মেয়েরা কি সত্যিই রোমান্টিক ছেলে পছন্দ করে? যা বলছেন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ

বর্তমানে সম্পর্কে রোমান্টিকতা, উপহার কিংবা সারপ্রাইজকে অনেকেই প্রধান বিষয় মনে করলেও, মনোরোগ চিকিৎসক ডা. মুনমুন জাহান মনে করেন, মেয়েরা শেষ পর্যন্ত জীবনসঙ্গী হিসেবে এমন একজনকে খোঁজেন, যিনি তাদের জীবনে প্রকৃত মূল্য সংযোজন করতে পারেন—যিনি দায়িত্ববান, স্থির, এবং চরিত্রে দৃঢ়।

সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক ভিডিও বার্তায় ডা. মুনমুন বলেন, ‘আপনি যদি আপনার জীবনসঙ্গীকে শুধু গিফট, সারপ্রাইজ বা কথার ফুলঝুরি দিয়ে মুগ্ধ রাখতে চান, তাহলে সেটি কিছুদিন ভালো লাগলেও, সেটিই সম্পর্ক ধরে রাখার জন্য যথেষ্ট নয়। মেয়েরা আলটিমেটলি দেখে—এই মানুষটি আমার জীবনে কতটুকু ভ্যালু অ্যাড করছে, কতটুকু দায়িত্ব নিতে পারছে, সে আদৌ একজন মেরুদণ্ড সম্পন্ন মানুষ কি না।’

তিনি আরও বলেন, রোমান্টিসিজম, উপহার—এসব মেয়েরা পছন্দ করে ঠিকই, কিন্তু তা যদি দায়িত্বহীন বা কনটেন্টহীন হয়, তবে সেই সম্পর্ক টেকে না। বরং মেয়েরা বিবাহের মতো বড় সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে অনেক হিসেব করে, অনেক দিক বিবেচনা করে। অন্যদিকে, ছেলেরা এই জায়গায় অনেক সময় আবেগ দিয়ে সিদ্ধান্ত নেয় এবং ভুল করলেও চেষ্টাটা চালিয়ে যায়।

ডা. মুনমুন বলেন, অনেক সময় সমাজে মেয়েদেরই বেশি রোমান্টিক ভাবা হয়, কিন্তু বাস্তবে ছেলেরা অনেক বেশি আবেগী এবং গভীরভাবে রোমান্টিক হয়ে থাকে। ‘ছেলেরা অনেক সময় বোঝে না, হঠাৎ করেই স্ত্রী কেন চুপ হয়ে গেল বা রেগে আছে। অথচ তারা চেষ্টা করে বুঝতে, ধৈর্য ধরে সম্পর্কটা ধরে রাখে,’ বলেন তিনি।

তিনি জানান, মেয়েরা অনেক সময় নিজের পছন্দ-অপছন্দ, চাওয়া-পাওয়া গোপন রাখে এবং চায় পুরুষ নিজে নিজেই তা বুঝে ফেলুক। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এটি সম্পর্কের ওপর চাপ তৈরি করে। ‘আমরা মেয়েরা একটা ফ্যান্টাসির মধ্যে থাকি, যেখানে ভাবি—জীবনসঙ্গী আমাকে প্রিন্সেস ট্রিটমেন্ট দিবে, সব বুঝে নিবে। কিন্তু আমরা কি কখনো ভাবি—সেই পুরুষ মানুষটিও ভালোবাসা, বোঝাপড়া, এমনকি প্যাম্পারিং পেতে চায়?’—প্রশ্ন তোলেন ডা. মুনমুন।

তিনি বলেন, ছেলেরা যখন মেয়েদের ভালোবাসে, তখন তারা অনেকসময় নির্দ্বিধায় জীবনসঙ্গী হিসেবে গ্রহণ করে। কিন্তু মেয়েরা সেই জায়গায় ‘তোমাকে যেরকম, সেভাবেই ভালোবাসি’ বললেও, বাস্তবে অনেক সময় ছেলেকে নিজের মতো করে পরিবর্তন করতে চায়। ফলে ছেলেরা ধীরে ধীরে বুঝে ফেলে, এ ভালোবাসা আসলে শর্তযুক্ত।

‘আমরা ছেলেদেরকে তাদের মতো করে ভালোবাসতে শিখি না। আমরা তাদেরকে পরিবর্তন করতে চাই, সাজাতে চাই, গাইডলাইন দিতে থাকি। অথচ একটা ছেলে শুধু এইটুকু চায়—তাকে যেরকম সে আছে, সেভাবেই মেনে নেয়া হোক,’ বলেন তিনি।

তিনি প্রশ্ন রাখেন, ‘ভ্যালেন্টাইনস ডে এলে আমরা কতজন মেয়ে নিজের জীবনসঙ্গী বা স্বামীকে তার পছন্দের উপহার দিই? কতজন ছেলেই বা গিফট হিসেবে প্লে স্টেশন পায়, বা নিজের মতো করে গেম খেলার সুযোগ পায়?’ তার মতে, আমরা শুধু মেয়েদের চাহিদাকে প্রাধান্য দিয়ে থাকি, অথচ ছেলেদের ভালো লাগা, তাদের শখ—সেসবকে মূল্য দিই না।

ডা. মুনমুন বলেন, ‘যখনই স্বামী ভালো ব্যবহার করে, তখনই মেয়েরা ন্যাগিং শুরু করে—এইটা কেন এমন, ওইটা কেন ওভাবে হয়নি। অথচ আমরা এটা বুঝি না, একজন মানুষ যখন আমাদের জন্য কন্টিনিউয়াসলি এফোর্ট দিচ্ছে, তখন তার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানো উচিত, তাকে স্বস্তি দেয়া উচিত।’

তিনি বলেন, ‘আপনার স্বামী যদি একজন গুড-হ্যান্ডেড মানুষ হন, চেষ্টা করেন আপনার জন্য, তাহলে তাকে বদলাতে যাবেন না, বরং তাকে যেরকম, সেভাবেই গ্রহণ করুন। না হলে একটা পর্যায়ে সে শাটডাউন করবে, আপনার প্রতি আর কোনো এফোর্টই দিবে না।’

ভিডিওটির শেষভাগে ডা. মুনমুন জোর দেন সম্পর্কের পারস্পরিকতা এবং সম্মানবোধের ওপর। তিনি বলেন, ‘ছেলেরা যখন আপনাকে গিফট দেয়, তখন আপনি তার পছন্দটাও বোঝার চেষ্টা করুন। কেবল নিজের পছন্দ না, তার প্রিয় জিনিসটাও এক্সপ্লোর করুন। ভালোবাসা শুধু বলার জন্য নয়, প্রমাণেরও বিষয়।’

সূত্র: https://www.facebook.com/share/v/15i8uGtKu8/