
ছবি : জনকণ্ঠ (খোকসা চরপাড়া গ্রামের নারী-কন্যারা মনের মাধুরী মিশিয়ে তৈরি করছে নকশিকাঁথা)
কুষ্টিয়ার খোকসায় বিলুপ্তপ্রায় আবহমান গ্রামবাংলার নকশিকাঁথা তৈরির কাজ এখনও টিকে আছে কিছু মানুষের হাতে। এক সময় কাঁথা সেলাইয়ের কাজে ব্যস্ত থাকতেন গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ কিশোরী ও গৃহবধূ। এখন সেসব শুধুই স্মৃতি। আধুনিকতা ও প্রযুক্তির ছোঁয়ায় হারাতে বসেছে সুঁই-সুতোয় স্বপ্ন বোনা ঐতিহ্যবাহী এই শিল্পটি।
নকশিকাঁথা আমাদের দেশের গ্রামীণ নারীদের লোকজ ভাবনা, আবেগ আর কল্পনার রূপ। সৌখিন গৃহবধূদের অনুপম শিল্পমাধুর্যের বাস্তব প্রকাশ এ নকশিকাঁথা। পুরোনো জীর্ণ বস্ত্র আর রঙ-বেরঙের সুতায় গৃহবধূদের হৃদয়ের ছোঁয়ায় তৈরি হতো রূপ-রস ও বর্ণ-বৈচিত্র্যে ভরপুর এই হস্তশিল্প।
বড় বড় কারখানায় তৈরি দেশি-বিদেশি রঙিন রেডিমেড কাঁথা-কম্বলের ভিড়ে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামবাংলার এই দেশীয় শিল্প। কালের বিবর্তনে আজকাল খুব একটা চোখে পড়ে না এ শিল্প। অথচ এক সময় দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও সুনাম কুড়িয়েছিল নকশিকাঁথা।
উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামের কৃষক অনুতোষ বিশ্বাসের স্ত্রী লাভলী বিশ্বাস (৪০) একজন অভিজ্ঞ ও পেশাদার সুচশিল্পী। ছোটবেলায় এক নারীর কাছ থেকে নকশিকাঁথা সেলাই শেখেন তিনি। সেই থেকে শুরু। সংসারের কাজের ফাঁকে দিনের বেশিরভাগ সময় কাটান সুঁই-সুতো হাতে।
পৌর এলাকার সাথী পারভীন বলেন, সাংসারিক কাজের পাশাপাশি নকশিকাঁথা তৈরি করি। এক-একটি কাঁথা তৈরি করতে তিন-চার মাস সময় লেগে যায়। আকার ভেদে সময় কমবেশি হয়। কোনো ব্যবসায়িক উদ্দেশ্যে নয়, মূলত ঘরেই ব্যবহারের জন্য কাঁথা তৈরি করি। কোনো প্রশিক্ষণ ছাড়াই গত ১৫-২০ বছর ধরে এ কাজ করছি।
চরবিহারীয়া গ্রামের মিতা মণ্ডল বলেন, পুরোনো বা নতুন কাপড় দিয়েই মূলত নকশিকাঁথা তৈরি করা হয়। প্রথমে কাপড়ের ওপর বিভিন্ন নকশার ছক আঁকা হয়। সেই ছকের ওপর নানা রঙের সুতা দিয়ে নকশা ফুটিয়ে তৈরি করা হয় ‘সুজনি ফোঁড়’, ‘কাঁথা ফোঁড়’ ও ‘বকুল ঝাড়’ কাঁথা।
একই গ্রামের গৃহবধূ মিতালী বলেন, শুধু নিজেদের ব্যবহারের জন্য নয়, অনেকেই মজুরির ভিত্তিতে কাঁথা সেলাই করেন। তবে যে পরিমাণ পরিশ্রম করতে হয়, সে তুলনায় মজুরি খুবই কম। ৪ বাই ৫ ফুট আকারের একটি কাঁথার মজুরি ১,৫০০ টাকা, আর সাড়ে তিন বাই ৫ ফুট কাঁথায় ৮০০ থেকে ৯০০ টাকা পাওয়া যায়। এ আয় দিয়ে সন্তানদের পড়াশোনা ও সংসারের নানা খরচ মেটানো হয়।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা রুবি আক্তার জনকণ্ঠকে জানান, গ্রামীণ সমিতির মাধ্যমে নারীদের হস্তশিল্প, সেলাই, বুটিক-বাটিকসহ আয়বর্ধক কার্যক্রমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর মাধ্যমে নারীদের স্বাবলম্বী করে তোলা হচ্ছে।
সা/ই