
ছবি: সংগৃহীত
মহাগ্রন্থ আল কোরআনের সূরা হজ্জের ৩৬ ও ৩৭ নম্বর আয়াতে কোরবানির পশু সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা এরশাদ করেন:
“আর কুরবানির উটকে আমি তোমাদের জন্য আল্লাহর অন্যতম নিদর্শন বানিয়েছি। তোমাদের জন্য এতে রয়েছে কল্যাণ। সুতরাং সারিবদ্ধভাবে দাঁড় করিয়ে আল্লাহর নাম উচ্চারণ করো যখন সেগুলো কাত হয়ে পড়ে যায়। তখন তা থেকে খাও এবং যারা হাত পাতে না ও যারা অভাবের কারণে চেয়ে বেড়ায়, তাদের খাওয়াও। এভাবেই আমি ওগুলিকে তোমাদের অনুগত করে দিয়েছি, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো। আল্লাহর কাছে ওগুলোর গোশত বা রক্ত পৌঁছে না, বরং পৌঁছে তোমাদের তাকওয়া।” (সূরা হজ্জ: ৩৬-৩৭)
এই আয়াতের আলোকে প্রতিবছর ঈদুল আযহায় মুসলিম বিশ্বে কুরবানির মাধ্যমে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের চেষ্টা করা হয়। বাংলাদেশে ঈদের দিন ও তার পরবর্তী কয়েকদিন প্রতিটি পরিবারেই গরু বা খাসির মাংস দিয়ে তৈরি হয় নানা সুস্বাদু খাবার। গরুর মাংসের গন্ধ, স্বাদ ও রান্নার বৈচিত্র্য আমাদের রোজকার আহারের তালিকায় ঈদের সময় বিশেষ স্থান দখল করে নেয়।
তবে এই লোভনীয় মাংস খাওয়ার পেছনে রয়েছে কিছু গুরুত্বপূর্ণ স্বাস্থ্যগত সতর্কতা। চিকিৎসকরা বলছেন—যথাযথ সচেতনতা ছাড়া অতিরিক্ত রেডমিট বা লাল মাংস খাওয়া শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হতে পারে।
গরুর মাংসের উপকারিতা
গরুর মাংস হল একটি উচ্চ প্রোটিনসমৃদ্ধ খাবার যা আমাদের শরীরের কোষ গঠন, শক্তি উৎপাদন ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এতে রয়েছে:
- প্রোটিন
- আয়রন
- জিংক
- ভিটামিন B12
- প্রাকৃতিক কোলাজেন
এসব উপাদান রক্ত সঞ্চালন, হাড়ের গঠন, হরমোন উৎপাদন, মস্তিষ্কের কার্যকারিতা ও রোগ প্রতিরোধে সহায়ক।
কী ঝুঁকি তৈরি করে অতিরিক্ত রেডমিট?
তবে অতিরিক্ত গরু বা খাসির মাংস খাওয়া আমাদের দেহে নানা রোগের জন্ম দিতে পারে। যেমন:
কোষ্ঠকাঠিন্য: অতিরিক্ত লাল মাংস হজমে সমস্যা তৈরি করে।
ক্যান্সারের ঝুঁকি: স্তন, কোলন, বৃহদন্ত্র ও প্রোস্টেট ক্যান্সারের সম্ভাবনা বাড়ে।
হৃদরোগ ও স্ট্রোক: গবেষণায় দেখা গেছে, প্রতিদিন ১০০ গ্রাম এর বেশি গরুর মাংস খেলে:
- হৃদরোগে মৃত্যুর আশঙ্কা ১৫% বাড়ে
- স্ট্রোকের ঝুঁকি ১১% বাড়ে
- ডায়াবেটিস ও কিডনি সমস্যা: হারভার্ড ইউনিভার্সিটির গবেষণায় দেখা যায়, দিনে ৫০ গ্রাম অতিরিক্ত লাল মাংস খেলে ডায়াবেটিস ও হৃদরোগের ঝুঁকি ৪২% বাড়ে।
কতটুকু খাওয়া নিরাপদ?
চিকিৎসকদের মতে, গরুর মাংস খাওয়ার নিরাপদ পরিমাণ নির্ভর করে ব্যক্তির বয়স, স্বাস্থ্য ও জীবনধারার উপর। সাধারণভাবে:
- দৈনিক: ১২০–১৫০ গ্রাম
- সাপ্তাহিক: সর্বোচ্চ ৩–৪ বার
যাদের ডায়াবেটিস, হৃদরোগ বা উচ্চ কোলেস্টেরল রয়েছে, তাদের জন্য পরিমাণ আরও কমিয়ে খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়।
সতর্কতা যেগুলো মেনে চলা জরুরি
- ১. চর্বি বাদ দিয়ে খান: ওজন বেশি, ফ্যাটি লিভার বা উচ্চ কোলেস্টেরল থাকলে অবশ্যই চর্বি পরিহার করুন।
- ২. কোমল পানীয় এড়িয়ে চলুন: ফসফরাস ও সোডিয়ামের কারণে উচ্চ রক্তচাপ বাড়তে পারে।
- ৩. চা/কফি খাবেন না খাওয়ার পরপর: এতে আয়রন শোষণ বাধাগ্রস্ত হয়।
- ৪. সাথে সালাদ খান: বোরহানি, দই, ক্যাপসিকাম, টমেটো ইত্যাদি হজমে সহায়তা করে।
- ৫. কুসুম গরম পানি পান করুন: এটি হজম প্রক্রিয়া দ্রুত করে।
- ৬. সবজি মেশান: শুধুমাত্র মাংস রান্নার চেয়ে মিশ্রিত রান্না হজমে সাহায্য করে।
ঈদুল আযহা শুধুই খাওয়ার উৎসব নয়, এটি তাকওয়া, ত্যাগ ও সংযমের শিক্ষা দেয়। মহান আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে কোরবানিকৃত পশুর মাংস আমাদের জীবনে খুশি বয়ে আনে ঠিকই, কিন্তু সেই খুশি যেন স্বাস্থ্যহানির কারণ না হয়—সেদিকে খেয়াল রাখা প্রত্যেকের দায়িত্ব।
মহান আল্লাহ তাআলা আমাদের সবার কোরবানী কবুল করুন, আমাদের সুস্থ রাখুন এবং সচেতনতা অবলম্বনের তাওফিক দিন। আমিন।
ফরিদ