
ছবি: জনকণ্ঠ
চট্টগ্রামের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত একটি অগণিত স্মৃতি ও বাস্তবতার সাক্ষী—চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল। দিনের আলো হোক কিংবা রাতের অন্ধকার, এই হাসপাতালের প্রতিটি করিডোর, প্রতিটি সিঁড়ি আর প্রতিটি ওয়ার্ড যেন জীবন-মৃত্যুর এক পরম নাট্যমঞ্চ। এখানে এক দরজা দিয়ে কেউ জীবনের শেষ নিঃশ্বাস ফেলে যান, আবার অন্য দরজা দিয়ে এক নবজাতক পৃথিবীর আলো দেখে নতুন আশার সূচনা করে।
রাতের নিস্তব্ধতায় যখন নগর ঘুমিয়ে পড়ে, তখনো আলো জ্বলে থাকে এই হাসপাতালের জানালাগুলোয়। কোনো কক্ষে ডাক্তার ব্যস্ত জীবন বাঁচাতে, অন্য কক্ষে মা তার শিশুর প্রথম কান্নায় অশ্রুসিক্ত। এই হাসপাতালে প্রতিদিন জন্ম নেয় শত শত গল্প—কোনোটি আশার, কোনোটি অপেক্ষার, আবার কোনোটি বিদায়ের।
হাসপাতালের মূল ভবনের নিচতলায় থাকা জরুরি বিভাগ দিয়ে রাত-দিন একটানা প্রবেশ করে অ্যাম্বুলেন্স, রিকশা আর পায়ের ক্ষতচিহ্ন। কেউ আসেন বেঁচে থাকার শেষ চেষ্টায়, কেউবা নিয়ে আসেন শেষ বিদায় জানানো প্রিয়জনের নিথর শরীর। হাসপাতালের দোতলার মাতৃসদনে তখন হয়তো ঠিক সেই মুহূর্তেই এক মা আলিঙ্গন করছেন সদ্য জন্ম নেওয়া সন্তানকে।
এক তরুণ চিকিৎসক জানালেন, “এই হাসপাতাল শুধু চিকিৎসার কেন্দ্র নয়, এটি একটি আবেগের কেন্দ্র। এখানে প্রতিদিন আমরা জীবনের বিপরীতধর্মী দুই মুখোমুখি বাস্তবতার অংশ হই—জন্ম ও মৃত্যু।”
সরকারি হাসপাতাল হিসেবে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল দেশের দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের মানুষের অন্যতম প্রধান চিকিৎসা কেন্দ্র। দিনশেষে গ্রামের সাধারণ কৃষক থেকে শুরু করে শহরের ধনী ব্যবসায়ী পর্যন্ত সবাই এখানে সমানভাবে আসেন সেবা নিতে। হয়তো সুযোগ-সুবিধা সীমিত, তবে এই হাসপাতালের প্রতি মানুষের আস্থা আজও অটুট।
হাসপাতালের সামনে বসে থাকা এক বৃদ্ধ তার স্ত্রীকে ভেতরে রেখে ক্লান্ত চোখে তাকিয়ে বললেন, “এই হাসপাতালই আমাদের ভরসা। ডাক্তাররা যেমন পারেন তেমনই চেষ্টা করেন। আমরাও প্রার্থনায় থাকি।”
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল কেবল একটি হাসপাতাল নয়—এটি জীবন ও মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে থাকা এক স্মারক। এখানে প্রতিদিন হারিয়ে যায় কেউ, আবার জন্ম নেয় নতুন কেউ। এই একক কাঠামোর ভেতর জীবন ও মৃত্যুর এমন সমান্তরাল চলাচল, এই ভিন্ন প্রেক্ষাপটেই যেন জীবনের প্রকৃত সৌন্দর্য ও রহস্য লুকিয়ে।
মুমু