
ছবি: সংগৃহীত
ঈদুল আজহার নামাজের সুন্নত ও আমলের তাৎপর্য: এক তাকওয়া ও ত্যাগের দিন
ঈদুল আজহা, যা 'ইয়াওমুন নাহার' বা কোরবানির দিন নামেও পরিচিত, ইসলামের এক মহান ও মর্যাদাপূর্ণ দিন। কুরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে এই দিনের গুরুত্ব অপরিসীম। ঈদের আনন্দ উপভোগের পাশাপাশি, এই দিনে কিছু মুস্তাহাব (পছন্দনীয় ও উত্তম) ও সুন্নাত আমল রয়েছে, যা পালন করা আল্লাহর নিকট অত্যন্ত পছন্দনীয় এবং এর মাধ্যমে একজন মুমিন আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারে।
ঈদের দিনের প্রস্তুতি ও সুন্নাত আমলসমূহ
রাসূলুল্লাহ (সা.) ও সাহাবায়ে কেরাম ঈদের দিনে বিশেষ কিছু আমল পালন করতেন, যা আমাদের জন্য অনুসরণীয়:
- গোসল ও পরিচ্ছন্নতা: ঈদের দিন সকালে খুব ভোরে ঘুম থেকে উঠে গোসল করা সুন্নাত। হাদিসে এসেছে: “ঈদের দিন রাসূল (সা.) নতুন বা পরিষ্কার কাপড় পরতেন এবং আতর ব্যবহার করতেন” (তিরমিজি)। নিজেকে পরিচ্ছন্ন ও সুগন্ধিতে সুসজ্জিত করা এই দিনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ আমল।
- খাবারের আদব: ঈদুল ফিতরের দিন ঈদগাহে যাওয়ার আগে মিষ্টান্ন খেয়ে যাওয়া সুন্নাত হলেও, ঈদুল আজহার দিনে কোরবানির মাংস খাওয়ার আগে কিছু না খাওয়াই সুন্নাত। রাসূল (সা.) কোরবানির পর প্রথমে কোরবানির মাংস খেতেন।
তাকবির ও ঈদগাহে যাওয়ার আদব
-
তাকবিরে তাশরিক: ঈদুল আজহার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ সুন্নাত হলো তাকবিরে তাশরিক বলা। এই তাকবিরটি হলো: اللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، لاَ إِلَهَ إِلاَّ اللَّهُ، وَاللَّهُ أَكْبَرُ، اللَّهُ أَكْبَرُ، وَلِلَّهِ الْحَمْدُ (আল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ, ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার, ওয়ালিল্লাহিল হামদ।) এটি ঈদের ফজরের নামাজ থেকে শুরু করে তাশরীকের শেষ দিন অর্থাৎ ১৩ জিলহজের আসরের নামাজ পর্যন্ত প্রত্যেক ফরজ নামাজের পরে বলা সুন্নাত।
-
ঈদগাহে যাওয়া: ঈদের নামাজের জন্য মসজিদের পরিবর্তে খোলা মাঠ বা ঈদগাহে যাওয়া সুন্নাত। এতে মুসলিম সমাজের ঐক্য ও ভ্রাতৃত্বের পরিচয় প্রকাশ পায়। রাসূল (সা.) মদীনায় ঈদের নামাজ ঈদগাহে আদায় করতেন। যারা হাঁটতে সক্ষম, তাদের জন্য হেঁটে ঈদগাহে যাওয়াই উত্তম। ঈদগাহে যাওয়ার সময় এবং ফিরে আসার সময় ভিন্ন রাস্তা ব্যবহার করাও রাসূল (সা.)-এর একটি প্রিয় আমল ছিল।
ইবাদতের পূর্ণতা আনয়নে অতিরিক্ত সুন্নাত
- নামাজের সময়: ঈদের দিন দেরিতে ফজর নামাজ পড়া এবং ঈদুল আজহার নামাজ একটু তাড়াতাড়ি পড়া রাসূল (সা.)-এর আমল।
- খুতবা শোনা: ঈদুল আজহার নামাজ শেষে খুতবা শোনাও সুন্নাত এবং এটি গুরুত্বের সঙ্গে পালন করা উচিত। অনেকে নামাজ শেষে খুতবা না শুনেই চলে যান, যা একটি ভুল অভ্যাস।
- কোরবানি: কোরবানির জন্য পশু নিজ হাতে জবাই করা বা যদি সক্ষম না হন তবে জবাইয়ের সময় পাশে থাকা সুন্নাত।
মুসলিম সমাজে সুন্নতের এই শিক্ষাগুলোর প্রচার ও চর্চা করা অত্যন্ত জরুরি, যাতে মানুষ কেবল ঈদকে উৎসব মনে না করে বরং তা যেন আল্লাহর নৈকট্য লাভের একটি ইবাদত হিসেবে গ্রহণ করে। ঈদুল আজহার নামাজের সুন্নতসমূহ পালনের মাধ্যমে একজন মুসলমান যেমন আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভ করতে পারেন, তেমনি ইসলামী ঐতিহ্যের একটি সুন্দর চিত্র তুলে ধরেন সমাজে।
প্রায়শই জিজ্ঞাসিত প্রশ্ন (FAQs)
-
ঈদুল আজহার সকালে কি কিছু খাওয়া উচিত? না, কোরবানির আগে কিছু না খাওয়াই সুন্নাত। কোরবানির পর মাংস খাওয়া উত্তম।
-
ঈদগাহে হেঁটে যাওয়া কি বাধ্যতামূলক? না, বাধ্যতামূলক নয়, তবে হেঁটে যাওয়াই সুন্নাত ও ফজিলতপূর্ণ।
-
তাকবির কখন থেকে শুরু করতে হয়? ঈদের ফজরের নামাজ থেকে শুরু করে ১৩ জিলহজের আসরের নামাজ পর্যন্ত তাকবির বলা সুন্নাত।
-
ঈদের নামাজের খুতবা কি শুনতে হবে? হ্যাঁ, খুতবা শোনা সুন্নাত এবং এর গুরুত্ব অনেক বেশি।
-
ঈদের দিনে গোসল ও সুগন্ধি ব্যবহার কি সুন্নাত? জি হ্যাঁ, ঈদের দিন গোসল করা ও আতর ব্যবহার করা সুন্নাত।
সাব্বির