ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

‘ধ্বংসের পথে ইতিহাসের অন্যতম বড় ব্র্যান্ড’, মাস্কের রাজনীতি সম্পৃক্ততায় খ্যাতিমান মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ

প্রকাশিত: ০৫:৩৬, ২৫ মে ২০২৫; আপডেট: ০৫:৩৭, ২৫ মে ২০২৫

‘ধ্বংসের পথে ইতিহাসের অন্যতম বড় ব্র্যান্ড’, মাস্কের রাজনীতি সম্পৃক্ততায় খ্যাতিমান মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ

ছবি: সংগৃহীত

ইলন মাস্ক তার রাজনৈতিক ভূমিকা ও বিতর্কিত সিদ্ধান্তের মাধ্যমে টেসলার মূল ক্রেতাগোষ্ঠীকে দূরে সরিয়ে দিয়েছেন, যা ইতিহাসের অন্যতম বড় ‘ব্র্যান্ড ধ্বংস’ বলে মন্তব্য করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের খ্যাতিমান মার্কেটিং বিশেষজ্ঞ স্কট গ্যালোওয়ে।

জনপ্রিয় পডকাস্ট ‘পিভট’-এর শুক্রবারের (২৩ মে) পর্বে গ্যালোওয়ে বলেন, ট্রাম্প প্রশাসনের পক্ষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারে ‘কঠোর ছাঁটাই’ ও ‘ব্যয় হ্রাস’র মতো পদক্ষেপ গ্রহণ করে মাস্ক নিজেরই বৃহৎ ব্র্যান্ড টেসলাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছেন।

তিনি জানান, ‘টেসলার প্রধান বাজার যারা ছিলেন, মাস্ক এখন তাদেরকেই বঞ্চিত করছেন। অথচ তিনি এমন এক রাজনৈতিক দলের ঘনিষ্ঠ হচ্ছেন, যারা বৈদ্যুতিক গাড়ি নিয়ে আগ্রহীই নন।’

গ্যালোওয়ের ভাষায়, তিন-চতুর্থাংশ রিপাবলিকান কোনোদিন ইভি (ইলেকট্রিক ভেহিকল) কেনার কথা ভাববেন না। অথচ মাস্ক ঠিক তাদের দিকেই ঝুঁকেছেন।

ইউরোপে টেসলার বিক্রি বিপর্যস্ত

গ্যালোওয়ে বলেন, টেসলার গাড়ি বিক্রি ইউরোপে ব্যাপকভাবে কমেছে—ফ্রান্সে ৫৯%, সুইডেনে ৮১%, নেদারল্যান্ডসে ৭৪%, ডেনমার্কে ৬৬%, সুইজারল্যান্ডে ৫০% এবং পর্তুগালে ৩৩% হ্রাস পেয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে, ইউরোপে টেসলাকে টপকে গিয়েছে চীনের ইভি নির্মাতা BYD। এপ্রিল মাসে BYD প্রথমবারের মতো ইউরোপীয় বাজারে টেসলাকে ছাড়িয়ে যায় বলে জানিয়েছে অটোমোটিভ বাজার গবেষণা প্রতিষ্ঠান জাটো ডায়নামিক্স।

গ্যালোওয়ে বলেন, ‘এটি সম্ভবত ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ব্র্যান্ড ধ্বংসগুলোর একটি। টেসলা একসময় দুর্দান্ত ব্র্যান্ড ছিল। কিন্তু মাস্ক তার মূল গ্রাহক শ্রেণিকেই হারিয়ে ফেলেছেন।’

‘ডজ’-এ সম্পৃক্ততা ও সমালোচনা

মাস্ক বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে ডিপার্টমেন্ট অফ গভর্নমেন্ট এফিসিয়েন্সি (ডিওজিই-DOGE) বিভাগের নেতৃত্ব দিচ্ছেন, যেটি মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রেসিডেন্সির অংশ হিসেবে শুরু হয়েছে। ২০২৪ সালের নির্বাচনে ট্রাম্পকে ২০০ মিলিয়ন ডলার অনুদান দেওয়ার পরই মাস্ক এই দায়িত্বে আসেন।

কিছু মার্কিন গণমাধ্যমের রিপোর্ট বলছে, মাস্কের এই সরকারি ভূমিকা নিয়ে ভোটারদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া রয়েছে। বিশেষ করে ব্যাপক হারে ফেডারেল কর্মীদের ছাঁটাইয়ের কারণে বেশিরভাগ মার্কিন নাগরিক এই পদক্ষেপে অসন্তুষ্ট।

টেসলার মুনাফা হ্রাস ও মাস্কের সরে দাঁড়ানো

এপ্রিলের শেষের দিকে টেসলা জানিয়েছে, কোম্পানির মুনাফা ৭১ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। সম্প্রতি মাস্ক জানান, মে মাস থেকে তিনি ‘ডজ’-এ তার ভূমিকা সীমিত করবেন।

তিনি বলেন, “সরকারি আর্থিক শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কাজ প্রায় শেষ। ফলে ‘ডজ’-এ আমার সম্পৃক্ততা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যাবে।”

একটি নিরপেক্ষ গবেষণা সংস্থা ‘পার্টনারশিপ ফর পাবলিক সার্ভিস’ জানিয়েছে, ‘ডজ’ যেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তার ফলে প্রায় ১৬০ বিলিয়ন ডলারের বাজেট কাট-ছাঁট করা হলেও প্রকৃতপক্ষে ১৩৫ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

 

সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান।

রাকিব

×