ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কুমির মাছের নাম শুনেছ!

মুহিব্বুল্লাহ কাফি

প্রকাশিত: ১৮:৪৪, ৩০ মে ২০২৫

কুমির মাছের নাম শুনেছ!

শিরোনাম পড়েই বুঝতে পারছ আজ কোন মাছ নিয়ে কথা বলতে যাচ্ছি। এর নাম কুমির মাছ হওয়ার কারণ হলো, মুখের দিকটা অবিকল কুমিরের মতো। যদিও পেছনের দিকটা মাছের আকৃতিই আছে। এটি একটি পরিপূর্ণ মাছ। ইংরেজিতে এই মাছকে ‘অ্যালিগেটর গ্যার’ বলা হয়। গবেষকদের মতে, মহাসাগরের বিশাল জলরাশিতে বসবাসরত ২ লক্ষ ২৮ হাজার ৪৫০ প্রজাতির সামুদ্রিক প্রাণী ও উদ্ভিদ রয়েছে। তন্মধ্যে মাছ প্রজাতির সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। বিস্ময়কর ও রহস্যময় প্রায় ৩০ থেকে ৪০ হাজার প্রজাতির মাছের সন্ধান পাওয়া গেছে। আল্লাহ তাআলা এই বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠ মাছের প্রত্যেকটি মাছকেই ভিন্ন ভিন্ন অবয়ব, রূপ, গুণ দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। কুমির মাছেরও রয়েছে আশ্চর্য অবয়ব। 
কুমির মাছের মুখের ভিতর উপরিভাগে রয়েছে দুই সারি বড় বড় দাঁত। এদের নিচের সারিতে দাঁত নেই একটিও। কুমির মাছের গায়ের রঙ বাদামি অথবা জলপাই। কখনো কখনো পেটের দিকে রং খানিকটা হালকা হয়ে থাকে। এদের গায়ের আঁশগুলো দিয়ে আদিম আমেরিকানরা অলংকার বানিয়ে ব্যবহার করে থাকেন। কারণ, কুমির মাছের আঁশগুলো দেখতে বেশ আকর্ষণীয়। হীরার মতো সুন্দর। হীরাকৃতির কারণেই তারা এগুলো ব্যবহার উপযোগী করে তোলেন। কুমির মাছ দেখতে শুধু কুমিরের মতই নয় এদের আচার-আচরণও অনেকটা কুমির সাদৃশ্য। কারণ এরাও পানি নির্ভরশীল। পানি ছাড়া লম্বা সময় বেঁচে থাকতে পারে। 
জানা যায়, এ পর্যন্ত সবচেয়ে বড় কুমির মাছটি ধরা হয়েছিল ২০১১ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি। মিসিসিপি নদীর ভিকসবার্গ থেকে ধরা কুমির মাছটি লম্বায় ছিল আট ফুট পাঁচ ইঞ্চি। আর ওজন ছিল ১৪৮ কেজি। চওড়ায় ছিল চার ফুট। ওই কুমির মাছের বয়স ৫০ থেকে ৭০ বছর বলে ধারণা করেছিলেন প্রাণিবিদরা। তবে পরিপক্ব অ্যালিগেটর গ্যার সাধারণত দৈর্ঘ্যে ৬ ফুট (১.৮ মিটার) পরিমাপ করে এবং ওজন ১০০ পাউন্ড (৪৫ কেজি) এর বেশি হয়।
এদের বাসস্থান সাধারণত বড়সড় নদী ও সাগরে। যেখানে পানি বেশি সেখানেই এদের বিচরণ ও আবাসস্থল। কারণ এরা লম্বায় একেকটা ৮ থেকে ১০ ফুটের মত হয়ে থাকে। এবং ওজনে ১৪৮ থেকে ১৫৯ কেজি পর্যন্তও হয়ে থাকে। কুমির মাছ পরিষ্কার পানির মাছ। এরা বিশেষ করে উত্তর আমেরিকা, লোয়ার মিসিসিপি নদী এবং যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণের উপকূলীয় রাজ্যগুলোতে এই মাছ প্রচুর দেখা যায়। মেক্সিকো, যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস, ওকলাহোমা, সাউথ ক্যারোলিনা, নর্থ ক্যারোলিনা, ভার্জিনিয়া, লুইজিয়ানা, কেনটাকি, মিসিসিপি, আলাবামা, টেনেসি, আরকানসাস, মিসৌরি, ফ্লোরিডা আর জর্জিয়াতেও এদের পাওয়া যায়। পুরুষ কুমির মাছ যখন মাদী কুমির মাছের আশপাশের ঘোরাঘুরি করে এবং মোচড়ে উঠে মাদীর সাথে ধাক্কাধাক্কি এবং স্লাইডিং শুরু করে তখনই মাদীর ডিম ছাড়ার প্রক্রিয়া ঘটে।
আর সেসময় পুরুষ অ্যালিগেটর গ্যার মাদীর ডিমগুলি পানির স্তম্ভে ছেড়ে দেওয়ার সাথে সাথে নিষিক্ত করার জন্য মিল্টের মেঘ ছেড়ে দেয়। এরপর আঠালো ডিমগুলি ডুবে থাকা উদ্ভিদের সাথে সংযুক্ত হয় এবং বিকাশ ঘটতে থাকে।  ডিম থেকে লার্ভাগুলো মাছ হয়ে ফুটতে কয়েক দিন সময় লাগে। এবং আরো দশ দিন সময় নেয় লার্ভা মাছ গাছপালা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ছোট পোনা হিসাবে চলাফেরা শুরু করতে। এরা আকারে দানবাকৃতি হওয়ার কারণে পানিতে এদের চলাচল বেশ ধীর গতিতে। বসন্তে ডিম পাড়ে কুমির মাছ। কুমির মাছের ডিম কিন্তু বেশ বিষাক্ত। ডিম বিষাক্ত হলেও কুমির মাছ কিন্তু বিষাক্ত নয়। কুমির মাছ খাওয়া যায়। দুনিয়ার যেসব দেশে পাওয়া যায়, সেসব দেশের মানুষই খায় কুমির মাছ। খেতেও নাকি বেশ সুস্বাদু। 
একটি মাদী কত ডিম উৎপাদন করতে পারে তা জানার জন্য ব্যবহৃত একটি সাধারণ সূত্র হল ৪.১ গ্রাম শরীরের ওজন, যা প্রতি স্প্যানে গড়ে প্রায় ১৫০,০০০ ডিম দেয়। অ্যালিগেটর গ্যারের ডিম হয় উজ্জ্বল লাল। ভাবা হয়েছিল, কুমির মাছ কেবল উত্তর আমেরিকাতেই আছে। কিন্তু ২০০৭ সালে ফেব্রুয়ারিতে একেবারে উল্টো গোলার্ধে খোঁজ মিলল এই কুমির মাছের। তাও আর কোথাও নয়- ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায়। তবে জাকার্তার মাছটি ছিল বেশ ছোট আকারের। লম্বায় পাঁচ ফুটও ছিল না। এরপর ২০০৮ সালের জানুয়ারিতে ৩ কেজি ওজনের আরেকটি কুমির মাছের দেখা মিলল মালয়েশিয়ার পেহাঙের বেরায়। জেলেদের জালে নিজে নিজেই ধরা দেয় মাছটি। এরপর একে একে তুর্কমেনিস্তান, হংকং, সিঙ্গাপুর ও জাপানেও দেখা মিলেছে অদ্ভুত এই মাছ। ২০২২ সালেও কলকাতার বেহালার ঠাকুরপুকুরের একটি খালে একটি কুমির মাছ ধরা পড়ে। টাইমস অব ইন্ডিয়ার খবরে বলা হয়েছে, ধরা পড়া সেই কুমির মাছটি প্রায় ১৫-২০ কেজির বেশি হবে। কেবল উত্তর আমেরিকার কুমির মাছই দানবাকৃতির। খাবারেও কুমিরের মতো-মাংসাশী। তবে, কুমির মাছ দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। বাকিরা প্রত্যেকেই নিরামিষভোজী।

প্যানেল

×