আমাদের অনেকেরই এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে, যখন পছন্দের খাবারও একেবারে অস্বস্তি বা বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এমনকি, প্লেটে খাবার দেখলেই খেতে ইচ্ছে করে না এবং খুব অল্প কিছু মানুষই আছেন যারা এই অভিজ্ঞতা থেকে মুক্ত। বিশেষজ্ঞদের মতে, খাবারের প্রতি এই বিরক্তি বা বিতৃষ্ণার অনুভূতিকে বলা হয় ‘ফুড ইক’ । এটি একটি মানসিক অবস্থার নাম, যা খেতে বসার পর হঠাৎ কোনো কারণে খাবারের প্রতি বিরক্তি বা অস্বস্তি অনুভূতি সৃষ্টি করে।
‘ফুড ইক’ কী?
‘ফুড ইক’ এমন একটি মানসিক অবস্থা, যখন খাওয়ার প্রতি ইচ্ছা হঠাৎ করে চলে যায়। সাধারণত, এটা তখন ঘটে যখন খাবারের গন্ধ, চেহারা, বা অনুভূতি আপনার মনোভাবের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ না থাকে। অনেক সময় এমনটা হয়, যে খাবারটি আপনি আগে পছন্দ করতেন, সেটি এখন খেতে একেবারে অস্বস্তিকর হয়ে ওঠে। এই অনুভূতি কখনোই স্থায়ী না হলেও, মাঝে মাঝে এটি আপনার খাওয়ার অভ্যাসের উপর প্রভাব ফেলতে পারে।
‘ফুড ইক’ হওয়ার কারণ:
মনস্তাত্ত্বিক চাপ ও উদ্বেগ:
একাধিক মনস্তাত্ত্বিক কারণ, যেমন অতিরিক্ত চাপ, উদ্বেগ বা দুশ্চিন্তা, খাবারের প্রতি বিরক্তি তৈরি করতে পারে। যখন কেউ মানসিক চাপের মধ্যে থাকে, তখন খাবারও তার কাছে কম আকর্ষণীয় হয়ে উঠতে পারে।
অতিরিক্ত খাবারের প্রতি অভ্যস্ততা:
একই ধরনের খাবার বারবার খাওয়ার ফলে একসময় মানুষের মনোযোগ এবং আকর্ষণ হারিয়ে যায়। এর ফলে খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যায় এবং ‘ফুড ইক’ তৈরি হতে পারে।
হরমোনাল পরিবর্তন:
বিশেষজ্ঞরা বলেন, শরীরে হরমোনের পরিবর্তন যেমন গর্ভাবস্থা, মাসিক চক্র বা থাইরয়েডের সমস্যা, খাবারের প্রতি অদ্ভুত অনুভূতির কারণ হতে পারে। এই পরিবর্তনগুলি খাবারের প্রতি অস্বস্তি বা বিরক্তি সৃষ্টি করতে পারে।
খাবারের গন্ধ বা রঙের কারণে বিরক্তি:
একাধিক ক্ষেত্রে খাবারের গন্ধ বা রঙের কারণে মানুষ খাবারের প্রতি অস্বস্তি অনুভব করে। বিশেষত, কোনো এক নির্দিষ্ট খাবারের গন্ধ বা রঙ যদি অদ্ভুত বা পছন্দের না হয়, তবে তা ‘ফুড ইক’ সৃষ্টি করতে পারে।
দীর্ঘসময় খাবারের প্রতি আগ্রহ হারানো:
অনেক সময় খাবারের প্রতি আগ্রহ কমে যাওয়ার কারণ হতে পারে দীর্ঘসময় একধরনের খাবার খাওয়ার অভ্যাস। একঘেয়েমি এবং পুনরাবৃত্তি ‘ফুড ইক’-এর অন্যতম কারণ হতে পারে।
‘ফুড ইক’ কাটানোর উপায়:
নতুন খাবার চেখে দেখা:
একঘেয়েমি কাটানোর জন্য নতুন নতুন খাবার ট্রাই করুন। অন্য ধরনের রেসিপি বা খাদ্যাভ্যাস আপনার পছন্দের খাবারে আগ্রহ ফিরিয়ে আনতে পারে।
আত্মবিশ্বাস এবং মানসিক সুস্থতা বজায় রাখা:
মানসিক চাপ কমানোর জন্য পর্যাপ্ত বিশ্রাম এবং প্রিয় কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করুন। যোগব্যায়াম বা ধ্যান আপনার মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করবে এবং খাওয়ার প্রতি আগ্রহ ফিরিয়ে আনতে পারে।
খাবারের পরিবেশ পরিবর্তন:
খাবারের পরিবেশে কিছু পরিবর্তন আনতে পারেন। একটি নতুন স্থান বা খাবার পরিবেশে বসে খাওয়া খাবারের প্রতি আগ্রহ তৈরি করতে পারে।
ধীরে ধীরে খাবার গ্রহণ করা:
খাবার খাওয়ার সময় তাড়াহুড়া না করে ধীরে ধীরে খাবার গ্রহণ করুন। এভাবে আপনি খাবারের প্রতি আগ্রহ পুনরায় ফিরে পেতে পারেন।
পুষ্টিকর খাবারের প্রতি মনোযোগ দেওয়া:
একবার খাওয়ার জন্য পুষ্টিকর খাবার বেছে নিন। স্বাস্থ্যকর খাবার খেলে শরীর এবং মন দুটোই সুস্থ থাকবে, এবং খাবারের প্রতি আগ্রহ ফিরে আসবে।
‘ফুড ইক’ একটি সাধারণ বিষয় হলেও, যদি এটি দীর্ঘসময় ধরে চলতে থাকে, তবে কোনো বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া উচিত। আপনার খাবারের প্রতি আগ্রহ এবং সুস্থতা ফিরে পাওয়ার জন্য স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গড়ে তোলা জরুরি।
রাজু
