
ছবিঃ জনকণ্ঠ
প্রাচীর পেরিয়ে আসা ঈদের আনন্দ এবারও থেমে থাকেনি কারাগারের ভেতর। দেশের সব কারাগারের মতো ঢাকার কেরানীগঞ্জ কেন্দ্রীয় কারাগারেও ঈদুল আজহার আয়োজনে বইছে উৎসবের হাওয়া। চার দেয়ালের ভেতর থেকেও এই উৎসব বন্দিদের মনে এনে দিয়েছে একটুখানি ঘরের পরশ, একটুখানি স্বস্তি।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের ঈদ আয়োজন যেন হয়ে উঠেছে এক ব্যতিক্রমধর্মী মানবিক উদাহরণ। ঠিকাদারের মাধ্যমে জবাই করা হয়েছে ৮টি গরু ও ১০টি খাসি। সেই মাংস দিয়ে বন্দিদের জন্য রান্না হয়েছে বিশেষ খাবার। কারাগারের ভেতর সকালটা শুরু হয়েছে পায়েস ও মুড়ি দিয়ে, দুপুরে ছিল মুরগির রোস্ট, গরু ও খাসির মাংস, কোমল পানীয়, সালাত, পান-সুপারি ও মিষ্টান্ন। আর রাতের খাবারে ছিল ভাত, মাছ ও আলুর দম। যেন ঈদের প্রতিটি সময় জুড়েই থাকছে একরাশ ভালোবাসা।
কারা কর্মকর্তারা জানান, ঈদের সকালে অনুষ্ঠিত হয়েছে তিনটি জামাত—একটি বন্দিদের জন্য, দুটি কারা স্টাফদের জন্য। কেরানীগঞ্জ কারাগারে ধারণক্ষমতা ৫,৪৯০ হলেও বর্তমানে বন্দি রয়েছেন ৭,৬২৩ জন। এত মানুষের ঈদ আয়োজন স্বাভাবিকভাবেই ছিল একটি বড় চ্যালেঞ্জ। কিন্তু সেটাকে সাফল্যের সঙ্গে সামলে নিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।
বন্দিদের জন্য শুধু খাবারের আয়োজনই নয়, ছিল ঈদের নতুন পোশাকও। ঈদ উপলক্ষে বিতরণ করা হয়েছে ৬০০টি লুঙ্গি ও ৮৫০টি টি-শার্ট। কারাগারের ভেতরে দিনভর ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, কোরআন তেলাওয়াত, কৌতুক, গান, কবিতা ও অভিনয়ের আয়োজন। যেন ঈদের আনন্দটা কিছুক্ষণের জন্য হলেও ছুঁয়ে যায় একেকটা মন খারাপের মানুষকে।
কারা উপ-মহাপরিদর্শক (ডিআইজি প্রিজন্স) মো. জাহাঙ্গীর কবির জানান, ঈদের দিন আরপি গেটে বন্দিদের স্বজনদের মধ্যে উপহার ও স্যুভেনির বিতরণ করা হয়েছে। ঈদের পরদিন ছিল বাহিরের রান্না করা খাবার গ্রহণ ও বিতরণের বিশেষ আয়োজন। আর ঈদের তৃতীয় দিন আয়োজন করা হয়েছে 'প্রিজন ম্যারাথন-২০২৫', যেখানে অংশ নেন কর্মকর্তা, কর্মচারী ও তাদের পরিবার। ছিল ক্রীড়া প্রতিযোগিতা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং পুরস্কার বিতরণ।
এই আয়োজন শুধু একটি ধর্মীয় উৎসব পালন নয়, বরং এক ধরনের আত্মিক পুনর্বাসনেরও অংশ। একটুখানি আনন্দ, একফোঁটা ভালোবাসা ও কিছুটা মানবিক স্পর্শ হয়তো কাউকে ভেতর থেকে বদলে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট। আর সেই চেষ্টার নামই এই ঈদের কারাগার সংস্কৃতি।
জাহাঙ্গীর কবিরের তত্ত্বাবধানে ঢাকা বিভাগের ১৭টি কারাগারেই চলছে এমন আয়োজন—ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার, কাশিমপুরের চারটি কেন্দ্রীয় কারাগারসহ মুন্সিগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, ফরিদপুর, রাজবাড়ী, কিশোরগঞ্জ, মাদারীপুর, টাঙ্গাইলসহ অন্যান্য জেলা কারাগারে।
কারাগারের ঈদ মানে এখন আর শুধু প্রথাগত আনুষ্ঠানিকতা নয়—এটা হয়ে উঠেছে পরিবর্তনের বার্তা, একজন মানুষকে ফের নতুন করে জীবন ভাবার উপলক্ষ।
আলীম