
বাংলাদেশের সংবাদপত্র জগতে এক নতুন ধরনের ভয়াল দুর্বৃত্তায়নের ছায়া নেমে এসেছে। নিচু মানসিকতার কিছু ব্যক্তি ও তথাকথিত জ্ঞানপাপিরা দেশের প্রথিতযশা সংবাদমাধ্যমগুলোর বিরুদ্ধে চালাচ্ছে পরিকল্পিত অপপ্রচার। মূলত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম—বিশেষ করে ফেসবুককে কেন্দ্র করেই ছড়ানো হচ্ছে কুরুচিপূর্ণ ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত বার্তা।
অপপ্রচারের কৌশল:
এই গোষ্ঠী দেশের শীর্ষস্থানীয় কিছু পত্রিকাকে লক্ষ্য করে চালাচ্ছে নিচের ষড়যন্ত্রগুলো—
-
পত্রিকার সম্পাদক ও সাংবাদিকদের ব্যক্তিগত ছবি ও সম্পর্ককে টেনে এনে হেয় করার অপচেষ্টা
-
দায়িত্বশীল গণমাধ্যমকে রাজনৈতিক দলের ‘মুখপত্র’ বা ‘দালাল’ হিসেবে উপস্থাপন
-
সরকারি পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে সংবাদপত্রের অবস্থানকে বিতর্কিত করে তোলার চেষ্টা
-
সামাজিক মাধ্যমে জাল ফটোকার্ড তৈরি করে ছড়ানো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত শিরোনাম
সাংবাদিক সমাজের প্রতিক্রিয়া:
পটুয়াখালীতে কর্মরত এক প্রবীণ সাংবাদিক বলেন, “আমি বাংলা বিভাগের ছাত্র ছিলাম। রাষ্ট্রীয় গুরুত্বপূর্ণ কয়েকজন ব্যক্তির সাথে পড়াশোনা করেছি, অনেকের সাথে ছবি আছে। এখন তো দেখছি, সেই পুরনো ছবিগুলো ঘেঁটে আমাকে স্বৈরাচারের দোসর বানানো হচ্ছে! সাংবাদিকতা কোনো পক্ষ নয়, এটি দায়িত্ব।”
তিনি আরও বলেন, “সাংবাদিকদের কাজ সরকার যেই থাকুক না কেন, মানুষের পাশে থাকা। ব্যক্তিগত সম্পর্কের ওপর সাংবাদিকতার মান নির্ধারণ হয় না। যাঁরা এখন সাংবাদিকদের চরিত্রহননের অপচেষ্টা চালাচ্ছেন, তাঁরা সত্যিকার অর্থেই সমাজের জন্য বিপজ্জনক।”
দুর্বৃত্তায়নের পদ্ধতি:
এই অপতৎপরতাগুলো মূলত নিচের উপায়ে চালানো হচ্ছে—
১. ফটোকার্ড জালিয়াতি: নামী সংবাদপত্রের আসল ফটোকার্ড হুবহু নকল করে তাতে মিথ্যা ও বিকৃত বার্তা বসানো।
২. ব্যক্তিগত আক্রমণ: ১৫-২০ বছর আগের সম্পর্ক, আড্ডার ছবি তুলে এনে সাংবাদিকদের রাজনৈতিক রঙে রাঙানোর চেষ্টা।
৩. মিডিয়া হাইজ্যাকিং: পত্রিকাগুলোকে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন দলের ‘মুখপত্র’ হিসেবে চিহ্নিত করার ষড়যন্ত্র।
৪. ধারাবাহিক অপপ্রচার: দায়িত্বশীল সংবাদমাধ্যমকে ‘অমুকের দালাল’, ‘তমুকের দোসর’ আখ্যায় জনমনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা।
আইন প্রয়োগকারী সংস্থার অবস্থান:
পটুয়াখালীর সিআইডির একজন কর্মকর্তা বলেন, “দেশে অনেক তথাকথিত সংবাদপত্র আছে, যেগুলোর মূল উদ্দেশ্য সাংবাদিকতা নয়—বরং সুবিধা আদায়। এরা মিথ্যা গল্প ছাপিয়ে সমাজে বিশৃঙ্খলা ছড়ায়।” তিনি আরও জানান, “সংবাদপত্র নিয়ন্ত্রণের আইন থাকলেও এর প্রয়োগ দুর্বল। রাষ্ট্রের উচিত এসব অপসাংবাদিকতাকারীদের জবাবদিহির আওতায় আনা।”
সমাধানের পথ:
১. কঠোর আইনি ব্যবস্থা: জালিয়াতি ও অপপ্রচারে জড়িতদের শনাক্ত করে দ্রুত বিচার নিশ্চিত করতে হবে।
২. মিডিয়া সাক্ষরতা: পাঠকদের মধ্যে সচেতনতা গড়ে তুলে মিথ্যা সংবাদ চিহ্নিত করার সক্ষমতা বাড়াতে হবে।
৩. সংবাদপত্রের স্বচ্ছতা: সংবাদ প্রকাশ ও ফটোকার্ড ব্যবহারে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ: ফেসবুকসহ অন্যান্য মাধ্যমে ভুয়া সংবাদ প্রতিরোধে প্রযুক্তিগত ব্যবস্থা গ্রহণ জরুরি।
সংবাদপত্র নিয়ে এই দুর্বৃত্তায়ন সাংবাদিকতা ও গণমাধ্যমের স্বাধীনতার জন্য একটি ভয়াবহ হুমকি। শুধু পেশা নয়, এটি একটি দায়িত্ব ও নৈতিকতা। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে রাষ্ট্র, গণমাধ্যম, পাঠক এবং সামাজিক মাধ্যম সকলকে এগিয়ে আসতে হবে। যেকোনো সংবাদ শেয়ার করার আগে তার উৎস যাচাই করা এখন সময়ের দাবি।
মিমিয়া