
ছবি:সংগৃহীত
ভারত যদি পাকিস্তানের দিকে প্রবাহিত নদীগুলোর পানি আটকে দেয়, তাহলে চীনও ব্রহ্মপুত্র নদের পানি ভারতে সরবরাহ বন্ধ করে দিতে পারে, এমন হুঁশিয়ারি দিয়েছে পাকিস্তান। গত শনিবার (২৪ মে) পাকিস্তান ইনস্টিটিউট অফ ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স (পিআইআইএ)-এর আয়োজিত ‘পাকিস্তান-ভারত সংঘাত’ শীর্ষক আলোচনাসভায় এ কৌশলগত দিকটি গুরুত্বসহ তুলে ধরা হয়, খবর: ডন
পিআইআইএ-এর চেয়ারপারসন ড. মাসুমা হাসান আলোচনায় বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে ভারত-পাকিস্তান সংঘাত নিয়ে তরুণ প্রজন্মের দৃষ্টিভঙ্গি জানা জরুরি। তিনি তুলে ধরেন, কীভাবে ভারত কোনও বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণ ছাড়াই ২২ এপ্রিল পেহেলগামে হওয়া হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছিল। তার মতে, এটি ভারতের গোয়েন্দা ব্যর্থতার পরিচায়ক।
তিনি আরও বলেন, এই ঘটনার জেরে ভারত ১৯৬০ সালের সিন্ধু পানি চুক্তি স্থগিত করে, এবং পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় পাকিস্তান স্থগিত করে ১৯৭২ সালের সিমলা চুক্তি। এরপর ভারত ৭ মে ‘অপারেশন সিঁদুর’ চালু করে এবং পাকিস্তান ১০ মে প্রতিশোধমূলক ব্যবস্থা নেয়। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হস্তক্ষেপে পরে যুদ্ধবিরতি হয়।
গবেষণা সহকারী মোহাম্মদ উসমান তার ‘পানিসম্পদ ও সম্পদ’ বিষয়ক উপস্থাপনায় জানান, ভারত যদি পাকিস্তানের দিকে পানির প্রবাহ বন্ধ করে দেয়, তাহলে নিজেদের উজানের অঞ্চল প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হবে। তবে শুষ্ক মৌসুমে যদি পানি বন্ধ করা হয়, তাহলে তা পাকিস্তানের কৃষি উৎপাদনের ওপর বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে।
তিনি বলেন, পানি আটকে রাখতে হলে বিশাল অবকাঠামো নির্মাণের প্রয়োজন হবে, যা সময়সাপেক্ষ এবং ব্যয়সাপেক্ষ। এছাড়া উসমান 'পানির অস্ত্রায়ন' বা 'জল বোমা' ধারণার ব্যাখ্যা দেন, যেখানে উজানের দেশ পানি আটকে রেখে একসঙ্গে ছাড়ে, ফলে হঠাৎ বন্যা দেখা দেয়।
তিনি আরও বলেন, ভারত যেমন পাকিস্তানের উজানে অবস্থান করছে, তেমনি *চীন ভারতের উজানে*, বিশেষ করে ব্রহ্মপুত্র নদের ক্ষেত্রে। তাই যদি ভারত পাকিস্তানের পানি আটকে দেয়, চীনও তেমন কৌশল নিতে পারে।
গবেষণা সহকারী সৈয়দা মালিহা সেহর ‘রাজনৈতিক ও সামরিক স্বার্থ’ বিষয়ে তার প্রবন্ধে বলেন, পাকিস্তান-চীন সামরিক অংশীদারিত্ব নতুন কৌশলগত সক্ষমতার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
তিনি উল্লেখ করেন, পাকিস্তান এমন প্রযুক্তি মোতায়েন করেছে যা ভারতীয় ও পশ্চিমা গোয়েন্দা ও নজরদারি ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করছে। বিশেষ করে চীনের তৈরি সিস্টেমের মাধ্যমে এই আধিপত্য ভাঙার চেষ্টা চলছে।
গবেষণা সহকারী সৈয়দ শাহরিয়ার শাহ ‘বর্ণনামূলক যুদ্ধ’ বা ন্যারেটিভ ওয়ার নিয়ে বলেন, সংঘাত শুধু অস্ত্রের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, চিন্তাভাবনা ও ব্যাখ্যার লড়াইটাও এখন গুরুত্বপূর্ণ।
আরেক গবেষণা সহকারী আসিফ আলী ‘কাশ্মীর ফ্ল্যাশপয়েন্ট’ নিয়ে বলেন, পেহেলগামের ঘটনার পর প্রায় ২,৮০০ কাশ্মীরিকে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ জিজ্ঞাসাবাদ বা আটক করেছে। তিনি আশঙ্কা প্রকাশ করেন, এই দমন-পীড়ন অব্যাহত থাকবে।
আঁখি