ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ২৫ মে ২০২৫, ১১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গর্ভকালীন সচেতনতা ও প্রসূতি প্রস্তুতি: সুস্থ মাতৃত্বের চাবিকাঠি

প্রকাশিত: ১৭:০১, ২৫ মে ২০২৫

গর্ভকালীন সচেতনতা ও প্রসূতি প্রস্তুতি: সুস্থ মাতৃত্বের চাবিকাঠি

ছবিঃ সংগৃহীত

মাতৃত্বকে নিরাপদ করতে হলে শুধু একজন নারীর নয়, পুরো পরিবারের ও সমাজের সহযোগিতা জরুরি। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থাগুলোর সক্রিয় অংশগ্রহণে প্রতিটি উপজেলায় মাতৃ ও শিশুকল্যাণ কেন্দ্র (MCWC) আরও সম্প্রসারিত করতে হবে। এতে মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু কমে গর্ভকালীন সময় হবে নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক।

MCWC হলো এমন একটি স্বাস্থ্যসেবা কেন্দ্র যেখানে গর্ভবতী মা ও নবজাতকের জন্য নিরাপদ প্রসব, গর্ভকালীন স্বাস্থ্য পরীক্ষা, পুষ্টি পরামর্শ, টিকা, পরিবার পরিকল্পনা এবং অন্যান্য সেবা প্রদান করা হয়। গ্রামীণ ও প্রান্তিক এলাকার নারীদের জন্য MCWC নিরাপদ মাতৃত্ব ও শিশু সেবার সহজলভ্য মাধ্যম হিসেবে কাজ করছে।

প্রতিটি উপজেলায় MCWC-এর পরিসর, জনবল ও প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি করলে মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হ্রাস সম্ভব হবে। নিয়মিত প্রসবপূর্ব চেকআপ, সুষম খাদ্যাভ্যাস ও মানসিক সহায়তার মাধ্যমে মা ও শিশুর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করা যায়।

গর্ভকালীন সময়ে শারীরিক ও মানসিক প্রস্তুতি অত্যন্ত জরুরি। নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ফলিক অ্যাসিড, আয়রন ও ক্যালসিয়াম জাতীয় সাপ্লিমেন্ট গ্রহণ, ধূমপান ও মাদক পরিহার, এবং হালকা ব্যায়াম গর্ভাবস্থাকে সুস্থ রাখে। পাশাপাশি পরিবার ও জীবনসঙ্গীর সঙ্গে আলোচনা এবং আর্থিক প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন।

ডেলিভারির আগে নিয়মিত প্রসবপূর্ব চেকআপ করানো আবশ্যক। এতে রক্তচাপ, রক্ত ও ইউরিন পরীক্ষা ছাড়াও গর্ভজাত শিশুর অবস্থান ও হৃৎস্পন্দন পরীক্ষা করা হয়। গর্ভাবস্থায় যেকোনো অনিয়মিত রক্তপাত, ব্যথা বা সমস্যা হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। প্রসব একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হলেও সচেতনতা ও প্রস্তুতির অভাবে জটিলতা হতে পারে। তাই শেষ মাসগুলোতে মা ও পরিবারের সদস্যদের দায়িত্বশীল হতে হবে। 

গর্ভকালীন প্রস্তুতির জন্য শারীরিক, মানসিক, পরিবারিক ও আর্থিক দিকগুলোতে সচেতন থাকা জরুরি। প্রি-কনসেপশন চেকআপ, দীর্ঘমেয়াদি রোগ নিয়ন্ত্রণ, নিয়মিত প্রসবপূর্ব পরীক্ষা, সুষম খাদ্য, মানসিক প্রস্তুতি এবং জরুরি পরিস্থিতিতে দ্রুত হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ অপরিহার্য।

প্রসবের সময় সিজার নাকি নরমাল ডেলিভারি হবে তা মা ও শিশুর অবস্থা অনুযায়ী পরিকল্পনা করা উচিত। হাসপাতালে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, জরুরি ফোন নম্বর ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র আগে থেকেই প্রস্তুত রাখা জরুরি। ডেলিভারির পূর্বে গুরুত্বপূর্ণ সতর্কতা:

  • ১. নিয়মিত প্রসবপূর্ব (Antenatal) চেকআপ করানো
  • ২. রক্তচাপ, রক্ত ও ইউরিন পরীক্ষা করানো
  • ৩. গর্ভজাত শিশুর রক্তচাপ ও হৃৎস্পন্দন পরীক্ষা করানো
  • ৪. সুষম ও পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ ও পর্যাপ্ত পানি পান করা
  • ৫. অনিয়মিত রক্তপাত বা তলপেটে ব্যথা হলে দ্রুত চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করা
  • ৬. সময়ের আগেই পানি ভেঙে গেলে অবিলম্বে হাসপাতালে যাওয়া
  • ৭. ডেলিভারির সম্ভাব্য তারিখ ও লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকা
  • ৮. হাসপাতালে ভর্তি ও জরুরি যোগাযোগ নম্বর প্রস্তুত রাখা

এই সতর্কতাগুলো মেনে চললে মা ও শিশুর নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। প্রসবের সম্ভাব্য তারিখ ও লক্ষণ সম্পর্কে সচেতন থাকা মা ও পরিবারের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পেটের নিচে চাপ অনুভব, রক্তস্রাব বা ব্যথার ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, মাতৃত্বকে নিরাপদ ও সফল করতে MCWC-এর কার্যক্রম বিস্তার এবং গর্ভকালীন সময়ে সঠিক প্রস্তুতি অত্যাবশ্যক। সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগের সমন্বয়ে এই খাতে উন্নয়ন হলে মাতৃ ও শিশুমৃত্যু হ্রাসে দৃশ্যমান ফল পাওয়া সম্ভব হবে।
 

হ্যাপী

×