
বিশ্বের অন্যতম সফল বিনিয়োগকারী ও বাণিজ্যিক ব্যক্তিত্ব ওয়ারেন বাফেটের নাম শোনা মাত্রই মাথায় আসে অসাধারণ বুদ্ধিমত্তা, প্রগাঢ় বিশ্লেষণ ক্ষমতা এবং দুরদর্শী বিনিয়োগ নীতি। বাফেটের অসাধারণ সাফল্যের পেছনে রয়েছে একটি খুবই সাধারণ কিন্তু শক্তিশালী অভ্যাস, যা তার জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে-প্রতিদিন নিয়মিত পড়াশোনা।
নিজেই একবার বলেছিলেন, “প্রতিদিন পাঁচশ’ পৃষ্ঠা পড়ুন। জ্ঞান এভাবেই চক্রবৃদ্ধির মতো জমে যায়।” তার মতে, প্রতিদিন কিছুটা সময় পড়াশোনায় ব্যয় করলে তা ধীরে ধীরে জ্ঞান, বিচক্ষণতা এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বাড়িয়ে তোলে।
৮০ শতাংশ সময় কাটে পড়াশোনা ও চিন্তায়
ওয়ারেন বাফেট তার কর্মদিবসের প্রায় ৮০ শতাংশ সময়ই কাটান পড়াশোনা ও গভীর চিন্তাভাবনায়। বিভিন্ন সংবাদপত্র, আর্থিক প্রতিবেদন, বই এবং শিল্প-সম্পর্কিত প্রকাশনা তার প্রতিদিনের পড়ার অংশ। তার অফিস এমন এক লাইব্রেরির মতো, যেখানে বিভিন্ন আর্থিক দলিলপত্রের সঙ্গে সঙ্গে অসংখ্য বই সাজানো থাকে। এভাবে বিভিন্ন বিষয়ের গভীরে প্রবেশ করে তিনি জ্ঞান অর্জন করে থাকেন।
জীবনব্যাপী শেখার প্রবণতা গড়ে তোলা
বাফেটের মতে, নিয়মিত পড়াশোনা কেবল তথ্য আহরণ নয়, বরং একটি জীবনব্যাপী শেখার মানসিকতা গড়ে তোলে। বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি ও বিষয় নিয়ে পড়ার মাধ্যমে একজন ব্যক্তি হতে পারেন আরও জ্ঞাত, পরিপূর্ণ এবং সচেতন। এই প্রশস্ত জ্ঞান জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বুদ্ধিমান সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে।
বিনিয়োগের ‘ওরাকল’ এর পাঠাভ্যাস ও সাফল্যের সম্পর্ক
ওয়ারেন বাফেট, যাকে ‘ওমাহার ওরাকল’ বলা হয়, তার বিনিয়োগ পদ্ধতির অন্যতম শক্তি তার পাঠাভ্যাসে নিহিত। তার নিয়মিত তথ্য সঞ্চয়ের ফলে তিনি বিভিন্ন শিল্প, বৈশ্বিক অর্থনীতি এবং কোম্পানির অবস্থা সম্পর্কে বিস্তৃত ধারণা অর্জন করেন। এটি তাকে সঠিক ও দূরদর্শী বিনিয়োগ সিদ্ধান্ত নিতে সক্ষম করে। তার পড়াশোনার অভ্যাসের কারণে তার আর্থিক বুদ্ধিমত্তা ও বিশ্বদৃষ্টিকোণ বিকশিত হয়েছে এবং তার বিনিয়োগ কৌশল আরও নিখুঁত হয়েছে।
দৈনন্দিন রুটিনে ওয়ারেন বাফেটের পড়ার সময়সূচি
বাফেটের দিন শুরু হয় নানা গুরুত্বপূর্ণ সংবাদপত্র পড়ার মাধ্যমে, যার মধ্যে রয়েছে ‘দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল’, ‘ফাইনান্সিয়াল টাইমস’ এবং ‘দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস’। এসব মাধ্যমে তিনি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ঘটনা ও শিল্প খাতে নতুন পরিবর্তনগুলো সম্পর্কে সজাগ থাকেন। তার পড়াশোনা কেবল খাবারের টেবিলেই সীমাবদ্ধ নয়, কর্মক্ষেত্রে তার অধিকাংশ সময়ই বিভিন্ন আর্থিক প্রতিবেদন, বিশ্লেষণী নোট এবং বিভিন্ন বই পড়ে কাটে।
বাফেটের এই অভ্যাস তাকে সাধারণ তথ্যগ্রাহকের থেকে একজন সুদূরদর্শী বিনিয়োগকারী ও মেধাবী বাণিজ্যিক ব্যক্তিত্বে পরিণত করেছে। তার এই পাঠাভ্যাস যে শুধু বিনিয়োগ নয়, জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে উন্নতির পথ তৈরি করে, তা অস্পষ্ট নয়।
আপনারও জীবনে আনতে পারেন এই অভ্যাস
যারা বাফেটের মতো সফল হতে চান, তাদের জন্য এক্ষুণি শুরু করুন নিয়মিত পড়াশোনা। দিন শেষে অল্প সময় হলেও বই, নিবন্ধ কিংবা প্রতিবেদন পড়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটি হবে আত্মউন্নয়নের একটি শক্তিশালী হাতিয়ার, যা আপনাকে জীবনে ও কর্মক্ষেত্রে নতুন উচ্চতায় পৌঁছে দেবে।
বাফেটের সাফল্যের এই গল্প থেকে প্রেরণা নিয়ে আপনি নিজেও তৈরি করতে পারেন এক অনন্য আত্মজ্ঞান ও বিচক্ষণতার ভাণ্ডার, যা জীবনের প্রতিটি সিদ্ধান্তকে করবে আরও ফলপ্রসূ ও সমৃদ্ধ।
সূত্র:https://tinyurl.com/ya294y88
আফরোজা