ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে মা-ছেলের ৪৫ বছরের লড়াই, মিলেনি ন্যায্য ক্ষতিপূরণ

প্রকাশিত: ০৭:৩১, ২৫ মে ২০২৫; আপডেট: ০৭:৩৪, ২৫ মে ২০২৫

চট্টগ্রাম বন্দরের সাথে মা-ছেলের ৪৫ বছরের লড়াই, মিলেনি ন্যায্য ক্ষতিপূরণ

ছবি:সংগৃহীত

চট্টগ্রাম বন্দর দেশের অর্থনীতির প্রাণকেন্দ্র। টার্মিনাল এলাকাটি ব্যস্ততম, চারপাশ ঘিরে থাকা কন্টেইনার আর নিরবচ্ছিন্ন কর্মচাঞ্চল্যে মুখর। অথচ এই কর্মচাঞ্চল্যের ঠিক নিচেই লুকিয়ে আছে এক পরিবারে দীর্ঘ ৪৫ বছরের কান্না আর ন্যায়বিচারের জন্য অবিরাম লড়াইয়ের গল্প।

 

 

চট্টগ্রামের তক্তারপোল এলাকায় এখন ভাড়া বাসায় বসবাস করছেন মিজানুর রহমান ও তার বৃদ্ধা মা নূরচেহের বেগম। এক সময় তাদের বসতভিটা ছিল সল্টগোলা ক্রসিং মোড় এলাকায়, যেখানে তাদের পৈতৃক সম্পত্তির ওপর নির্মিত হয়েছে বন্দর টার্মিনালের অংশ। মিজানুর রহমানের বাবা আলিমুল্লাহ ছিলেন স্থানীয় বশিরুল্লাহ শাহ মাজার ও মসজিদের পরিচালক।

মিজানুর রহমান জানান, তার বাবার পৈতৃক ভিটেমাটি ১৯৮২ সালে কোনো পূর্ব নোটিশ কিংবা ক্ষতিপূরণ ছাড়াই অধিগ্রহণ করে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। একই বছরের চূড়ান্ত উচ্ছেদ নোটিশের পর মানসিক আঘাতে মৃত্যু হয় তার বাবার।

 

এরপর দীর্ঘদিন ধরে ন্যায্য ক্ষতিপূরণের জন্য চেষ্টা চালিয়েও প্রতিকার পাননি তারা। ১৯৮৯ সালে মিজানুরের মা আদালতের শরণাপন্ন হলে আদালত তাদের পক্ষে রায় দেন। কিন্তু বাস্তবে পুনর্বাসন বা ক্ষতিপূরণ কিছুই বাস্তবায়িত হয়নি।

২০২২ সালের ৩ আগস্ট দুর্নীতি দমন কমিশনের এক শুনানিতে মা ও ছেলে মিজানুর কান্নায় ভেঙে পড়েন, তবুও মেলে না সমাধান।

পরে তারা জানতে পারেন, জেলা প্রশাসনের সহায়তায় জমির ক্ষতিপূরণের টাকা তুলে নিয়েছে অন্য কিছু ব্যক্তি। বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দক্ষিণ হালিশহর মৌজার ৭২.২৫ শতক জমির জন্য ২৭ লাখ ১৭ হাজার টাকা জেলা প্রশাসনকে দেওয়া হয়, যা ১৯৮৩ সালের ১০ সেপ্টেম্বর জমি হস্তান্তরের পর তুলে নেওয়া হয়। অথচ মূল মালিক পরিবার কিছুই পায়নি।

পরবর্তীতে জানা যায়, সুলতান আহমেদের ওয়ারিশ পরিচয়ে আবুল খায়ের ও আবু সয়েদসহ ছয়জন অন্যায়ভাবে সেই টাকা তুলে নিয়েছেন। ১৯৯৪ সালে তাদের বিরুদ্ধে ছয়টি সার্টিফিকেট মামলা করা হলেও সেগুলোর নিষ্পত্তি আজও হয়নি।

 

মিজানুর রহমান বলেন, “আমার বাবার জমির ওপর এখন যে কন্টেইনার বসে আছে, তার সংখ্যা প্রায় ৫ হাজার। একেকটা কন্টেইনার থেকে প্রতি ঘণ্টায় আয় হয় প্রায় আড়াই হাজার টাকা। অথচ এই জমির জন্য আমরা একটি টাকাও পাইনি।”

বর্তমানে এই জমির বাজারমূল্য শত কোটি টাকারও বেশি বলে দাবি করেন তিনি। পরিবারটি এখনো ক্ষতিপূরণের আশায় দিন গুনছে।

 

 

 

সূত্র:https://youtu.be/TW2RA1l8u8k?si=CHiW49okKXM2nZ8z

আঁখি

×