ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৬ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কম্বাইন্ড হারভেস্টার দূর করছে কৃষকদের কপালের ভাঁজ

ধানকাটা মাড়াইয়ে বাড়ছে কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার

স্টাফ রিপোর্টার, বগুড়া অফিস

প্রকাশিত: ২২:০৬, ২৫ মে ২০২৫; আপডেট: ২২:১০, ২৫ মে ২০২৫

ধানকাটা মাড়াইয়ে বাড়ছে কৃষিযন্ত্রের ব্যবহার

কম্বাইন্ড হারভেস্টার ব্যবহার করে কৃষকরা মাঠ থেকে ধান সংগ্রহ করছে

বগুড়া শহরের কোলাহলের বাইরে গ্রামীণ সড়কে প্রবেশ করলেই এখন চোখ জুড়ানো ধানকাটা মাড়াইয়ের দৃশ্য। রাস্তার দু’পাশের্^র খেতজুড়ে এবং গ্রামের প্রতিটি বাড়িতেই এখন কৃষক পরিবারে ব্যস্ততার এই অতি পরিচিত ক্যানভাস, যা গ্রামীণ বাংলার এক চিরন্তন প্রতিচ্ছবি। তবে মাঝে মাঝেই মেঘ-বৃষ্টি কৃষকদের দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দিচ্ছে এখন। সদ্য কাটা ধান ও ধানের স্তূপ থেকে বের হওয়া এক আবেশীয়  মিষ্টি গন্ধ চারদিক ছড়ানো। বেশির ভাগ এলাকাতে বোরো ধান কাটা মাড়াই মৌসুম এখন শেষ পর্যায়ের দিকে। তবে কিছু এলাকায় আবার কাটা মাড়াই মাঝপথে। বোরো মৌসুমে শেষ প্রান্তে এসেও মাঠের ধান নিয়ে কৃষকদের দুশ্চিন্তা কমছে না। কারণ ঝড়বৃষ্টি কখন মাঠের পাকা ধানের সর্বনাশ ডেকে আনে সে চিন্তা কাটছে না কৃষকদের।
কাহালুর পাইকর ইউনিয়নের পাঞ্জাপাড়া এলাকার কৃষক গাজিউল জানান, তার ৯ বিঘা জমির ধান রয়েছে। ঝড় বৃষ্টির সময় ধান কাটা নিয়ে চিন্তায় ছিলেন। বৃষ্টিতে কিছু ধান এমনিতেই হেলে গেছে। দিন মজুররা বেশি দূরত্বের জমির ধান কাটাই-মাড়াই করতে বিঘা প্রতি ৫ হাজার টাকা নেন। ৩ দিন ধরে তাদের এলাকায় মেশিন এসেছে। তাই দুই বিঘা জমির ধান বিঘা প্রতি ২২শ’ টাকায় কাটাই মাড়াই করছেন। দ্রুত ধান কাটা শেষ করায় চিন্তা কিছুটা কেটেছে। এর মধ্যেই তিনি দিনমজুর দিয়ে আরও কিছু জমির ধান কাটা মাড়াই করেছেন। তবে মেশিন দিয়ে ধান কাটা মাড়াইয়ে কিছু ক্ষতির কথাও জানান আরেক কৃষক ইরফান। তিনি তাদের এলাকায় মেশিন আসার আগে নিজের ৪৮ শতক জমির ধান দিনমজুর দিয়ে কাটা-মাড়াই করেছেন ৭ হাজার টাকায়। জানালেন দ্রুত ও কম খরচে ধান কাটা-মাড়াই হলেও বাড়ির গরুর জন্য খর পাওয়া যায় না। খর গুঁড়া হয়ে মেশিন থেকে জমিতে চলে যায়। গরুর জন্য পরে খর পৃথকভাবে অন্য জমি থেকে কিনতে হয়। তবে এর পরেও খরচ এবং সময় কম লাগে। উপজেলার এরুলিয়া এলাকার লাল মিয়া জানালেন, এর আগেও তাদের এলাকায় মেশিন দিয়ে ধান কাটার জন্য আনা হয়েছিল। তবে ধান নষ্ট হওয়ার ভয়ে তিনি জমির ধান দিনমজুর দিয়েও কাটা-মাড়াই করেছেন।

হারভেস্টার মেশিনের চালক জুয়েল জানান তারা বগুড়ায় ভাড়ায় ধান কাটার জন্য হাওর এলাকা থেকে এসেছেন। তাদের এলাকায় ধান কাটা শেষ বলে বগুড়ায় এসেছেন। কাহালুর পাশেই এরুলিয়া এলাকার কৃষক রবিউল জানান আকাশের যে অবস্থা তাতে দ্রুত ধান কাটতে হবে কিন্তু তিনি মেশিনের সিরিয়াল পাচ্ছেন না। মুরইল এলাকার রুপম জানান, তাদের ৯ বিঘা জমির ২ বিঘা দিনমজুর দিয়ে কাটাচ্ছেন। অন্য জমি মেশিন (কম্বাইন হারভেস্টার) দিয়ে কাটা মাড়াই করাবেন। বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর অফিস জানিয়েছে, সমন্বিত ব্যবস্থাপনায় কৃষি যান্ত্রীকরণ প্রকল্পের আওতায় জেলায় ৮ ধরনের কৃষি যন্ত্রপাতি ব্যবহার হচ্ছে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে কম্বাইন হারভেস্টার, থ্রেসার মেশিন, রাইস ট্রান্সপ্লান্টার, সিডার, ব্রেড প্লান্টার, মেইজ শেলার ও পটেটো ডিগার। এর মধ্যে ভর্তুকির আওতায় জেলায় ১৭৭টি কাম্বাইল হারভেস্টার থাকলেও জেলায় ২২৭টির মতো হারভেস্টার রয়েছে। কৃষি অফিস জানায়, ২০২১ সালে এর সংখ্যা ছিল ৬৪টি। আর ভর্তুকিসহ কৃষকরা নিজেরা কিনে ব্যবহার করছেন ধান মাড়াইয়ের ৫ হাজার পাওয়ার থ্রেসার মেশিন। তারা আরও জানান, ২০২১ সালে জেলায় কম্বাইন হারভেস্টার মেশিন দিয়ে ধান কাটা মাড়াই ছিল শতকরা ৯ ভাগ, ২০২২ সালে সাড়ে ১৩ ভাগ এবং ২০২৪-২০২৫ সালে কম্বাইন হারভেরস্টার দিয়ে কর্তন মাড়াইয়ের পরিমাণ পৌঁছে শতকরা ২০ ভাগে। জেলার বাইরে থেকে বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চল থেকে ভাড়ায় আসা কম্বাইন হারভেস্টার রয়েছে অনেক। কৃষকরা অনেকে নিজেরাই কৃষি বিভাগের সাহায্য ছাড়াই মেশিন কিনছেন। কৃষি সম্প্রসরাণ অধিদপ্তর অতিরিক্ত পরিচালকের কার্যালয় সুত্র জানায়, বগুড়া জয়পুরহাট, পাবনা ও সিরাজগঞ্জে কম্বাইন হারভেস্টারসহ অন্যান্য কৃষি যন্ত্রের সংখ্যা বেড়েছে।
বগুড়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক সোহেল শামসুদ্দীন ফিরোজ বলেন, আগামীর কৃষিতে যাত্রীকরণের বিকল্প নেই। এছাড়া বৈরী আবহাওয়াসহ কৃষকরা যেন শ্রমিকের অভাবে ক্ষতির মুখে না পড়ে সময়মতো ধান কাটতে পারেন। এজন্য কম্বাইন হারভেস্টারের উপযোগিতা বাড়ছে। অপর দিকে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বগুড়া অঞ্চলের অতিরিক্ত পরিচালক আব্দুল ওয়াদুদ জানান, এক সময়ের খোরপোষ কৃষি এখন বাণিজ্যিক কৃষিতে রূপায়ণ হয়েছে। কম খরচ ও উৎপাদন বাড়াতে কৃষিতে যন্ত্রের ব্যবহার বাড়ছে। এরই ধারাবাহিকতায় বগুড়া জয়পুরহাট পাবনা ও সিরাজগঞ্জসহ অন্য জেলাগুলেতে কম্বাইন হারবেভস্টারের সংখ্যা ও ব্যবহার বাড়ছে। বৈরী আবহাওয়া হলেও কৃষকরা কম খরচে দ্রুত ফসল ঘরে তুলতে পারছে।

প্যানেল

×