×