
ছবি: সংগৃহীত
দেশের ব্যাংক খাত বর্তমানে নজিরবিহীন সংকটে পড়েছে। একের পর এক দুর্বল ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের তালিকা দীর্ঘ হচ্ছে। অনেক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান আমানতকারীদের অর্থ ফেরত দিতে পারছে না। মূলধন ঘাটতি, লাগামহীন ঋণখেলাপি এবং তহবিল সংকটে পুরো খাতটি টালমাটাল অবস্থায় রয়েছে।
সংকট নিরসনে বাংলাদেশ ব্যাংক কয়েকটি ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান একীভূত করার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে ব্যাংকিং খাত সংশ্লিষ্ট অনেকেই আশঙ্কা করছেন, এতে সংকট আরও বাড়তে পারে। এদিকে ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গত নয় মাস ধরে কোনো তফসিলি ব্যাংক থেকে প্রয়োজনীয় সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর স্পষ্টভাবে বলেছিলেন, টাকা ছাপিয়ে ব্যাংক বাঁচানো হবে না। কিন্তু বাস্তব পরিস্থিতির চাপে পড়ে অনিচ্ছাকৃতভাবে ২২ হাজার কোটি টাকা ছাপিয়ে তারল্য সহায়তা দিতে হয়েছে। তবুও সংকট কাটেনি।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টের সাবেক মহাপরিচালক তৌফিক আহমেদ চৌধুরী বলেন, আমি একীভূতকরণের পক্ষে, তবে জোর করে করা উচিত নয়। এক ব্যাংকের ব্যালেন্স শিট অন্য ব্যাংকের সঙ্গে একীভূত করার ক্ষেত্রে সতর্কতা দরকার।
সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর জানান, শরিয়া ভিত্তিক ছয়টি দুর্বল ইসলামী ব্যাংককে একীভূত করা হবে। এই তালিকায় রয়েছে—সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, আইসিবি ইসলামী ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক।
ব্যাংকিং খাতের সংকট এতটাই প্রকট হয়েছে যে, কিছু ব্যাংক গ্রাহকের জমা রাখা অর্থ ফেরত দিতেও হিমশিম খাচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের আশঙ্কা, চলতি বছরের মার্চ প্রান্তিকে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৫ লাখ কোটি টাকা ছাড়িয়ে যেতে পারে।
এদিকে চলমান সংকটের কারণে কয়েকটি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ইতোমধ্যে পদত্যাগ করেছেন। সর্বশেষ ব্র্যাক ব্যাংকের এমডি সেলিম আরেফ হোসেন গত বুধবার পদত্যাগ করেছেন। তিনি বলেন, কাজ করার মতো পরিবেশ নেই, তাই দায়িত্ব ছেড়ে দিয়েছি।
ড. মনসুর বলেন, কিছু ব্যাংকের অবস্থা এতটাই নাজুক যে, সেগুলো আর বাঁচানো সম্ভব হবে না। তার এ বক্তব্যে আমানতকারীদের মধ্যে ব্যাপক আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। ফলে অনেকেই হুড়োহুড়ি করে টাকা তুলে নিতে শুরু করেন। পরিস্থিতি সামাল দিতে বাংলাদেশ ব্যাংক জরুরি তহবিল সহায়তা দেয়, তবে এতে সংকট পুরোপুরি কাটছে না।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, গত নয় মাসে ব্যাংকগুলো ব্যবসায়ীদের কোনো ধরনের ঋণ বা আর্থিক সহযোগিতা দেয়নি, যার ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডও।
সূত্র: https://www.youtube.com/watch?v=x1mGOccVN2Y
আবির