ছবি: সংগৃহীত।
‘ডুমসডে ফিশ’ বা কেয়ামত মাছ নামে খ্যাত গভীর সমুদ্রের রহস্যময় প্রাণী ওরফিশ ধরা পড়েছে ভারতের তামিলনাড়ু উপকূলে। ৩০ ফুট লম্বা ও ইস্পাতের চাবুকের মতো দেখতে মাছটি স্থানীয় জেলেদের জালে ধরা পড়লে উপকূলীয় এলাকায় আলোড়ন শুরু হয়। কারণ বহু সংস্কৃতিতে এই মাছের আবির্ভাবকে দুর্যোগের অশনি সংকেত হিসেবে দেখা হয়।
সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়, ৩০ মে তামিলনাড়ুর সমুদ্র উপকূলে মাছটি ধরা পড়ে। স্থানীয় জেলেরা মাছটিকে নৌকায় তুলে ভিডিও ধারণ করেন, যা ইতিমধ্যেই সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়ে গেছে। ভিডিওতে দেখা যায়, বিশালাকৃতির মাছটির গায়ে চকচকে ধাতব ঔজ্জ্বল্য, বড় বড় চোখ, এবং লাল রঙের পাখনা স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ওরফিশ সাধারণত সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে প্রায় ১,০০০ মিটার গভীরে বসবাস করে এবং সচরাচর মানুষের চোখে পড়ে না। তবে ভূকম্পন বা টেকটনিক প্লেটের নড়াচড়ার কারণে গভীর সমুদ্রের এই বাসিন্দারা মাঝেমধ্যে উপকূলের দিকে চলে আসে।
জাপানে প্রচলিত লোককাহিনি এবং পৌরাণিক বিশ্বাস অনুযায়ী, এই মাছের উপকূলে উপস্থিতি ভূমিকম্প বা সুনামির পূর্বাভাস হতে পারে। ২০১১ সালে জাপানে সংঘটিত প্রলয়ঙ্করী ভূমিকম্প এবং সুনামির আগের বছর, দেশটির উপকূলে এক ডজনের বেশি ওরফিশ ভেসে আসার ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছিল।
ওশান কনজারভেন্সি এবং অন্যান্য সামুদ্রিক গবেষণা সংস্থার তথ্যমতে, ভূমিকম্পের আগাম কম্পন ও চাপের পরিবর্তন গভীর জলের প্রাণীদের আচরণে প্রভাব ফেলে। কখনও কখনও এই প্রভাব তাদের মৃত্যুর কারণও হতে পারে, যার ফলে তারা উপকূলে ভেসে ওঠে।
তবে বিজ্ঞানীরা এখনো পুরোপুরি নিশ্চিত নন যে, ওরফিশের আবির্ভাব ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যে সরাসরি কোনো বৈজ্ঞানিক সম্পর্ক আছে কিনা। কারণ এই মাছের জীবনধারা, চলাচল এবং আচরণ আজও গবেষণার রহস্যে ঘেরা।
ভারতে এই মাছ ধরা পড়ার পর সামাজিক ও সংবাদমাধ্যমে নতুন করে আলোচনা শুরু হয়েছে—তামিলনাড়ু ও আশেপাশের উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলো কি বড় কোনো ভূকম্পনের ঝুঁকিতে রয়েছে?
যদিও কোনো সরকারি সতর্কতা এখনো জারি হয়নি, তবে বিশেষজ্ঞরা জনগণকে গুজবে কান না দিয়ে প্রাকৃতিক দুর্যোগ সংক্রান্ত তথ্য সরকারি সূত্র থেকে গ্রহণ করার পরামর্শ দিয়েছেন।
নুসরাত
