ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কোরবানির সময় কী কী ভুল হতে পারে? ভুল থেকে বিরত থাকতে করণীয়

প্রকাশিত: ১৪:২৭, ২৫ মে ২০২৫

কোরবানির সময় কী কী ভুল হতে পারে? ভুল থেকে বিরত থাকতে করণীয়

ছবিঃ সংগৃহীত

ইসলামিক স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ এক টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে কোরবানির গুরুত্ব এবং এর সঠিক নিয়ম-কানুন নিয়ে কথা বলেন। সাক্ষাৎকারে তাকে প্রশ্ন করা হয়, “অনেক সময় দেখা যায়, কোরবানির সময় অনেকেই ভুল করেন, যেমন জবাই করার সাথে সাথেই পশুর চামড়া ছাড়ানো বা স্পাইনাল কর্ডে আঘাত করা। এই ধরনের ভুলে কি কোরবানি বাতিল হয়ে যেতে পারে?” — এমন প্রশ্নের উত্তরে শায়খ আহমাদুল্লাহ বিস্তারিতভাবে কয়েকটি গুরুতর ভুলের দিক তুলে ধরেন, যেগুলোর কারণে কোরবানি অগ্রহণযোগ্য হতে পারে।

১. নিয়তের অশুদ্ধতা
শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, কোরবানি মূলত আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, কিন্তু বর্তমানে অনেকেই কোরবানিকে সামাজিক মর্যাদার প্রতিযোগিতায় পরিণত করেছেন। অনেকে নামাজ-রোজা না করলেও বড় গরু কোরবানি করে সমাজে নিজেদের অবস্থান জানান দিতে চান। নির্বাচনের সময় অনেক প্রার্থী প্রচারণার অংশ হিসেবে গবাদি পশু কোরবানি করেন। কেউ কেউ আত্মীয়দের কাছে সামাজিক মর্যাদা বজায় রাখতে বড় পশু কোরবানি দেন। এইসব উদ্দেশ্য কোরবানিকে নিছক প্রদর্শন এবং আত্মপ্রচারণার মাধ্যমে অর্থহীন করে তোলে। আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, “তোমাদের কোরবানির পশুর গোশত ও রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছে না, পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।” (সূরা হজ, ২২:৩৭) তাই নিয়ত বিশুদ্ধ না হলে কোরবানি কবুল হবে না।

২. অমানবিক আচরণ ও কষ্ট দেওয়া
তিনি বলেন, পশুকে জবাইয়ের আগে বা পরিবহনকালে যদি অমানবিক আচরণ করা হয়, তবে সেই কোরবানিও আল্লাহর কাছে অগ্রহণযোগ্য হতে পারে। যেমন অতিরিক্ত পানি খাইয়ে পশুকে মোটা দেখানোর চেষ্টা, টাইট পরিবহনে ঠাসাঠাসি করে গরু তোলা, কোরবানির আগে দু’চার দিন বেঁধে রেখে অযত্নে রাখা, এসব অনুচিত। এমনকি জবাই করার পর পশুর প্রাণ পুরোপুরি না যাওয়া পর্যন্ত তার শরীরে খোঁচাখুঁচি করা বা চামড়া ছাড়ানোও নিষিদ্ধ।

৩. পরিবেশ দূষণ ও অসচেতনতা
শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, কোরবানির পরে পশুর বর্জ্য যেমন মলমূত্র, রক্ত, নারীগুড়ি রাস্তার ধারে ফেলে রাখা, ড্রেনে ফেলে দেওয়া ইত্যাদি মারাত্মক পরিবেশ দূষণ ঘটায়। এটি শুধু অস্বাস্থ্যকর নয়, বরং এটি ডেঙ্গুর মতো রোগের উৎস হতে পারে এবং সামাজিক অসুবিধার কারণও হয়। এমন দায়িত্বজ্ঞানহীনতা কোরবানির বরকতকে প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে। তাই প্রত্যেক কোরবানি প্রদানকারীর উচিত কোরবানির পূর্ব ও পরবর্তী সময়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করা।

৪. সাতজন অপরিচিত ব্যক্তির একসঙ্গে কোরবানি করা
বর্তমানে অনেক খামারি একটি গরু সাত ভাগে বিক্রি করেন এবং ঈদের দিন সেই গরু নিজেই জবাই করে ভাগ করে দেন। এ বিষয়ে শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, শরীয়ত অনুযায়ী একটি গরুতে সর্বোচ্চ সাতজন শরিক হতে পারেন এবং তাদের পরস্পরকে চেনা জরুরি নয়। যদি তারা কাউকে প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্ব দেন—তিনি সেই পশু জবাই করে গোশত পৌঁছে দেবেন—তাহলে এটি শরীয়তসম্মত। তবে দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিকে অবশ্যই আমানতদার এবং দায়িত্বশীল হতে হবে।

৫. কোরবানিকে যৌতুক বা সামাজিক চাপে পরিণত করা
জামাই বা শ্বশুরবাড়িতে গরুর রান পাঠানো, রান চাওয়া বা এগুলোকে সামাজিকতার অংশ হিসেবে দেখা সম্পূর্ণ অনুচিত এবং কোরবানির উদ্দেশ্যের পরিপন্থী বলে তিনি মন্তব্য করেন। এ ধরনের চর্চা কোরবানিকে যৌতুকের পর্যায়ে নিয়ে যেতে পারে, যা ইসলামে নিষিদ্ধ।


শায়খ আহমাদুল্লাহর মতে, কোরবানিকে অর্থবহ এবং কবুল করতে হলে অবশ্যই নিয়ত বিশুদ্ধ রাখতে হবে, পশুর প্রতি দয়া দেখাতে হবে এবং পরিবেশ ও সমাজের প্রতি দায়িত্বশীল আচরণ করতে হবে। অন্যথায় এই ইবাদত আমাদের জন্য সওয়াবের পরিবর্তে গুনাহের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
 

মারিয়া

×