
ছবিঃ সংগৃহীত
এ বছর অন্যান্য ধাতুর তুলনায় সোনার দাম হঠাৎ করেই অনেক বেশি বেড়েছে—আর সেটি ভালো খবর না-ও হতে পারে।
সোনা সব সময়ই এক ধরনের "নিরাপদ আশ্রয়" হিসেবে বিবেচিত হয়। যখন বাজারে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়, তখন মানুষ শেয়ারবাজার বা ঝুঁকিপূর্ণ সম্পদের বদলে সোনার মতো নিরাপদ জায়গায় বিনিয়োগ করে। গত এক বছরে সোনার দাম বেড়েছে প্রায় ৪০%! শুক্রবার এর দাম ছিল প্রতি আউন্সে ৩৩১৩ ডলার, যদিও এটি এপ্রিলের রেকর্ড থেকে একটু কম।
কিন্তু একই সময়ে, তামা, দস্তা আর অ্যালুমিনিয়ামের মতো শিল্পখাতে ব্যবহৃত ধাতুগুলোর দাম কমেছে গড়ে ১০%। এই ধাতুগুলো মূলত অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সঙ্গে সরাসরি জড়িত—অর্থাৎ যখন ব্যবসা-বাণিজ্য ভালো চলে, এসব ধাতুর চাহিদা বাড়ে।
ব্লুমবার্গ ইন্টেলিজেন্সের বিশ্লেষক মাইক ম্যাকগ্লোন বলছেন, সোনা বনাম শিল্প ধাতুর দামের এমন বিশাল পার্থক্য আগে কখনও দেখা যায়নি। এটা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য ভালো লক্ষণ না–একটি বড় ধরনের অস্থিরতার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
তবে তিনি এটাও মনে করিয়ে দিয়েছেন যে, এখনো মার্কিন স্টক মার্কেট বেশ চাঙ্গা আছে, এবং সরকারি বন্ডের সুদের হারও বাড়ছে। সাধারণত অর্থনীতি যদি দুর্বল হয়ে পড়ে, তাহলে লোকজন নিরাপদ বন্ডে বিনিয়োগ করে এবং সুদের হার কমে। কিন্তু সেটি এখনো হচ্ছে না।
এর মানে কি সোনার এত দাম বেড়ে যাওয়া আসলেই আতঙ্কের কিছু? নাও হতে পারে। সোনার দামের এই বৃদ্ধির পেছনে অনেক দিন ধরেই ভূমিকা রাখছে মূল্যস্ফীতির আশঙ্কা, ডলারের ওপর নির্ভরতা কমাতে অন্যান্য দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পদক্ষেপ, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রে খুচরা ক্রেতাদের আগ্রহও—যেমন, কস্টকোর দোকানে সোনার বার পৌঁছেই বিক্রি হয়ে যাচ্ছে।
অনেক বাজার বিশ্লেষক তাই বলছেন, সোনার এই উত্থান হয়তো আসল সংকেত নয়, বরং এক ধরনের "বাবল"—অর্থাৎ, অনেকেই একসাথে বিনিয়োগ করায় দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে গেছে।
গত মাসে ব্যাংক অব আমেরিকার এক জরিপে দেখা যায়, ৪৯% ফান্ড ম্যানেজার মনে করেন এখন সোনাতে বিনিয়োগ সবচেয়ে ‘গাদাগাদি’ অবস্থায়—অর্থাৎ সবাই সেখানে ঢুকছে।
তবে এটাকে একেবারে উপেক্ষা করাও ভুল হবে। কারণ, সোনার পাশাপাশি শেয়ারবাজারও এখন ইতিহাসের অন্যতম উচ্চতায় রয়েছে। আর এমন অবস্থায় যদি হঠাৎ রাজনৈতিক অস্থিরতা বাড়ে বা অর্থনীতি মন্থর হয়ে পড়ে, তাহলে বড় ধরনের ধস নামতে পারে মার্কেটজুড়ে।
তখন শুধু স্টক বা বিটকয়েন নয়, এমনকি তামা বা দস্তার মতো অর্থনীতিভিত্তিক ধাতুর দামও পড়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে বিনিয়োগকারীরা আবার ছুটে যাবেন সেই পুরনো নির্ভরতার জায়গায়—সোনা। আর তখন এর দাম নতুন রেকর্ড গড়ে ফেলতেও পারে।
ম্যাকগ্লোন লিখেছেন, “যখন স্টক মার্কেট এতটা ওপরে, তখন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ট্যারিফ নীতিগুলো বাজারের ভারসাম্য পরীক্ষায় ফেলতে পারে।”
সোনার দাম বাড়া অনেক কিছু বলছে—অর্থনীতি নিয়ে উদ্বেগ, রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা, আর মানুষের নিরাপত্তার খোঁজ। এটা সতর্কবার্তা হতে পারে, আবার মাত্রাতিরিক্ত উৎসাহের প্রতিফলনও।
মারিয়া