
ছবি: সংগৃহীত
অস্থির পরিস্থিতির মধ্যে থাকা মিয়ানমারের বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী রাখাইন রাজ্যের নিয়ন্ত্রণ এখন কার্যত আরাকান আর্মির হাতে। রাজ্যের বিভিন্ন অংশ দখলের পর একের পর এক নতুন নির্দেশনা জারি করছে সশস্ত্র সংগঠনটি। সর্বশেষ নির্দেশে ১৮ থেকে ৪৫ বছর বয়সী পুরুষ এবং ১৮ থেকে ২৫ বছর বয়সী নারীদের জন্য অন্তত দুই বছর সামরিক সেবা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার জারি করা এক নির্দেশে বলা হয়েছে, উল্লেখিত বয়সসীমার নাগরিকদের জন্য রাখাইন রাজ্য ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। চলমান সংঘাতের কারণে ঘোষিত জরুরি অবস্থা শেষ না হওয়া পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা কার্যকর থাকবে।
স্থানীয় এক মানবাধিকারকর্মী, নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, মিয়ানমারের সংবাদমাধ্যম ডেমোক্রেটিক ভয়েস অফ বার্মা’কে জানিয়েছেন, “যারা সামরিক প্রশিক্ষণে অংশ নিতে চান না, তাদের ওপর এই বাধ্যবাধকতা ব্যক্তিগত অধিকার লঙ্ঘনের শামিল।” তার মতে, মানবাধিকার লঙ্ঘন শুধু নির্যাতন বা হত্যার মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়; এই ধরনের জোরপূর্বক নির্দেশনাও মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।
আরাকান আর্মি অবশ্য দাবি করছে, এটি একটি ‘সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা’। জান্তা বাহিনীর হাতে স্থানীয়দের গ্রেপ্তার, চাঁদাবাজি, সহিংসতা এবং জোরপূর্বক নিয়োগ ঠেকাতেই এমন ব্যবস্থা নিতে বাধ্য হয়েছে তারা। একই সঙ্গে রাখাইনের বিভিন্ন স্থানে জান্তা বাহিনীর পুঁতে রাখা ল্যান্ডমাইনের ঝুঁকিও এ নিষেধাজ্ঞার একটি কারণ বলে দাবি তাদের।
গত মার্চে আরাকান আর্মির প্রণীত জাতীয় প্রতিরক্ষা জরুরি বিধানে এই বাধ্যতামূলক নিয়োগের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল। এরপর থেকেই নিয়ন্ত্রিত এলাকাগুলোতে যুবকদের জোরপূর্বক নিয়োগের অভিযোগ উঠতে শুরু করে। এখন সেই যুবকরা যেন পালিয়ে যেতে না পারেন, সেজন্যই রাজ্য ত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে।
তবে শুধুমাত্র জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন এমন ব্যক্তিরাই এই নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবেন—তাও যদি সেই চিকিৎসা আরাকান আর্মি নিয়ন্ত্রিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে না পাওয়া যায়।
মিয়ানমার সংঘাত বিশ্লেষক ডেভিড ম্যাথিসন এ নির্দেশনাকে “একটি ভুল পদ্ধতি” হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, “সেটি যেই গোষ্ঠীই আরোপ করুক না কেন, বাধ্যতামূলক সামরিক সেবা কোনোভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। আরাকান আর্মি সম্ভবত প্রশাসনিক নিয়ন্ত্রণ, নিরাপত্তা এবং ভবিষ্যৎ সংঘাতের জন্য আরও জনবল সংগ্রহের চেষ্টা করছে।”
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই ঘটনাগুলো মিয়ানমারকে আরও দীর্ঘমেয়াদী সহিংসতার পথে ঠেলে দিচ্ছে। এর আগেও দেশটির শাসক জান্তা সরকার ২০২৪ সালের ১০ ফেব্রুয়ারি সামরিক বাধ্যতামূলক আইন কার্যকর করেছিল, যা আন্তর্জাতিক মহলে ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়ে। চলতি বছরের জানুয়ারিতেও তারা কঠোর সামরিক আইন জারি করে এবং সামরিক সেবার উপযোগী নাগরিকদের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=tka1n0Hna5k
মেহেদী