ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৭ জুন ২০২৫, ২৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

তাসরিফ লঞ্চের মনগড়া রুট পরিবর্তন, যাত্রীদের চরম ভোগান্তি

প্রকাশিত: ১০:২১, ৬ জুন ২০২৫

তাসরিফ লঞ্চের মনগড়া রুট পরিবর্তন, যাত্রীদের চরম ভোগান্তি

এমভি তাসরিফ লঞ্চ কর্তৃপক্ষ সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে চরম প্রতারণা করেছে বলে দাবি যাত্রীদের । সারারাত যাত্রীদের অপেক্ষায় রেখে তাসরিফ-১ লঞ্চটি সকালে অন্য রুটে চলে যায়। তাসরিফ-১ লঞ্চটি ৫ তারিখ (বৃহস্পতিবার) বিকেল সাড়ে ৬টায় ঢাকা থেকে মনপুরা ও হাতিয়ার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসার কথা ছিল। সেই লক্ষ্যে দূরদূরান্ত থেকে সদরঘাটে এসে হাজির হন কয়েকশ যাত্রী। কিন্তু যথাসময়ে ঘাটে যায়নি লঞ্চটি। পরে রাতে একবার ঘোষণা দেওয়া হয়—লঞ্চটি আজ শুক্রবার সকালে ছেড়ে আসবে। সেই আশায় যাত্রীরা টার্মিনালে সারারাত কাটান। কিন্তু ভোরে আবার সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে ঘোষণা দেওয়া হয়—লঞ্চটি অন্য রুট 'চরফ্যাশনে' যাবে। ফলে সারারাত অপেক্ষায় থেকেও ঈদের আগের দিন বাড়ি ফেরা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে মনপুরা-হাতিয়া রুটের কয়েক শতাধিক মানুষের।

এ বিষয়ে বিআইডব্লিউটিএ ও নৌ পুলিশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের অবহিত করেও কোনো প্রতিকার পাননি সাধারণ যাত্রীরা।

ভুক্তভোগী যাত্রীরা বলছেন, এবারই প্রথম নয়; এর আগে বহুবার এমন করেছে তাসরিফ লঞ্চ কর্তৃপক্ষ। রুট পারমিট পাওয়ার পর থেকে যাত্রীদের নানাভাবে হয়রানি করে আসছে লঞ্চের স্টাফসহ সংশ্লিষ্টরা।

আশুলিয়া থেকে আগত রানা জানান, তিনি সপ্তাহ দুয়েক আগে কেবিন বুকিং দেন। তখন লঞ্চটির মতিঝিল অফিস এবং তাসরিফ-১ এর কেবিন সুপারভাইজার আরিফ তালুকদার বলেন, সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় লঞ্চ ছাড়বে। তবুও ঈদের মুহূর্ত হওয়ায় তিনি দুই শিশু সন্তান ও স্ত্রীসহ ৩টায় ঘাটে এসে অপেক্ষা করতে থাকেন। লঞ্চের অবস্থান জানতে কল করলেও নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। এভাবে রাত ৮টা পর্যন্ত তিনি ও আরও কয়েক শ' যাত্রী অপেক্ষা করেন। তখনো লঞ্চটি ঘাটে আসেনি। রাত সাড়ে ৮টায় কেবিন সুপারভাইজার আরিফ তালুকদারের নাম্বার খোলা পাওয়া যায়। তখন তিনি জানান, আজ শুক্রবার সকালে লঞ্চটি ছেড়ে যাবে। এমন সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেও কোনো লাভ হয়নি।

রানা বলেন, তিনি সহ কয়েকজন বিষয়টি উপস্থিত বিআইডব্লিউটিএ কর্মকর্তাদের জানিয়েছেন। কিন্তু কোনো লাভ হয়নি। লঞ্চটি রাতেও ঘাটে আসেনি, ফলে তারা লঞ্চে উঠে ঘুমাতেও পারেননি। তাই টার্মিনালেই রাত কাটে সবার। কিন্তু দুঃখজনকভাবে ভোর হলে কেবিন সুপারভাইজার আরিফ ও লঞ্চ সুপারভাইজার জামাল জানান, লঞ্চটি মনপুরা-হাতিয়া যাবে না; বরং চরফ্যাশন-বেতুয়া যাবে। এমন ঘোষণায় উপস্থিত যাত্রীদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ে। ঈদের মাত্র কয়েক ঘণ্টা আগে কয়েক শত যাত্রীকে এমন ভোগান্তিতে ফেলেছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ।

সোলাইমান নামের আরেক যাত্রী জানান, গত ঈদেও লঞ্চটি এমন করেছে। তজুমদ্দিন পর্যন্ত যাত্রীদের নামিয়ে দিয়েছে। এতে মনপুরা ও হাতিয়ার যাত্রীরা চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন। এবারও একই ঘটনা ঘটিয়েছে তাসরিফ।

কয়েকজন নারী যাত্রী জানান, তারা গার্মেন্টস কর্মী। গাজীপুর থেকে তাড়াহুড়ো করে যানজট পেরিয়ে ঘাটে পৌঁছেছেন। রাত ৯টার পর একটি ফারহান লঞ্চ ছেড়ে যায়। তখন তারা অনেকে সেই লঞ্চে উঠতে পারেননি। সকালে তাসরিফ-১ লঞ্চ ঘাটে আসে। কিন্তু তখন হঠাৎ করে জানানো হয়—লঞ্চটি মনপুরায় যাবে না।

বেশ কয়েকজন যাত্রী রাতে নৌ পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করেন। নৌ পুলিশ বিআইডব্লিউটিএ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলবে বলে জানায়।

যাত্রীদের অভিযোগের বিষয়ে বৃহস্পতিবার রাতে জানতে চাইলে তাসরিফ-১ এর কর্মকর্তা আরিফ তালুকদার এই প্রতিবেদককে বলেন, তারা যাত্রী নামিয়ে দিয়ে ঢাকায় ফিরছেন। যেতে একটু দেরি হবে। কিন্তু সকালে যাত্রীদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তার কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, লঞ্চটি চরফ্যাশন যাবে। এটা মাইকে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এরপর তিনি ফোন সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।

একাধিক যাত্রীর অভিযোগ, তাসরিফ লঞ্চ সরকারি সংস্থাকেও পাত্তা দেয় না। নৌপথে চলাচলের ক্ষেত্রে ব্যাপক রাজনৈতিক প্রভাব খাটায় এই লঞ্চটি।

বিষয়টি নজরে এনে বিআইডব্লিউটিএ'র যুগ্ম পরিচালক (ট্রাফিক) মো. মোবারককে জানতে চাইলে তিনি বলেন, রাত ৮টার দিকে নৌ পুলিশের পক্ষ থেকে তাকে অবহিত করা হয়। তখন তাসরিফ-১ এর কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাওয়া হলে তারা জানান, লঞ্চের ইঞ্জিনে সমস্যা দেখা দিয়েছে, তাই যেতে পারবে না। তাই রাতেই ফারহান লঞ্চ ছাড়তে বলা হয়, তখন অনেকে ওই লঞ্চে গন্তব্যে পৌঁছেছেন।

কিন্তু মিথ্যা ঘোষণা দিয়ে যাত্রীদের সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করিয়ে শেষে রুট পরিবর্তন করে তাসরিফ—এ বিষয়ে তিনি বলেন, চাইলে তো লঞ্চের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া যায়। হয়তো তা হবেও। তবে এতগুলো লোক যে টার্মিনালে কষ্টে রাত কাটিয়েছে, তারা কেউ আমাদের কাছে আসেনি। আমরা মাইকিংও করেছি। এটা আমাদের জানানো উচিত ছিল। তবুও বিষয়টি তিনি দেখবেন বলে জানান।

সানজানা

×