
বড় কোনো উৎসব – ঈদ, পূজা, কিংবা জন্মদিন – এমন দিনে যেখানে সবাই পছন্দের খাবারে আনন্দ খুঁজে পান, কিছু মানুষ দেখা যায় সেই খাবার থেকে নিজেকে দূরে রাখেন শুধুমাত্র ওজন বাড়ার ভয়ে। অনেকেই একে স্বাস্থ্যসচেতনতা হিসেবে দেখেন। কিন্তু বাস্তবতা হলো, এই প্রবণতা অনেক সময় একটি মানসিক রোগের লক্ষণ হতে পারে। এই মানসিক রোগটির নাম এনোরেক্সিয়া নার্ভোসা।
এনোরেক্সিয়া নার্ভোসা কী?
এনোরেক্সিয়া নার্ভোসা একটি ইটিং ডিজঅর্ডার বা খাদ্যজনিত মানসিক ব্যাধি, যেখানে আক্রান্ত ব্যক্তি নিজেকে মোটা ভাবেন এবং সেই মোটা হওয়ার ভয়েই স্বাভাবিক খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকেন। তারা নিজেদের শরীরের গঠন নিয়ে অতিমাত্রায় উদ্বিগ্ন থাকেন এবং শরীরের ওজন কমানোর জন্য কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেন।
লক্ষণসমূহ
১. খাবার গ্রহণে অস্বাভাবিক নিয়ন্ত্রণ:
এমন ব্যক্তি দৈনিক প্রয়োজনীয় ক্যালোরির চাইতেও অনেক কম খাবার খান। তাদের লক্ষ্য থাকে কেবল ওজন কমানো। এরা অনেক পুষ্টিকর খাবার থেকেও বিরত থাকেন।
২. খেয়ে ফেলার পর ইচ্ছাকৃতভাবে বমি করা:
কোনো উৎসবে বা সামাজিক চাপে অতিরিক্ত খাবার খেলে তারা অপরাধবোধে ভোগেন এবং সেই খাবার বমি করে শরীর থেকে বের করার চেষ্টা করেন।
৩. ওজন ও শরীর নিয়ে অতিমাত্রায় চিন্তা:
এরা প্রতিদিন একাধিকবার ওজন মাপেন এবং আয়নায় নিজেদের বারবার পরীক্ষা করেন। আত্মসমালোচনা তাদের জীবনের অংশ হয়ে ওঠে।
৪. সামাজিক দূরত্ব ও আত্মঘৃণা:
উৎসব, দাওয়াত এড়িয়ে চলা, অন্যকে ‘অস্বাস্থ্যকর’ খাবার খাওয়ার জন্য অপমান করা, নিজের শরীরকে ঘৃণা করা এসবও এনোরেক্সিয়ার লক্ষণ হতে পারে।
একদিন হেলদি খাবার খেয়ে যেমন আপনি হঠাৎ স্বাস্থ্যবান হবেন না, তেমন একদিন একটু বেশি বা আনহেলদি খাওয়া আপনাকে অস্বাস্থ্যকর করে তুলবে না। স্বাস্থ্যসচেতনতার আসল অর্থ হলো সারাবছর একটি সুষম ডায়েট মেনে চলা এবং মাঝে মাঝে উৎসবে অংশ নিয়ে মানসিক প্রশান্তিও পাওয়া।
যদি আপনি বা আপনার আশেপাশের কেউ খাদ্য গ্রহণের ক্ষেত্রে অতিরিক্ত নিয়ন্ত্রণে চলে যান, উৎসব এড়িয়ে চলেন, ওজন কমানো নিয়ে অতিমাত্রায় চিন্তিত থাকেন – তাহলে সেটা গর্বের বিষয় নয়, বরং সচেতন হওয়ার সময়। এনোরেক্সিয়া নার্ভোসা একটি গুরুতর মানসিক সমস্যা, যার সঠিক সময়ে চিকিৎসা না হলে তা মারাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে। শরীরের পাশাপাশি মানসিক স্বাস্থ্যও সমান গুরুত্বপূর্ণ।
সানজানা