ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

শতবর্ষী রাজেন্দ্র কলেজের সেকাল একাল

সোহানুর রহমান, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ফরিদপুর

প্রকাশিত: ০৯:০৪, ২৮ মে ২০২৫

শতবর্ষী রাজেন্দ্র কলেজের সেকাল একাল

ছবি: জনকণ্ঠ

১৯১৮ সালে প্রতিষ্ঠিত রাজেন্দ্র কলেজ জন্মলগ্ন থেকেই জাতীয় চেতনার প্রসারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। শতবর্ষের পুরোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসরকারি রাজেন্দ্র কলেজবৃহত্তর ফরিদপুর তথা দক্ষিণ বঙ্গের শ্রেষ্ঠত্ব গৌরবের প্রতীক। প্রাচীন এবং সমৃদ্ধশালী প্রতিষ্ঠান অত্র অঞ্চলের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের ধারক। এই প্রতিষ্ঠান থেকে শিক্ষা লাভ করেছেন বহু শিল্পী, সাহিত্যিক, চিকিৎসক, রাজনীতিবিদ, শিক্ষক, প্রকৌশলী অন্যান্য দেশবরেণ্য ব্যক্তিবর্গযাঁরা দেশ জাতির উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বেই প্রতিষ্ঠিত হয় সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ। একটি শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী কলেজ হিসেবে এই কলেজের দায়বদ্ধতাও বেশি।

দুই ক্যাম্পাস বিশিষ্ট ৫৫ একরের প্রতিষ্ঠানে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের নিরবিচ্ছিন্ন যাতায়াত ব্যবস্থা নিশ্চিত করার জন্য রয়েছে নিজস্ব বাস মাইক্রোবাস। সুপ্রাচীন ঐতিহ্যবাহী রাজেন্দ্র কলেজের বাহ্যিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন চোখে পড়ার মতো। ১১টি নান্দনিক ভবন, ৬টি দৃষ্টিনন্দন সুবিশাল খেলার মাঠ, নিজস্ব মোবাইল অ্যাপ ওয়েবসাইট এবং বিজ্ঞান ক্লাব, ক্যারিয়ার ক্লাব, বিতর্ক ক্লাব, থিয়েটার ক্লাবসহ নানান ক্লাব এই কলেজটিকে অত্র অঞ্চলের অন্যতম শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পরিণত করেছে।

তবে শুধুমাত্র অবকাঠামোগত উন্নয়ন কখনই আধুনিক শিক্ষার মানদণ্ড নয়। এক্ষেত্রে গবেষণা, শিল্প সংস্কৃতির চর্চা, সামাজিক কর্মকাণ্ড, আঞ্চলিক এবং জাতীয় রাজনৈতিক দায়বদ্ধতা এবং পরিশেষে অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পরীক্ষার তুলনামূলক ফলাফল বিশ্লেষণ হতে পারে শিক্ষার মান যাচাইয়ের গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক।

ঐতিহ্য এবং সুযোগ-সুবিধা বিবেচনায় বৃহত্তর ফরিদপুর তথা ফরিদপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ছাড়াও মাগুরা, যশোর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে শিক্ষার্থীরা একবুক আশা নিয়ে রাজেন্দ্র কলেজে ভর্তি হয়ে থাকে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের প্রত্যাশা কতটুকু পূরণ হচ্ছে?

সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে বর্তমানে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, ডিগ্রি এবং উচ্চমাধ্যমিক কোর্স চালু আছে। শুরুতে শুধুমাত্র উচ্চমাধ্যমিক কোর্স চালু থাকলেও ১৯৭১-৭২ সালে প্রথম ৬টি বিষয়ে স্নাতক স্নাতকোত্তর কোর্স চালু হয়। বর্তমানে এখানে ২০টি বিষয়ে স্নাতক স্নাতকোত্তর কোর্স চালু আছে।

সরকারি রাজেন্দ্র কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে পরিচালিত একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। নিকট অতীতে রাজেন্দ্র কলেজের ভর্তি প্রক্রিয়া ছিল ভর্তি পরীক্ষানির্ভর, যা বিষয়ভিত্তিক যোগ্য মেধাবী শিক্ষার্থী বাছাইয়ে অত্যন্ত কার্যকর পদ্ধতি ছিল। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষ আইনে পরবর্তীতে ভর্তি পরীক্ষা বাতিল করে চালু করা হয় ফলাফলভিত্তিক ভর্তি প্রক্রিয়া।

বিষয়ভিত্তিক বা একাডেমিক পড়াশোনার বাইরে গবেষণা জ্ঞানচর্চার ক্ষেত্রে কিছুটা স্তিমিত অবস্থায় রয়েছে রাজেন্দ্র কলেজ। শিল্প-সাহিত্য চর্চার জন্য কয়েকটি সংগঠন থাকলেও সেগুলোর মধ্যে নতুনত্বের অভাব সৃজনশীলতার সীমাবদ্ধতা পরিলক্ষিত হয়। কলেজে দুটি কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ২০টি বিভাগীয় গ্রন্থাগার থাকা সত্ত্বেও শিক্ষার্থীদের গ্রন্থাগারমুখী প্রবণতা তুলনামূলকভাবে কম। ৫০ হাজারেরও বেশি বই থাকা সত্ত্বেও লাইব্রেরিগুলো অধিকাংশ সময় ফাঁকা থাকে।

তবে সম্প্রতি কলেজে শিক্ষক শিক্ষার্থীদের যৌথ উদ্যোগে গঠিত ক্যারিয়ার ক্লাবটি একটি নতুন দিগন্তের দ্বার উন্মোচন করেছে। এই ক্লাবের মাধ্যমে চাকরি পরীক্ষা, ক্যারিয়ার পরিকল্পনা, পরীক্ষা ভীতি দূরীকরণসহ নানা বিষয়ে সাপ্তাহিক সেমিনার আয়োজন করা হচ্ছে।

রাজেন্দ্র কলেজ বাংলাদেশের শিক্ষাঙ্গনে একটি ঐতিহ্যবাহী প্রতিষ্ঠান হলেও বর্তমান সময়ে নানা চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন। অবকাঠামোগত উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষার মান, গবেষণা, জ্ঞানচর্চা এবং শিক্ষার্থীদের সামগ্রিক বিকাশের দিকে আরও মনোযোগ দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

 

মুমু

×