
ছবি: সংগৃহীত
মানুষের জীবনযাত্রায় একাকার হয়ে মিশে আছে হাসি কান্নার একটি নাম, কুমার নদ।
এ নদকে ঘিরেই গড়ে উঠেছে বিভিন্ন জায়গার জনবসতি। নদীপাড়ের মানুষকে দিয়েছে জীবন ও জীবিকার আশ্রয়। প্রকৃতি ও জনজীবনে নদ নদীর ভাঙা-গড়ার খেলা গভীর প্রভাব বিস্তার করেছে। নদীর গতিপথ পরিবর্তন ভৌগলিক চেহারা বদলে দিয়েছে বারবার।
বাংলার সভ্যতা নদী তীরবর্তী সভ্যতা বললেও অত্যুক্তি হয় না। সমাজ ও সংস্কৃতিতে নানাভাবে প্রভাব বিস্তার করেছে কুমার নদ। কুমার নদ পদ্মার একটি শাখা। কুমার নদের একটি ধারা গোপালগঞ্জের মুকসুদপুর উপজেলার রাঘদি ইউনিয়নের সেনদিয়া ঘাট এলাকায় মাদারীপুরের আড়িয়াল খাঁ ও গোপালগঞ্জের মধুমতী নদীর সংযোগ খালে (বিলরুট ক্যানেল) গিয়ে মিশেছে। অপর ধারাটি ভাঙ্গায় গিয়ে কুমারের মূল স্রোতোধারায় পড়েছে।
বর্তমানে পদ্মা সেতু, এক্সপ্রেসওয়েসহ নানাবিধ কারণে ফরিদপুরের ভাঙ্গার গুরুত্ব বেড়েছে। কথিত আছে কুমার নদের পাড়ে অবস্থিত হওয়ায় ভাঙ্গার আগের নাম ছিল ‘কুমারগঞ্জ’। কুমারগঞ্জ কুমার নদের উত্তর পাড়ে অবস্থিত ছিল। ১৮৮৯ সালে এখানে স্থাপিত হয়েছিল চৌকি আদালত। ব্যবসা-বাণিজ্য কেন্দ্র নদের উত্তর পাড় নিয়ে গড়ে উঠেছিল। কিন্তু এক সময় নদের উত্তর ও দক্ষিণ পাড়ের লোকদের মধ্যে কলহ–বিবাদের সৃষ্টি হয়। ফলে নদের উত্তর পাড়ে দক্ষিণ পাড়ের অধিবাসীদের যে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছিল, তা ভেঙে তাঁরা দক্ষিণ পাড়ে গিয়ে বাজার স্থাপন করেন। এ ঘটনায় ওই এলাকার মানুষের মুখে মুখে কুমারগঞ্জের নতুন নাম ‘ভাঙ্গা বাজার’ হিসেবে ফিরতে থাকে। সেই থেকেই জায়গাটির নাম হয়ে যায় ভাঙ্গা। কালের অতলে হারিয়ে যায় কুমার নদের স্মৃতিবিজড়িত কুমারগঞ্জ।
ষড়ঋতুতে নানা চেহারায় কুমার ধরা দেয় মানুষের কাছে। বর্ষায় নদের দুকূল ছাড়িয়ে বন্যার পানি ঢোকে শহরে ও গ্রামে। ৭ থেকে ১৫ দিন স্থায়ী হওয়ার পর নেমে যায় পানি, রেখে যায় শস্যের প্রাণ পলিমাটি। বর্ষার উন্মাদনা থমকে যেতে থাকে শরতে। তখন নদের ভরা যৌবন, দুই পারে কাশবনের সমারোহ। হেমন্তে পানি কমে সর্পিল আকার ধারণ করে, শীতে কুয়াশার চাদর ছিঁড়ে বের হয়ে আসতে চলে যায় অনেকটা সময়। এভাবে বসন্ত ও গ্রীষ্ম পার হয়ে আবার আসে বর্ষা, নদের সেই উন্মাদ রূপ।
আবার স্রোতস্বিনী নদ হয়ে উঠবে কুমার। গোসলের সময় এ নদে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে স্রোতের সঙ্গে গা ভাসিয়ে দেয় দুরন্ত কিশোর–তরুণ। এ নদের পানিতে নৌকা ভাসিয়ে মাঝি ভাসবে ভাবের সাগরে, "নাইয়ারে নায়ের বাদাম তুইলা, কোন দেশে যাও বাইয়া।"
আবির