
মাওলানা হাবিবুর রহমান মিসবাহ এক হৃদয়ছোঁয়া অভিজ্ঞতা তুলে ধরেছেন কোরবানির পেছনে লুকিয়ে থাকা ত্যাগ, মায়া ও অনুভবের গভীর বার্তা নিয়ে। তার মতে, কোরবানি শুধু পশু জবাই নয়—এটি এক আত্মিক সংযোগ ছিন্ন করার নির্মম বাস্তবতা, যা প্রতিটি ঈমানদারকে ভাবায়, কাঁদায়।
তিনি বলেন, “নিজের পালিত গরু, ছাগল বা মহিষ কোরবানি দিন। লালন-পালনের ব্যাবস্থা না থাকলে অন্তত এক সপ্তাহ আগে কিনুন। এরপর নিজে খাওয়ান, গোসল করান, মাথায়-পিঠে হাত বুলিয়ে আদর করুন। দেখবেন ঐ গরুটির প্রতি কতটা মায়া জন্মে। কোরবানির সময় কলিজাটা ছিঁড়ে যাবার উপক্রম হবে। যখন দাপাদাপি করে শোয়াবেন আর পশুটি গোঙাবে বা জোরে ডাক দেবে, মনে হবে আপনার কলিজায় গিয়ে লাগছে।”
মাওলানা মিসবাহ আরও বলেন, “আপনারাও চিৎকার দিয়ে বলবেন, ‘আস্তে ধরো সবাই! ও ব্যথা পাচ্ছে!’ তখন ইব্রাহিম (আ.)-এর কুরবানির সময়কার মর্ম যেকোনো মানুষ অনুভব করতে পারবেন।”
তিনি জানান, গত পাঁচ বছর ধরে তিনি নিজ হাতে পালিত গরু কোরবানি দিচ্ছেন। নামায শেষে গরুর কাছে গেলে গরুটি নিজেই কাছে চলে আসে। গলায় মুখ রাখে, আদর করতেই চোখ থেকে পানি পড়ে। “যদিও পশুর কান্না বা হাসির অনুভূতি নাই, তবুও মনে হয় এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে মালিক চেনার এক অসাধারণ শিক্ষা।”
তার আব্বাও একটি ঘটনার কথা জানিয়ে বলেন, “মহিষটাও কাঁদছে।” এ কথা শুনে আবেগে তিনিও কেঁদে ফেলেন। মাওলানা মিসবাহ বলেন, “সারা বছর যে প্রাণীকে আদর করে বড় করেছি, তার গলায় ছুরি চালানো মানে যেন নিজের সন্তানের গলায় ছুরি চালানো। আল্লাহ আপনি সবার কোরবানি কবুল করুন।”
তিনি আরও এক করুণ ঘটনার স্মৃতি স্মরণ করেন। দু’বছর আগে একটি গরু তাকে এতটাই চিনতো যে ফার্মের সামনে দিয়ে গেলে আদর না করা পর্যন্ত ডাকতেই থাকত। কোরবানির দিন তার কাছে যেতেই গরুটি মাথা ঘুরিয়ে নেয়। রাখাল জানায়, “সকাল থেকে কাঁদছে।” মাওলানা মিসবাহ গরুটিকে বলেন, “আল্লাহর হুকুম বল!” আর তখনই গরুটি শান্ত হয়ে যায়। জবেহ করতেও কষ্ট হয়নি।
তিনি বলেন, হালাল বলে ওর গোশত খেয়েছি। কিন্তু বড় কষ্ট হয়েছিল।
সানজানা