
স্বাস্থ্য সমস্যা বলতে আমরা সাধারণত হৃদ্রোগ, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপের কথা ভাবি। কিন্তু নীরবে কাজ করা আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ আমাদের কিডনি, যার বিপর্যয় অনেক সময় আগেভাগে চোখে পড়ে না। বিশেষ করে নারীদের ক্ষেত্রে কিডনি রোগের প্রাথমিক লক্ষণগুলো এতটাই সূক্ষ্ম যে অনেকেই এগুলোকে ক্লান্তি, মানসিক চাপ কিংবা হরমোনজনিত পরিবর্তন বলে ধরে নেন। অথচ এই ভুল বোঝাবুঝিই ভবিষ্যতের বড় বিপদের কারণ হতে পারে।
দেহের অতিরিক্ত তরল বের করে দেওয়া, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ, হাড়ের সুস্থতা রক্ষা, এমনকি রক্ত তৈরির প্রক্রিয়ায়ও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে কিডনি। তাই কিডনির কার্যক্ষমতা কমে গেলে তার ইঙ্গিতগুলো বুঝে নেওয়া খুব জরুরি। নিচে এমন পাঁচটি লক্ষণ তুলে ধরা হলো, যা নারীদের ক্ষেত্রে কিডনি রোগের প্রাথমিক সতর্কবার্তা হিসেবে দেখা দিতে পারে।
চোখের পাতা বা গোঁড়ালি ফোলা? কিডনি সাহায্যের সংকেত দিচ্ছে কি না ভাবুন
ভোরবেলা চোখের নিচে ফোলা ভাব কিংবা গোড়ালি ফোলাকে আমরা সাধারণত রাতের ভেজাল ঘুম, অতিরিক্ত নুন খাওয়া বা বয়সজনিত পরিবর্তন বলেই ধরে নিই। কিন্তু এসব ফোলা যদি বারবার হয় এবং বিশ্রামেও না কমে, তাহলে তা কিডনির সমস্যার ইঙ্গিত হতে পারে।কিডনি ঠিকমতো কাজ না করলে শরীর থেকে অতিরিক্ত পানি বের হতে পারে না, যা পা, পায়ের পাতায় কিংবা মুখমণ্ডলে ফোলার সৃষ্টি করে। তাই এমন উপসর্গ দেখা দিলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।
অতিরিক্ত ক্লান্তি, যেন হাড়ের ভেতর থেকে বেরিয়ে আসছে
রোজকার জীবনযাত্রার চাপে ক্লান্ত হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু যদি পর্যাপ্ত ঘুমের পরও শরীর চাঙা না লাগে, তাহলে সেটি শুধুই চাপ নয়, বরং কিডনির সমস্যার ইঙ্গিতও হতে পারে।কিডনি ইরিথ্রোপয়েটিন নামের একটি হরমোন তৈরি করে, যা রক্তে লাল কণিকা তৈরিতে সহায়তা করে। কিডনি দুর্বল হলে এই হরমোনের উৎপাদন কমে যায়, রক্তে অক্সিজেন সরবরাহ ব্যাহত হয় এবং দেখা দেয় অ্যানিমিয়া। এর ফলেই শরীরে এক ধরনের গভীর ক্লান্তি অনুভব হয়, যা সাধারণ ক্লান্তি থেকে ভিন্ন।
মূত্রের রঙ, গন্ধ বা ধরণে হঠাৎ পরিবর্তন? কিডনি সতর্কবার্তা দিচ্ছে
মূত্র আমাদের দেহের অভ্যন্তরীণ অবস্থার একপ্রকার প্রতিচ্ছবি। আর এর নিয়ন্ত্রণে রয়েছে কিডনি। তাই মূত্রের স্বাভাবিক রূপ বদলে গেলে তা অবহেলা করা উচিত নয়।
যেমন: মূত্র অতিরিক্ত ফেনাযুক্ত বা বুদবুদপূর্ণ হলে, রাত্রিকালীন বারবার প্রস্রাবের চাপ অনুভব হলে, প্রস্রাবে রক্ত দেখা দিলে, রঙ অস্বাভাবিক গা dark ় বা ঘোলাটে হলে কিংবা প্রস্রাবের সময় জ্বালাপোড়া অনুভূত হলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া উচিত। এগুলো কিডনি সমস্যার প্রাথমিক উপসর্গ হতে পারে।
ক্লান্তির পরের দিন নয়, মাঝরাতে হঠাৎ পেশিতে টান ধরছে? সতর্ক হোন
জিমে কসরতের পর পেশিতে টান পড়া স্বাভাবিক। কিন্তু কোনো কারণ ছাড়াই, বিশেষ করে রাতে ঘুমের মধ্যে যদি হঠাৎ পা বা পায়ের পাতায় ব্যথানির্ভর টান অনুভব করেন, তাহলে তা কিডনির ভারসাম্যহীনতার ইঙ্গিত হতে পারে।
কিডনি আমাদের দেহে সোডিয়াম, পটাসিয়াম ও ক্যালসিয়ামের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে, যা পেশির স্বাভাবিক কার্যকারিতায় ভূমিকা রাখে। এই ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্য বিঘ্নিত হলে পেশিতে টান পড়তে পারে।
ত্বক শুষ্ক, চুলকানিময় বা অস্বাভাবিকভাবে রুক্ষ হয়ে উঠছে?
ত্বকের অবস্থাও কিডনির কার্যক্ষমতার ওপর নির্ভরশীল। কিডনি যদি দেহ থেকে বর্জ্য ঠিকভাবে বের করতে না পারে, তবে সেই বিষক্রিয়ার প্রভাব পড়ে ত্বকে।ফলে ত্বক হয়ে পড়ে অতিরিক্ত শুষ্ক, খসখসে এবং চুলকানিময়। সাধারণ ময়েশ্চারাইজারেও আরাম না পেলে এবং সমস্যা দীর্ঘস্থায়ী হলে কিডনি পরীক্ষা করানো উচিত।
এই উপসর্গগুলোকে অবহেলা করা বিপজ্জনক হতে পারে
এই লক্ষণগুলো এতটাই সূক্ষ্ম যে অনেক নারী সেগুলোকে মানসিক চাপ, বয়সজনিত পরিবর্তন বা ঘুমের অভাব বলে এড়িয়ে যান। কিন্তু একাধিক উপসর্গ নিয়মিত দেখা গেলে রক্ত বা মূত্র পরীক্ষা করিয়ে কিডনির অবস্থা জেনে নেওয়া প্রয়োজন।উল্লেখযোগ্যভাবে, নারীরা বারবার ইউরিনারি ট্র্যাক্ট ইনফেকশনে (UTI) আক্রান্ত হন, যা দীর্ঘমেয়াদে কিডনির মারাত্মক ক্ষতি করতে পারে। তাই বারবার ইউরিন ইনফেকশন হওয়া বা পিঠের নিচের অংশে ব্যথা অনুভব করলেও দেরি না করে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া জরুরি।
কিডনির যত্নে জটিল কিছু নয়, দরকার সচেতনতা
প্রতিদিন পর্যাপ্ত পানি পান, রক্তচাপ ও রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শরীরচর্চা এই কিছু সাধারণ অভ্যাসই কিডনিকে সুস্থ রাখতে পারে।আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিজের শরীরের প্রতি মনোযোগী থাকা। কারণ কিডনি হয়তো চুপচাপ কাজ করে, কিন্তু যখন বিপদে পড়ে, তখন শরীরকেই সংকেত পাঠায়। সেই সংকেতগুলো বুঝে নেওয়াটাই আমাদের দায়িত্ব।
সূত্র:https://tinyurl.com/bdz8atf4
আফরোজা