ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৬ মে ২০২৫, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

গর্ভাবস্থায় আম খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও সতর্কতা

প্রকাশিত: ০৪:৫৬, ২৬ মে ২০২৫

গর্ভাবস্থায় আম খাওয়ার সঠিক নিয়ম ও সতর্কতা

ছবি: সংগৃহীত

গর্ভাবস্থায় খাদ্যাভ্যাস নিয়ন্ত্রণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আপনি যা খান তার সরাসরি প্রভাব পড়ে আপনার শিশুর স্বাস্থ্যের উপর। তাই গর্ভবতী নারীদের খাবারের বিষয়ে বিশেষ সতর্ক থাকা প্রয়োজন। গরমের মৌসুমে অনেকেই আম খেতে ভালোবাসেন। আম পাকা ও সুস্বাদু ফল হওয়ায় গর্ভবতীদের জন্য এটি উপকারী হতে পারে, তবে কিছু বিষয় মাথায় রেখে আম খাওয়া দরকার।

গর্ভাবস্থায় আমের উপকারিতা
আমের মধ্যে প্রচুর পরিমাণ ডায়েটারি ফাইবার থাকে, যা কনস্টিপেশন বা বদহজম দূর করতে সাহায্য করে। গর্ভাবস্থায় ঔষধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া ও হরমোনের পরিবর্তনের কারণে বদহজম সাধারণ সমস্যা। আম খেলে এই সমস্যা কমে যায়। আমে লুটেন, জিয়ান্থিন এবং ভিটামিন এ থাকে, যা আপনার এবং শিশুর চোখের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই জরুরি। বাচ্চার রেটিনা গঠনে এই পুষ্টিগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

আম খেলে গর্ভবতীর চুল ও ত্বক উজ্জ্বল হয়, শরীরে শীতলতা বজায় থাকে এবং দেহে প্রয়োজনীয় এনার্জি যোগায়। বিশেষ করে যদি আপনি ক্লান্তি, দুর্বলতা বা অবসাদ অনুভব করেন, আম খেলে তাত্ক্ষণিক স্বস্তি পাবেন। এছাড়া আমের পটাশিয়াম ও ম্যাগনেশিয়াম থাকার কারণে এটি ভালো ঘুমে সাহায্য করে এবং উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও সহায়ক।

ডায়াবেটিস ও আম
যদি ডায়াবেটিস থাকে, তবে আম খাওয়ার সময় বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী দিনে সর্বোচ্চ হাফ কাপ থেকে এক থেকে দেড় কাপ পর্যন্ত আম খাওয়া যেতে পারে যদি অন্য চিনি জাতীয় খাবার গ্রহণ না করা হয়। তবে আনকন্ট্রোলড ডায়াবেটিস থাকলে এই পরিমাণেও আম এড়িয়ে চলা উচিত।

আম খাওয়ার সঠিক পদ্ধতি ও সতর্কতা

  • আম খাওয়ার আগে ভালোভাবে ধুয়ে নেবেন।
  • গরম পানি ও লবণ দিয়ে আধা ঘণ্টা ভিজিয়ে রেখে খাওয়া উত্তম।
  • খোসাসহ আম খাওয়া থেকে বিরত থাকবেন।
  • আমের বোটার বা কষ অংশ বেশি না খাওয়া ভালো।
  • দিনের বেলায় আম খাওয়ার চেষ্টা করুন।
  • রাতের বেলায় দুধ-মুড়ি দিয়ে আম খেলে ঘুম ভালো হয়, তবে কারও গ্যাস্ট্রিক সমস্যা থাকলে রাতের খাবারে এড়িয়ে চলুন।
  • অতিরিক্ত ওজন থাকলে আমের পরিমাণ কমিয়ে নিন।
  • বাজার থেকে আম কেনার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন, কারণ অনেক সময় কার্বাইড দিয়ে পাকানো হয় যা গর্ভের শিশুর জন্য ক্ষতিকারক।

আমের সঙ্গে কোন খাবারগুলো এড়িয়ে চলবেন?
গর্ভাবস্থায় হজম ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় কিছু খাবার আমের সঙ্গে খেলে সমস্যা হতে পারে। তাই নিচের পাঁচ ধরনের খাবার আমের সঙ্গে একসঙ্গে খাওয়ার পরিহার করুন:

  • ১. জল: আম খাওয়ার সঙ্গে একসঙ্গে জল খাওয়া পেট খারাপ, গ্যাস্ট্রিক, বদহজম বা ডায়রিয়ার কারণ হতে পারে। আম খাওয়ার ৩০-৪০ মিনিট পর জল খাওয়া উচিত।
  • ২. দই: আম ও দই একসঙ্গে খেলে পেটের ভেতরে বিষক্রিয়া ও এলার্জির সমস্যা দেখা দিতে পারে, বিশেষ করে গর্ভবতীদের মধ্যে।
  • ৩. করোলা: আম ও করোলা একই সময়ে খেলে বমি, শ্বাসকষ্টসহ শারীরিক জটিলতা হতে পারে। করোলা খাবার সাথে অন্তত ৩-৪ ঘন্টার বিরতি রাখা জরুরি।
  • ৪. ঝাল-মসলা: অতিরিক্ত ঝাল মসলা বা তেল দিয়ে আম খাওয়ার ফলে হজমের সমস্যা ও এলার্জি হতে পারে, যা গর্ভাবস্থায় বিপদজনক।
  • ৫. ক্যাফিন ও চিনিযুক্ত পানীয়: আম খাওয়ার পরে চা, কফি, কোমল পানীয় বা চিনিযুক্ত খাবার এড়িয়ে চলুন। এগুলো রক্তে শর্করার মাত্রা বাড়িয়ে ডায়াবেটিস ও অন্যান্য জটিলতা বাড়াতে পারে।


সঠিক নিয়ম মেনে আম খেলে গর্ভবতী মায়েদের জন্য এটি একটি অত্যন্ত পুষ্টিকর এবং উপকারী ফল। তবে ডায়াবেটিস থাকলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া আবশ্যক। সতর্কতার সাথে আম খাওয়ার মাধ্যমে আপনি এবং আপনার ভবিষ্যৎ সন্তান দুজনেই উপকৃত হবেন।
আপনি যদি গর্ভবতী হন এবং সুস্থ সন্তান চান, তবে আম খাওয়ার সময় এই নিয়মগুলো মেনে চলুন।

এসএফ

×