
ছবি: সংগৃহীত
গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের পর চাটখিল থানায় অস্ত্র লুটের সময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান মো. ইমতিয়াজ হোসেন রিয়াজ (২২)। ঘটনার দীর্ঘ ৯ মাস পর তার বাবা হাবিবুর রহমান নোয়াখালী চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৫৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং আরও অজ্ঞাতনামা ৭০-৮০ জনের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
তবে ঘটনার সময় ও পরবর্তী প্রতিক্রিয়ায় একাধিক অসংগতি সামনে এসেছে। ইমতিয়াজের মৃত্যুর পর তাকে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের 'শহীদ' হিসেবে দাবি করে জেলা প্রশাসক থেকে ১০ লাখ টাকার ক্ষতিপূরণ চেক গ্রহণ করেন হাবিবুর রহমান। পরবর্তীতে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক শুরু হলে চাটখিল উপজেলার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের দুই প্রতিনিধি সাইফুল ইসলাম ও রফিকুল ইসলাম জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন। তারা দাবি করেন, ইমতিয়াজের আন্দোলনের সাথে কোনো সম্পৃক্ততা ছিল না এবং তিনি আত্মঘাতী গুলিতে মারা গেছেন।
এ বিষয়ে নোয়াখালী জেলা প্রশাসক খন্দকার ইসতিয়াক আহমেদ জানান, “গেজেট নিয়ে আপত্তি থাকায় আমরা বিষয়টি তদন্ত করছি। আপাতত তার সব সরকারি সুযোগ-সুবিধা স্থগিত রাখা হয়েছে। জেলা পরিষদ থেকে আর্থিক সহায়তা অন্য সবাই পেলেও ইমতিয়াজের পরিবার পাননি।”
এদিকে মামলার আবেদনের কপি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে এলাকায় সমালোচনার ঝড় ওঠে। অনেকেই অভিযোগ করেন, ক্ষতিপূরণের টাকা আত্মসাৎ এবং রাজনৈতিক প্রতিহিংসা থেকেই পরিকল্পিতভাবে এই মামলা দায়ের করা হয়েছে।
প্রসঙ্গত, ঘটনার পরদিন ৬ আগস্ট সাংবাদিকরা ইমতিয়াজের মৃত্যুর কারণ জানতে চাইলে তার বাবা হাবিবুর রহমান জানান, “আমার ছেলে কোনো রাজনৈতিক দলের সাথে জড়িত ছিল না, মিছিল-মিটিংয়েও যেত না। তাই কাউকে সন্দেহ করছি না বা অভিযোগও নেই।”
এদিকে মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ইমতিয়াজ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় কর্মী ছিলেন। কিন্তু ছাত্র আন্দোলনের নেতারা জানান, ২০২৪ সালের ১৮ জুলাই ছাড়া চাটখিলে কোনো কর্মসূচি হয়নি এবং ওই কর্মসূচিতেও ইমতিয়াজ অংশ নেননি।
মামলায় সাবেক এমপি এইচ এম ইব্রাহিম, সাবেক মেয়র মোহাম্মদ উল্যা ও নিজাম উদ্দিন, আওয়ামী লীগ নেতা নাজমুল হুদা শাকিল, বেলায়েত হোসেন তফাদার, শাহজাহান বাবুল, বজলুর রহমান লিটন, রাজিব হোসেন রাজু, আলী তাহের ইভুসহ ৫৭ জনের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
বাদীর আইনজীবী সাফায়েত উল্যাহ কবির জানান, আদালত বাদীর জবানবন্দি গ্রহণ শেষে চাটখিল থানা পুলিশকে আগামী ৭ কর্মদিবসের মধ্যে এ বিষয়ে কোনো মামলা হয়েছে কি না বা তদন্ত চলছে কি না, তা জানাতে নির্দেশ দিয়েছেন।
তবে চাটখিল থানার ওসি মোহাম্মদ ফিরোজ উদ্দীন চৌধুরী শনিবার (২৪ মে) বলেন, “এ বিষয়ে এখনো কোনো আদালতের নির্দেশনা পাইনি।”
আসিফ