ছবিঃ সংগৃহীত
অনেকেই এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হন যেখানে নিজেদের বাড়ির পথে চলাচলের রাস্তা হঠাৎ বন্ধ করে দেয় আশপাশের কেউ। প্রশ্ন জাগে, এটা কি আইনসম্মত? এমন পরিস্থিতিতে কী করা যায়? সেই বিষয়েই থাকছে গুরুত্বপূর্ণ আইনি ব্যাখ্যা, যা জানা সবার জন্য জরুরি।
রাস্তা কারো ব্যক্তিগত সম্পত্তি, তবুও আপনি ব্যবহার করতেন?
ধরুন, আপনি দীর্ঘদিন ধরে একটি রাস্তা ব্যবহার করে আসছেন যেটি মূলত আপনার প্রতিবেশীর বা অন্য কারো ব্যক্তিগত জমির অংশ। হঠাৎ সে সেই পথ বন্ধ করে দিল। এখন সে বলছে, আপনার বিকল্প রাস্তা নিতে হবে অথবা তার কাছ থেকে জমি কিনে নিতে হবে।
প্রকৃতপক্ষে, এমন অবস্থায় আপনাকে বিকল্প রাস্তা খুঁজতে হবে না, মই দিয়ে উঠতে হবে না, এমনকি জমিও কিনতে হবে না— আইন আপনাকে সুরক্ষা দেয়, যদি কিছু নির্দিষ্ট শর্ত পূরণ করেন। এই আইনি অধিকারকে বলা হয় ‘ইজমেন্ট’ বা ‘পদাধিকার’।
ইজমেন্ট বা পদাধিকার কী?
পদাধিকার হলো অন্যের জমির উপর দিয়ে নির্দিষ্ট শর্তে চলাচল বা ব্যবহারের অধিকার অর্জন। যেমন, যদি আপনি শান্তিপূর্ণভাবে, প্রকাশ্যে ও দীর্ঘদিন ধরে কারো জমির ওপর দিয়ে যাতায়াত করে থাকেন, তাহলে সে জমির মালিক আপনাকে সেই চলাচলে বাধা দিতে পারে না।
পদাধিকার অর্জনের শর্তগুলো কী কী?
১. প্রকাশ্য ও শান্তিপূর্ণ ভোগদখল: আপনাকে প্রমাণ করতে হবে আপনি দীর্ঘদিন ধরে প্রকাশ্যে এবং কোনো বাধা ছাড়াই রাস্তা হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
২. ভোগদখল হতে হবে মঙ্গলজনক উদ্দেশ্যে: আপনার ব্যবহার যদি বাড়িতে যাতায়াত, মালপত্র আনানেয়ার মতো সাধারণ কাজে হয়ে থাকে তবে তা বৈধ। কিন্তু পতিতাবৃত্তি, জুয়া, বা অবৈধ ব্যবসায় ব্যবহৃত হলে তা পদাধিকার হিসেবে ধরা হবে না।
3. অধিকার হিসেবে ব্যবহার: এটি রাস্তা হিসেবেই ব্যবহৃত হতে হবে—ব্যবসার জন্য বড় ট্রাক নিয়ে চলাচল করলে তা পদাধিকার নয়।
4. দীর্ঘস্থায়ী ব্যবহার:
-
যদি এটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমি হয়, তাহলে কমপক্ষে ২০ বছর ব্যবহার করতে হবে।
-
যদি সরকারি জমি হয়, তাহলে ৬০ বছর ভোগদখলের ইতিহাস থাকতে হবে।
-
বিনা বাধায় চলাচল: অতীতে ওই চলাচলে বাধা ছিল না—এবং প্রতিবেশীর হঠাৎ কোনো পারিবারিক বা সামাজিক বিরোধ থেকে যদি বাধা দেয়, তা অগ্রহণযোগ্য হবে।
-
আইনি পদক্ষেপের সময়সীমা: যদি হঠাৎ চলাচলে বাধা দেয়া হয়, তাহলে সেই বাধা সৃষ্টির ২ বছরের মধ্যে মামলা করতে হবে।
পদক্ষেপ কী হতে পারে?
আপনি যদি উপরের শর্তগুলো পূরণ করেন, তাহলে সিভিল কোর্টে ‘ডিক্লারেটরি স্যুট’ বা পদাধিকার সংক্রান্ত মামলা দায়ের করতে পারেন। আদালত সেই জমিতে আপনার চলাচল অধিকার নিশ্চিত করে আদেশ দিতে পারেন।
শেষ কথা
নিজের অধিকার সম্পর্কে সজাগ থাকাটা জরুরি। বহু মানুষ কেবল আইন না জানার কারণে নিজেদের চলাচলের স্বাভাবিক পথ হারান। এই তথ্যগুলো সঠিকভাবে জানা থাকলে, আপনি শুধু নিজের পথই ফিরিয়ে আনতে পারবেন না, বরং আইনের সহায়তায় সুরক্ষিতভাবে সেটি ব্যবহারও চালিয়ে যেতে পারবেন।
ইমরান
