
ছবিঃ সংগৃহীত
মানিকগঞ্জের সাটুরিয়া উপজেলার বরাইদ ইউনিয়নের বরাইদ এলাকায় ভূমি ও গৃহহীনদের জন্য নির্মাণ করা মুন্নু আবাসন প্রকল্পের ঘর গত ২৩ বছরের বেশী সময় পার হলেও মেরামত করা হয়নি।
ঘরগুলো বসবাসের অনুপযোগী হওয়ায় ইতিমধ্যে অর্ধশতাধিক পরিবার ঘর ফেলে চলে গেছে। বাকি পরিবারগুলো অন্যত্র যাওয়ার কোন জায়গা না থাকায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে স্ত্রী- সন্তান নিয়ে বসবাস করছেন। বিএনপির নেতাদের অভিযোগ এ আবাসন প্রকল্পটি তৎকালিন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনার রশিদ খান মুন্নুর নাম থাকায় বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলে এক টাকাও বরাদ্দ দেওয়া হয়নি।
উপজেলায় ২০০২ সালে বরাইদ ইউনিয়নের বরাইদ গ্রামে ১.৬৫ একর জমির ওপর সরকারি অর্থায়নে আশ্রয়ন প্রকল্পটি চালু করা হয়। সে সময় বিএনপির স্থানীয় সাংসদ হারুনার-অর-রশিদ খান মুন্নু ওই আশ্রয়ন প্রকল্পটি নিজ নামে নির্মাণ করেন। প্রকল্পে প্রতি সাড়িতে টিনের তৈরি ১০টি করে ছোট কক্ষের সাতটি দৃষ্টিনন্দিত সাড়ি রয়েছে। একেকটি ভূমিহীন পরিবারকে একেকটি কক্ষ বরাদ্দ দেওয়া হয়। বিশুদ্ধ পানির জন্য প্রতিটি সাড়ির বাসিন্দাদের একটি করে টিউবওয়েল এবং প্রতি পাঁচটি পরিবারের জন্য দুটি শৌচাগার ও একটি গোসলখানা নির্মাণ করে দেওয়া হয়। এছাড়াও রয়েছে আবাসনের বাসিন্দাদের ছেলে-মেয়ের সুন্দর ভাবে বিয়ে বা যে কোন অনুষ্ঠানের জন্য কমিউনিটি সেন্টার। আর ওই আবাসনের নাম দেওয়া হয় “মুন্নু আবাসন”।
মুন্নু আবাসনের বাসিন্দারা বলছেন, বেশির ভাগ ঘরের চালা ভেঙে গেছে। সামান্য বৃষ্টি হলেই ঘরগুলোতে পানি ঢোকে, বিছানা ভিজে যায়। বিছানায় শুয়েই উপর দিকে তাকিয়ে রাতের আকাশ ও তারা দেখা যায়। টিউবওয়েল নষ্ট হয়ে গেছে, শৌচাগার ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। তার পরেও বাধ্য হয়ে আবাসনে বসবাস করছেন তারা।
নির্মাণের প্রায় দুই যুগ পেরিয়ে গেলেও আবাসনের ঘরগুলো সংস্কারের কোনো উদ্যোগ নেয়নি স্থানীয় প্রশাসন। এতে বেশির ভাগ ঘর বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। মরিচা ধরে চালা ভেঙে পড়ে গেছে। ঘর ব্যবহার না হওয়ায় আগাছায় ভরে গেছে চারপাশ।
দুর্গন্ধময় ও অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ তবুও নেই পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। বর্তমানে আবাসনের ১৮টি পরিবারের পানির অবলম্বন ৩টি টিউবওয়েল। মাঝে মাঝে সেগুলিও নষ্ট হলে নিজেদের উদ্যোগেই মেরামত করতে হয়। এমনিতেই তারা ভূমিহীন। কোন রকম রুটি রুজির যোগার করে চলে তাদের সংসার। তার ওপর আবার আবাসন মেরামত করে টিকে থাকা। এ যেন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা। তাদের কষ্ট দেখার কেউ নেই।
মুন্নু আবাসনের বাসিন্দা রুবি আক্তার বলেন, ঘর দোয়ার ভাঙগা চুইরা গেছে। পোলাপান (সন্তান) নিয়া থাকা পারিনা। কাগজ (পলিথিন) টাঙিনে থাকি। বৃষ্টি হলেই পানি পড়ে। আমরা বাইচা আছি নাকি মইরা গেছি উপজেলা থেকে কেউ আমাগো খোঁজ নেয় না।” বলেও আক্ষেপ করে বলেন ওই বাসিন্দা।
মুন্নু আবাসনের বসিন্দা লতিফা আক্তার বলেন, প্রায় ১৫ বছর ধরে বসবাস করছি এই আবাসনে। শুধু বৃষ্টিই না শীতের দিনে কুয়াশাও পড়ে। আস্ত পলিথিন টিনের চালার নিচে দিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে খুব কষ্ট করে বসবাস করছি।
মুন্নু আবাসনের বাসিন্দা ও সভাপতি মোঃ বোরহান উদ্দিন বলেন, ‘শুরুতে আবাসনে ৭০টি পরিবার বসবাস করত। কিন্তু ঘরগুলো ভেঙে যাওয়ায় এখন ১৮টি পরিবার রয়েছে। বৃষ্টি হলেই ঘরের চালা চুইয়ে পানি পড়ে। রাতে দেখা যায় আকাশের তারা। তাই যারা বসবাস করছি বেশির ভাগ ঘরেই চালার নিচে পলিথিন টাঙিয়ে রয়েছি।
তিনি আরও বলেন, বিভিন্ন সময়ে উপজেলা প্রশাসনকে সমস্যার কথা জানানো হয়েছে। তাঁরা আসেন, দেখেন আশ^াস দিয়ে চলে যান। কিন্তু মেরামত আর হয়নি। ১৮টি পরিবারে শতাধিক মানুষ আছেন। যাদের একমাত্র জীবিকা দিনমজুর। কোন রকম খেয়ে পড়ে দিন কাটে আমাদের।
এ বিষয়ে বরাইদ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গাজী মোহাম্মদ আব্দুল হাই বলেন, ‘মুন্নু আবাসন প্রকল্পের বেশির ভাগ ঘর জরাজীর্ণ অবস্থায় আছে। ওই আবাসনের বাসিন্দাদের জন্য ঘর গুলো মেরামত করা খুবই প্রয়োজন।
সাটুরিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও বরাইদ ইউনিয়নের সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল কুদ্দুছ খান মজলিশ মাখন বলেন, এ আবাসন প্রকল্পটি ২০০২ সালে তৎকালিন বিএনপির সংসদ সদস্য হারুনার রশিদ খান মন্নু নির্মাণ করেন। আর আমি চেয়ারম্যান থাকা কালে এটি তদারকি করি। টিনের ঘর থাকায় ২৩ বছরে নানা স্থাপনা নষ্ট হয়েগেছে। কোথায় ভুতুরে পরিবেশ তৈরি হয়েছে। কিন্তু বিগত আওয়ামী ফ্যাসিবাদী সরকারের ১৭ বছরে কোন বরাদ্ধ দেয় নি শুধুু বিএনপির সাংসদের নাম থাকায়। কতটা বর্বর হলে এ জগন্ন কাজ করতে পারে। এখানে নতুন করে আধুনিক ঘরের নকশা অনুযায়ী বরাদ্ধ দিলেও সুন্দর হবে।
এ বিষয়ে সাটুরিয়া উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা খলিলুর রহমান মোল্লাহ্ বলেন, এ আবাসন প্রকল্পটি অনেক বছর আগে হওয়াতে ঝড়া জীর্ণ হয়ে গেছে। উপজেলা নির্বাহী অফিসার গত ২২ মে ৩ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি করে দিয়েছে সার্বিক প্রতিবেদন দেবার জন্য। আমরা দ্রুত পরিদর্শন করে প্রতিবেদন জমা দিব।
আলীম