
ছবি: সংগৃহীত
বিশ্বজুড়ে রক্তের সংকট আর গ্রুপ মিলানোর জটিলতার দিন হয়তো শেষ হতে চলেছে। কারণ, জাপানি বিজ্ঞানীরা এমন এক কৃত্রিম রক্ত উদ্ভাবন করেছেন যা সব রক্ত গ্রুপেই ব্যবহারযোগ্য, এবং যার মেয়াদ দুই বছর পর্যন্ত থাকতে পারে। এই 'সবার রক্ত' বর্তমানে ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের পর্যায়ে রয়েছে এবং সফল হলে এটি বিশ্বজুড়ে জরুরি চিকিৎসায় বিপ্লব ঘটাতে পারে।
এই গবেষণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন নারা মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক হিরোমি সাকাই। তার নেতৃত্বে গবেষক দল এমন এক পদ্ধতি ব্যবহার করছেন যেখানে মেয়াদোত্তীর্ণ ডোনার রক্ত থেকে হিমোগ্লোবিন সংগ্রহ করে তা একটি রক্ষাকবচে মোড়ানো হয়, যাতে তা স্থিতিশীল ও ভাইরাসমুক্ত কৃত্রিম রক্তকণিকা হিসেবে কাজ করতে পারে।
রক্ত গ্রুপের কোনো বাধা নেই—এটাই এই কৃত্রিম রক্তের সবচেয়ে বড় বৈশিষ্ট্য। যেখানে সাধারণ দানকৃত রক্তে গ্রুপ মেলানো জরুরি এবং মেয়াদ মাত্র ৪২ দিন, সেখানে এই কৃত্রিম রক্ত দীর্ঘস্থায়ী, নিরাপদ এবং সব রোগীর জন্য ব্যবহারযোগ্য হতে পারে।
চলতি বছরের মার্চ মাসে ১৬ জন সুস্থ স্বেচ্ছাসেবীর শরীরে ১০০ থেকে ৪০০ মিলিলিটার কৃত্রিম রক্ত প্রয়োগ করা হয়। যদি পরীক্ষাগুলো সফল হয়, গবেষকেরা আশা করছেন ২০৩০ সালের মধ্যেই এটি বাস্তব চিকিৎসায় ব্যবহৃত হবে। আর তখন জাপানই হবে বিশ্বের প্রথম দেশ, যারা কৃত্রিম রক্ত ব্যবহারে এগিয়ে যাবে।
অধ্যাপক সাকাই বলেন, ‘লাল রক্তকণিকার নিরাপদ বিকল্প এখনো নেই। আর সেই শূন্যতা পূরণ করতেই এই গবেষণা এত গুরুত্বপূর্ণ।’
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এই পরীক্ষার খবর ছড়িয়ে পড়তেই চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়েছে। অনেকে বলছেন, ‘এটি যদি সফল হয়, তবে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার মতো আবিষ্কার।’ কেউ কেউ মন্তব্য করেছেন, ‘মূল্য সাশ্রয়ী হলে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ইতিহাসে এই আবিষ্কার যুগান্তকারী হয়ে থাকবে।’
উল্লেখযোগ্যভাবে, যুক্তরাষ্ট্রেও কৃত্রিম রক্ত তৈরির প্রচেষ্টা চলছে। ‘এরিথ্রোমার’ নামে একটি প্রকল্পে পুরনো হিমোগ্লোবিন ব্যবহার করে রক্ত তৈরি করার কাজ করছে ইউনিভার্সিটি অব মেরিল্যান্ড। এই প্রকল্পে গত বছর ৪৬ মিলিয়ন ডলার অনুদান দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা গবেষণা সংস্থা ডারপা (DARPA)।
বিশ্বজুড়ে রক্তের ঘাটতি ও গ্রুপ মিলানোর জটিলতার মধ্যে এই কৃত্রিম রক্ত হতে পারে এক বিপ্লবী সমাধান—এমনটাই মনে করছেন চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা।
সূত্র: এনডিটিভি।
রাকিব