
ছবিঃ সংগৃহীত
ধরুন, আপনি আপনার মালিকানাধীন ও দখলীয় জমি থেকে কেউ জোরপূর্বক উচ্ছেদ করে দিয়েছেন। এই অবস্থায় জমির দখল পুনরুদ্ধারের জন্য আপনাকে আগে যেতে হতো দেওয়ানী আদালতে, যেখানে বিচারপ্রক্রিয়া শেষ হতে লেগে যেতো বছরের পর বছর। তবে এখন সেই পুরনো নিয়মে বদল এসেছে। ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩ এবং তার অধীন প্রণীত বিধিমালা, ২০২৪ অনুযায়ী, মাত্র তিন মাসের মধ্যেই আপনি আপনার জমির দখল ফেরত পেতে পারেন।
কোন পরিস্থিতিতে এবং কোথায় করবেন আবেদন?
২০২৩ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর গেজেট আকারে প্রণীত ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩-এর আওতায় এবং ২০২৪ সালের ২৪ অক্টোবর প্রণীত বিধিমালা অনুসারে, যদি কাউকে আদালতের আদেশ ব্যতীত বেআইনিভাবে তার দখলীয় ভূমি থেকে উচ্ছেদ বা বেদখল করা হয়, তাহলে তিনি দায়িত্বপ্রাপ্ত এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর আবেদন করতে পারবেন।
বিধিমালার ৬ নম্বর বিধি অনুযায়ী, আবেদনটি করতে হবে পরিশিষ্ট-৫ অনুসারে নির্ধারিত ফরমে। এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট এখানে হলেন, জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত কোনো নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট।
আবেদনের কাঠামো ও প্রয়োজনীয় তথ্যাদি
পরিশিষ্ট-৫ এ নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে, যেখানে নিচের তথ্যগুলো সংযোজন করা বাধ্যতামূলক:
১. জমির তফসিল (জেলা, থানা, মৌজা, খতিয়ান নম্বর, দাগ নম্বর ইত্যাদি)
২. সর্বশেষ জরিপে প্রকাশিত খতিয়ান নম্বর
৩. নামজারী সংক্রান্ত তথ্য
৪. জমির মালিকানা ও হস্তান্তর সংক্রান্ত দলিল
৫. আবেদনকারীর দখলের সময়কাল ও পদ্ধতি
৬. দখলচ্যুতির তারিখ ও কিভাবে তা হয়েছে
৭. কোনো চলমান দেওয়ানী মামলা রয়েছে কি না, তার বিবরণ
৮. প্রমাণস্বরূপ দলিল, ছবি, ভিডিও ইত্যাদি
আবেদনের সাথে সংযুক্ত করতে হবে যেসব দলিল
-
খতিয়ান, নামজারী দলিল, ডিসিআর, দাখিলা
-
জমি হস্তান্তরের দলিল বা উত্তরাধিকার সূত্রে মালিকানা প্রমাণ
-
প্রতিপক্ষের নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নম্বরসহ নোটিশ জারি ফর্ম
-
প্রমাণস্বরূপ ছবি, ভিডিও (যদি থাকে)
-
ফটোকপি ও প্রযোজ্য ফি
এরপর এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট যা করবেন
বিধিমালার ৬(২) থেকে ৬(১৪) এবং ৭(১) থেকে ৭(৬) পর্যন্ত ধাপে ধাপে বলা হয়েছে, আবেদন গ্রহণের পর ম্যাজিস্ট্রেট প্রতিপক্ষকে ১৫ কার্যদিবসের মধ্যে কারণ দর্শাতে নোটিশ দেবেন এবং একজন তদন্তকারী কর্মকর্তাকে মাঠ পর্যায়ে তদন্তের নির্দেশ দেবেন। তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তির পর ম্যাজিস্ট্রেট শুনানি গ্রহণ করে প্রয়োজনীয় সাক্ষ্য-প্রমাণ পর্যালোচনা করে সিদ্ধান্ত নেবেন।
যদি প্রমাণিত হয় যে আবেদনকারী আইনসম্মতভাবে জমি দখলে ছিলেন এবং বেআইনিভাবে উচ্ছেদ হয়েছেন, তাহলে ম্যাজিস্ট্রেট দখল পুনর্বহালের আদেশ দেবেন।
প্রতিপক্ষ দখল হস্তান্তর না করলে কী হবে?
আদেশপ্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিপক্ষকে জমির দখল হস্তান্তর করতে হবে। ব্যর্থ হলে, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সহায়তায় জমি পুনরুদ্ধার করে আবেদনকারীকে বুঝিয়ে দেওয়া হবে। এ সময় প্রয়োজনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনারও বিধান রাখা হয়েছে।
তিন মাসেই নিষ্পত্তির বাধ্যবাধকতা
ভূমি অপরাধ প্রতিরোধ ও প্রতিকার আইন, ২০২৩-এর ধারা ৮ অনুসারে, আবেদন গ্রহণের তিন মাসের মধ্যেই নিষ্পত্তি করতে হবে। কোনো কর্মকর্তা এই প্রক্রিয়ায় গাফিলতি করলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
দেওয়ানী মামলা থাকলে কি আবেদন করা যাবে?
যদি আগে থেকেই জমির দখল সংক্রান্ত দেওয়ানী মামলা বিচারাধীন থাকে, তাহলে এই আইনে আবেদন করা যাবে না। তবে, দেওয়ানী আদালত চাইলে সেই মামলা এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেটের নিকট প্রেরণ করতে পারে—আবেদনকারীর অনুরোধে বা আদালতের বিবেচনায়।
শেষ কথা
নতুন এই ধারাটি জমি থেকে অবৈধভাবে উচ্ছেদ হওয়া ব্যক্তি বা পরিবারগুলোর জন্য একটি বড় আশার আলো। আর এতে আইনি সহায়তা নিতে আইনজীবী নিয়োগ আবশ্যক না হলেও, অভিজ্ঞ কোনো অ্যাডভোকেটের সহায়তা নিলে আবেদনটি হবে আরও সুনিপুণ ও সফল।
বিস্তারিত জানতে আরও দেখুনঃ https://youtu.be/hUyZJ_JCyeU?si=qEDkDrn_y7zaK7NF
ইমরান