
পাবনার বেড়া উপজেলার একদল তরুণ স্বেচ্ছাসেবীর প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠা ‘বেড়া রক্তদাতা ইউনিট’ এখন জেলার গর্ব। অরাজনৈতিক এই সামাজিক সংগঠনটি বিনামূল্যে বছরে প্রায় দুই হাজার মুমূর্ষু রোগীকে রক্ত সরবরাহ করছে। শুধু ফোন করলেই হাজির হচ্ছে রক্তদাতা এ যেন এক জীবন রক্ষাকারী পরিবার!
২০১৮ সালে "ভালোবাসার রঙিন টানে, বাঁচবে জীবন রক্তদানে" স্লোগানে যাত্রা শুরু করা এই ইউনিটটি স্কুল-কলেজ পড়ুয়া কয়েকজন শিক্ষার্থীর হাত ধরে গড়ে উঠেছিল। আজ সেটি পরিণত হয়েছে ১৪ হাজার রক্তদাতার এক বিশাল পরিবারে, যাদের মাধ্যমে শুধু বেড়া উপজেলাই নয়, ছড়িয়ে পড়েছে পাবনা জেলার সর্বত্র এবং আশপাশের কয়েকটি জেলাতেও।
সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা রাহুল কুমার দাস জানান, “আমাদের সংগঠনটি সম্পূর্ণ রাজনৈতিক মুক্ত। আমরা দল, ধর্ম, জাতি না দেখে শুধু মানুষের জীবন বাঁচানোর কাজ করে যাচ্ছি।”
বর্তমানে এই সংগঠনের কার্যনির্বাহী কমিটিতে রয়েছেন ৫২ জন নিবেদিত প্রাণ তরুণ। উপদেষ্টা মণ্ডলীতে রয়েছেন ডা. তাপস কুমার দাস, রেদোয়ান হাসান রুবেল, মঈন উদ্দিন খাজা, হাবিবুল্লাহ সরকার হাবিব, নাছির আহমেদ নাজমুল, অনামিকা ঘোষ তিথি, মো. হাবিব খান, শাওন হোসেন জয় ও রবিউল হাসানসহ অনেকে।
বর্তমান সভাপতি আব্দুল হান্নান (ফারহান) ১৫ বার এবং সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার তপু ১০ বার রক্ত দিয়েছেন। সংগঠনের অন্যতম উপদেষ্টা নাছির আহমেদ নাজমুল ৫৭ বার রক্তদান করে ইউনিটের সর্বোচ্চ রক্তদাতার সম্মান অর্জন করেছেন।
সভাপতি ফারহান বলেন, “আমাদের ফেসবুক পেইজ ও গ্রুপের মাধ্যমে দেশের নানা প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা প্রায় ১৪ হাজার রক্তদাতার সাথে যোগাযোগ রয়েছে। অনেক সময় আমরা নিজেরা রোগীর জন্য রক্তের ব্যাগ কিনে দিয়েছি।”
এই সংগঠনের সবচেয়ে বড় শক্তি হলো তাদের নিঃস্বার্থ কাজ। কোনো সদস্য এক টাকাও সম্মানী নেন না। বরং নিজেদের চাঁদার টাকাতেই চলে ইউনিটের খরচ।
রাহুল কুমার দাস বলেন, “আমাদের দরকার শুধু মানুষের আস্থা ও সহযোগিতা। তাহলেই ভবিষ্যতে আরও বড় পরিসরে মানবতার এই সেবা পৌঁছে দিতে পারবো।”
বেড়া রক্তদাতা ইউনিট আজ শুধু একটি সংগঠন নয়, এটি হয়ে উঠেছে মানবতার এক নাম।এদের মতো তরুণদের নিয়েই বদলে যেতে পারে বাংলাদেশ।
মিমিয়া