ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৬ মে ২০২৫, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দুই পূর্ব ও দুই পশ্চিম: সূর্যের গতি নিয়ে কোরআনের আয়াত কী বলছে?

প্রকাশিত: ০২:৫৪, ২৬ মে ২০২৫

দুই পূর্ব ও দুই পশ্চিম: সূর্যের গতি নিয়ে কোরআনের আয়াত কী বলছে?

ছবি: সংগৃহীত

সূর্য প্রতিদিন পূর্ব দিকে উদিত হয় এবং পশ্চিমে অস্ত যায়—এ যেন আমাদের চেনা ও অভ্যস্ত একটি দৃশ্য। কিন্তু কখনো কি খেয়াল করেছেন, সূর্য বছরের প্রতিটি দিন ঠিক একই জায়গা থেকে ওঠে না, আবার একই জায়গায় অস্তও যায় না? বিজ্ঞান বলছে, এর পেছনে রয়েছে জ্যোতির্বৈজ্ঞানিক কারণ। আর এই বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যার সঙ্গে হুবহু মিলে গেছে একটি কোরআনিক আয়াত, যা নাজিল হয়েছিল প্রায় ১৪০০ বছর আগে।

সূরা আর-রাহমানের ১৭ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:
"رَبُّ الْمَشْرِقَيْنِ وَرَبُّ الْمَغْرِبَيْنِ"
অর্থাৎ, তিনি দুই উদয়াচলের প্রভু এবং দুই অস্তাচলেরও প্রভু।

প্রশ্ন উঠতে পারে—দুইটি পূর্ব আর দুইটি পশ্চিম বলতে কী বোঝানো হয়েছে? আমরা তো জানি, পৃথিবীতে একটি মাত্র পূর্ব দিক ও একটি মাত্র পশ্চিম দিক রয়েছে। তাহলে এই আয়াতের তাৎপর্য কী?

আরবি ভাষা ও শব্দমূল বিশ্লেষণ:
‘মাশরিক’ শব্দটি এসেছে সারাকা ধাতু থেকে, যার অর্থ ‘আলোকজ্জ্বল হওয়া’। ‘মাগরিব’ এসেছে গারাবা থেকে, যার অর্থ ‘ডুবে যাওয়া’। ঠিক যেমন ‘সাজাদা’ মানে সেজদা করা আর ‘মাসজিদ’ মানে সেজদার স্থান, তেমনি ‘মাশরিক’ মানে আলো উদিত হবার স্থান, আর ‘মাগরিব’ মানে সূর্য ডোবার স্থান।

তাই এখানে 'দুই মাশরিক' এবং 'দুই মাগরিব' বলতে বোঝানো হয়েছে সূর্যের দুই ভিন্ন উদয় ও অস্তের বিন্দু—যা পরিবর্তিত হয় ঋতুভেদে। কোরআনের মুফাসসিরগণও এই আয়াতের এমনই ব্যাখ্যা করেছেন:

  •  একটি হলো গ্রীষ্মকালীন সূর্যোদয়ের দিক
  •  অন্যটি হলো শীতকালীন সূর্যোদয়ের দিক

একইভাবে দুটি সূর্যাস্তের দিকও গ্রীষ্ম ও শীত অনুযায়ী পৃথক।

বিজ্ঞান কী বলছে?
আধুনিক জ্যোতির্বিদ্যা বলছে, পৃথিবীর কক্ষপথ ও ঘূর্ণনের কারণে সূর্য প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন কোণে উদিত ও অস্তমিত হয়। যেমন:

  • ২১ জুন, বছরের দীর্ঘতম দিনে, সূর্য উত্তর-পূর্ব দিকে ওঠে।
  • ২১ ডিসেম্বর, বছরের সংক্ষিপ্ততম দিনে, সূর্য দক্ষিণ-পূর্ব দিকে ওঠে।

ওরেগন স্টেট বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণায় দেখা যায়, রটারডাম শহর থেকে সূর্যপথের এক চিত্র বিশ্লেষণে দেখা গেছে:

  • জুনে সূর্য ওঠে পূর্ব থেকে প্রায় ৫০ ডিগ্রি উত্তর দিকে,
  • ডিসেম্বরে সূর্য ওঠে পূর্ব থেকে প্রায় ৪০ ডিগ্রি দক্ষিণ দিকে।

এই দুটি কোণের মধ্যে রয়েছে প্রায় ৯০ ডিগ্রির পার্থক্য, যা বোঝায় দুই পৃথক পূর্বদিক। একই রকম দুটি পৃথক পশ্চিমদিকও রয়েছে সূর্যাস্তের জন্য।

অর্থাৎ, কোরআনের আয়াতে বলা দুই পূর্ব ও দুই পশ্চিম আসলে সূর্যের এই ঋতুভিত্তিক অবস্থান পরিবর্তনেরই ইঙ্গিত বহন করে। এটি শুধুই ভাষাগত কাব্য নয়, বরং একটি বিজ্ঞানসম্মত বাস্তবতা।


আধুনিক বিজ্ঞান এই সূর্যচক্রের জটিলতা বুঝতে সক্ষম হয়েছে সাম্প্রতিক শতাব্দীতে। অথচ পবিত্র কোরআনে এই সূক্ষ্ম বৈজ্ঞানিক সত্যটি ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে বহু আগেই, মাত্র একটি আয়াতের মাধ্যমে। এটাই কোরআনের ভাষার গভীরতা এবং এর অন্তর্নিহিত জ্ঞানের এক অনন্য উদাহরণ। এটি আবারও প্রমাণ করে, কোরআন কেবল একটি ধর্মগ্রন্থ নয়—এটি একটি জ্ঞানভাণ্ডার, যেখানে রয়েছে সময়, স্থান, প্রকৃতি ও মহাবিশ্ব সম্পর্কে অমূল্য তথ্য।

এসএফ

×