
যখন ঘরে ঘরে কোরবানির আনন্দ, নতুন জামা, সালামি আর আত্মীয়স্বজনের হাসিতে ভরে ওঠে ঈদের দিন, তখনই সমাজের এক কোণে কিছু মানুষ থাকে নিঃসঙ্গ, উপেক্ষিত। ঈদ যাদের কাছে খুশির বার্তা নয়—বরং কেবল আরেকটা কষ্টের দিন। এমন অনেকেই আছেন যারা নিজের ঘরে কোরবানি দিতে পারেন না, বরং অন্যের বাড়ির দরজায় গিয়ে মাংসের জন্য অপেক্ষা করেন।
ঈদের দিনেও অপেক্ষা আর হাহাকার
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বাঞ্ছারামপুর উপজেলার বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেল, একদল মানুষ ব্যাগ হাতে বাড়ি বাড়ি গিয়ে কোরবানির মাংস সংগ্রহ করছেন। কারও চোখে আশা, কারও মুখে হতাশা।
৭০ বছর বয়সী ফাতেমা বেগম বলেন,
“ছেলেমেয়েরা আলাদা হয়ে গেছে। আমি একা থাকি। নিজের কোরবানি তো দূরের কথা, খাওয়ার মতো সামর্থ্যও নাই। তাই সকাল থেকে বিভিন্ন বাসায় গিয়ে একটু মাংস চাইছি।”
একইভাবে মোড়ের একপাশে দাঁড়িয়ে থাকা আব্দুল বাতেন বললেন,
“ভাই, ঈদের দিন শুধু তাকিয়ে থাকি—কে মাংস দেয়। দেইখা লজ্জা লাগে, কিন্তু না গেলে খাই কী?”
পথশিশুদের জন্য ঈদ মানে শুধু চেয়ে থাকা
বাজারে দেখা গেল ৭ বছরের সিফাত নামের এক শিশু ধুলিমাখা পুরনো জামা পরে পথের পাশে বসে আছে। তার চোখে ঈদের নতুন জামার ইচ্ছা, মুখে ক্ষুধার ছাপ।
সিফাত বলল,
“ঈদের দিন মানুষ তাদের বাসা থেকে মাংস দেয়। কারও বাড়ির সামনে দাঁড়ায় থাকি—যদি একটু ডাকে। নতুন জামা তো কপালে নাই, কিন্তু যদি একটু মাংস পাই, ভালো লাগে।”
এবিষয়ে কথা হয় প্রবীণ সাংবাদিক ফয়সল আহমেদ খানের সাথে তিনি বলেন এইসব অবহেলিত মানুষের মুখে ঈদের খুশি পৌঁছে দিতে হলে দরকার হৃদয়ের অংশগ্রহণ। শুধু ক্যামেরার সামনে কয়েক টুকরো মাংস দিয়ে ছবি তোলা নয়—প্রয়োজন সহানুভূতি, সম্মান আর দায়িত্ববোধ।
কোরবানির ঈদ কেবল পশু জবাইয়ের অনুষ্ঠান নয়; এটি আত্মত্যাগ, সহানুভূতি ও বঞ্চিতদের পাশে দাঁড়ানোর শিক্ষা দেয়।
এই ঈদে আসুন, আমরা প্রতিজ্ঞা করি—আমার বাড়ির খাবার ভাগ করে অন্তত একজন অসহায় মানুষকে খুশি করব। এভাবেই ঈদের আনন্দ হোক সকলের জন্য, সমানভাবে ছড়িয়ে পড়ুক।
Jahan