ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৮ মে ২০২৫, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

৭৯ বছর বয়সেও সুনিপুণ দক্ষতায় সেলাই মেশিন চালাচ্ছেন সাইফুল

মুজাহিদুল ইসলাম, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, রাজশাহী কলেজ

প্রকাশিত: ১১:১৪, ২৭ মে ২০২৫

৭৯ বছর বয়সেও সুনিপুণ দক্ষতায় সেলাই মেশিন চালাচ্ছেন সাইফুল

ছবি: জনকণ্ঠ

বয়স শুধুই একটি সংখ্যামানুষের ইচ্ছাশক্তির কাছে কোনো কিছুই বাঁধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। এই কথার উজ্জ্বল প্রমাণ রাজশাহীর ৭৯ বছর বয়সী মো. সাইফুল ইসলাম। বৃদ্ধ বয়সে যেখানে অনেকেই বিশ্রামের কথা ভাবেন, সেখানে বয়সকে উপেক্ষা করে প্রতিদিন সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত সেলাই মেশিন নিয়ে ব্যস্ত থাকেন তিনি। সময়ের সঙ্গে বয়স বেড়েছে, কিন্তু কমেনি তাঁর সেলাইয়ের দক্ষতা। এখনো আগের মতোই সুনিপুণভাবে সেলাই মেশিনে ফুটিয়ে তুলছেন বাহারি ডিজাইনের পোশাক।

মো. সাইফুল ইসলাম রাজশাহী শহরের বিমান চত্বর আবাসিক এলাকার বাসিন্দা। ছোটবেলায়, ১৯৬২ সালে, তিনি ভারতের মুসলমানদের ওপর নির্যাতন বেড়ে যাওয়ায়, মাত্র চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ার সময় একটি হাফ প্যান্ট একটি শার্ট পরে জীবন বাঁচাতে বাংলাদেশে চলে আসেন। সেই থেকেই শুরু হয় তাঁর জীবনসংগ্রাম।

একসময় সঙ্গীতের প্রতি গভীর আগ্রহ থাকায় দীর্ঘদিন সঙ্গীতচর্চার সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি। তবে কোনো এক অজানা কারণে সঙ্গীতচর্চা চালিয়ে যেতে পারেননি। পরবর্তীতে রাজশাহীর নিউ মার্কেটে দীর্ঘদিন অন্যের দর্জির দোকানে কাজ করেন। এরপর নিজের নামে একটি দর্জির দোকান চালু করেন।

বর্তমানে তার দোকানটি রাজশাহীর নিউ মার্কেট এলাকার ওয়ে হোম আবাসিক হোটেলের পাশেই অবস্থিত। এখানেই দীর্ঘদিন ধরে কাজ করে চলেছেন তিনি।

 

মো. সাইফুল ইসলাম জানান, তিনি ১৯৭৬ সাল থেকে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। অলস জীবনযাপন তার একেবারেই পছন্দ নয়। এই পেশাকে তিনি খুব ভালোবাসেন এবং এর মাধ্যমেই নিজেকে কর্মঠ সবল রেখেছেন। তার মতে, পরিশ্রমের মাধ্যমে একজন মানুষ নিজেকে সুস্থ সক্রিয় রাখতে পারেনযা অলস জীবনে সম্ভব নয়।

প্রতিদিন সকালে তিনি দোকানে যান এবং রাতে বাসায় ফেরেন। অবসর সময়ে দোকানে রাখা টিভি দেখেই সময় কাটান। এছাড়াও তার সঙ্গে স্কুল-কলেজের ছেলেদের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। অবসরে তারা দোকানে এলে গল্প করে সময় কাটান, যা তাকে আনন্দ দেয়।

এমনকি এই বয়সেও তিনি মাসে কয়েকবার দূরবর্তী জায়গায় আত্মীয়দের বাড়িতে ঘুরতে যান। তার মতে, এই বয়সেও ঘুরে বেড়ানো ভীষণ আনন্দদায়ক।

তিনি জানান, তার ছেলেরা তাকে বিশ্রাম নিতে বলেন, কিন্তু তিনি চান না কারো ওপর নির্ভর করতে। যতদিন বাঁচবেন, নিজের উপার্জনে চলতে চান। তার মতে, নিজে কিছু করে চলার মাঝেই রয়েছে সত্যিকারের প্রশান্তি।

বর্তমান সময়ের বেকার যুবকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “পৃথিবীতে কোনো কাজ ছোট নয়। সব পেশারই মর্যাদা আছে। অনেক যুবক লেখাপড়া শেষ করে ছোট কাজকে লজ্জাজনক মনে করে। আমি বলব, লেখাপড়া শেষ করে বাবার কাঁধে না বসে নিজেদের কিছু একটা করা দরকার, যাতে করে আত্মনির্ভরশীল হওয়া যায়।

বর্তমান সমাজে মো. সাইফুল ইসলামের জীবন সংগ্রাম সত্যিই এক অনুপ্রেরণার নাম। সৎ মানসিকতা অধ্যবসায়ের মাধ্যমে কীভাবে জীবনকে এগিয়ে নেওয়া যায়, প্রতিদিনের কাজের মাধ্যমে তিনি যেন সেই শিক্ষাই দিয়ে চলেছেন।

মুমু

×