ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

যে কারণে আপনার কোরবানি অর্থহীন হয়ে যাবে!

প্রকাশিত: ১৭:০০, ২৫ মে ২০২৫; আপডেট: ১৭:০১, ২৫ মে ২০২৫

যে কারণে আপনার কোরবানি অর্থহীন হয়ে যাবে!

ছবি: সংগৃহীত।

আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে কোরবানির ইবাদত যথাযথভাবে পালনের বিষয়ে দেশবাসীকে সচেতন থাকার আহ্বান জানিয়েছেন ইসলামি চিন্তাবিদরা। সম্প্রতি একটি ভিডিও বক্তব্যে বিশিষ্ট ইসলামি আলোচক শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, কিছু ভুল কাজের কারণে কোরবানির ইবাদত অর্থহীন হয়ে যেতে পারে এবং সওয়াবের পরিবর্তে গুনাহ হওয়ার আশঙ্কাও থাকে।

শায়খ আহমাদুল্লাহ তাঁর আলোচনায় কোরবানি সংক্রান্ত পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরেন, যেগুলো এড়িয়ে না চললে ইবাদত অগ্রহণযোগ্য হতে পারে।

১. লৌকিকতা ও লোক দেখানো নিয়ত:
তিনি বলেন, কোরবানি শুধুমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে হওয়া উচিত। সামাজিক মর্যাদা রক্ষা, আত্মীয়দের সামনে মুখ রক্ষার মানসিকতা বা মান-সম্মান প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে কোরবানি করলে সেখানে এখলাস বা নিয়তের বিশুদ্ধতা নষ্ট হয়ে যায়। এমন কোরবানি আল্লাহর কাছে কবুল হওয়ার সম্ভাবনা কম।

২. হারাম উপার্জনের অর্থে কোরবানি:
শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, যারা অবৈধ বা হারাম পথে উপার্জিত অর্থ দিয়ে কোরবানি দেন, তাদের কোরবানি কবুল হওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ। তিনি বলেন, “অনেকেই রাজনৈতিক প্রচারণা বা ধন-সম্পদের প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে অতি দামী পশু কোরবানি করে থাকেন, অথচ তাদের জীবনে ধর্মীয় অনুশীলন নেই। এমন কাজ ইসলামের মূল শিক্ষা থেকে বিচ্যুতি।”

৩. পশুর প্রতি অমানবিকতা:
তিনি আরও বলেন, পশুর সঙ্গে অমানবিক আচরণ করা ইসলামসম্মত নয়। খাবার না দেওয়া, অসুস্থ বা অপরিচ্ছন্ন পরিবেশে বেঁধে রাখা, জবাইয়ের সময় ধারালো ছুরি ব্যবহার না করা বা পশুকে অযথা কষ্ট দেওয়া-এসবই ইসলামের বিধান পরিপন্থী। নবী করিম (সা.)-এর শিক্ষা অনুযায়ী, কোরবানির সময় পশুর প্রতি দয়া প্রদর্শন আবশ্যক।

৪. পরিবেশ দূষণ ও মানুষের কষ্ট:
কোরবানির পর পশুর রক্ত, ময়লা, চামড়া বা অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ যেখানে-সেখানে ফেলে রাখার ফলে পরিবেশ দূষণ ও স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি হয় বলে সতর্ক করেন শায়খ আহমাদুল্লাহ। তিনি বলেন, “রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে যাওয়া, দুর্গন্ধ ছড়ানো কিংবা ডেঙ্গুর মতো রোগ বাড়িয়ে তোলা কোরবানির উদ্দেশ্যের সঙ্গে সাংঘর্ষিক।”

৫. সামাজিক দায়িত্বশীলতা:
তিনি উল্লেখ করেন, কোরবানি কেবল পশু জবাইয়ের নাম নয়, বরং সমাজের প্রতি দায়বদ্ধতার পরিচয়। রাসূল (সা.) বলেছেন, “আল্লাহ প্রত্যেকটি জিনিসে ইহসান বা অনুগ্রহ করতে বলেছেন।” সুতরাং পশু কেনা থেকে শুরু করে জবাই এবং ময়লা ব্যবস্থাপনা পর্যন্ত প্রতিটি ধাপে শুদ্ধ নিয়ত ও মানবিকতা বজায় রাখা জরুরি।

পরিশেষে তিনি কোরবানির মূল শিক্ষা-ত্যাগ, একাগ্রতা, এখলাস এবং মানবিকতা-মেনে চলার আহ্বান জানিয়েছেন। যাতে করে কোরবানির ইবাদত শুধু ধর্মীয় দায়িত্বপালনেই সীমাবদ্ধ না থেকে সমাজ, পরিবেশ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য একটি পবিত্র অবদান হয়ে উঠতে পারে।

 

সূত্র: https://rb.gy/0tt8s6

মিরাজ খান

×