ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

খালি পায়ে হাঁটার বিস্ময়কর কিছু উপকার, তবে যেসব ক্ষেত্রে সাবধান হওয়া জরুরি

প্রকাশিত: ০৮:০১, ৮ জুন ২০২৫; আপডেট: ০৮:০২, ৮ জুন ২০২৫

খালি পায়ে হাঁটার বিস্ময়কর কিছু উপকার, তবে যেসব ক্ষেত্রে সাবধান হওয়া জরুরি

ছবি: সংগৃহীত

বাচ্চাকালে হয়তো অনেকেই খালি পায়ে দৌড়েছেন মাটির পথ, ঘাস কিংবা বালির উপর দিয়ে। বড় হয়ে তা অনেকটা বিলাসিতা মনে হতে পারে, তবে বিজ্ঞান বলছেখালি পায়ে হাঁটার রয়েছে বিস্ময়কর স্বাস্থ্য উপকারিতা। ‘আর্থিং’ বা ‘গ্রাউন্ডিং’ নামে পরিচিত এই প্রাকৃতিক অভ্যাসটি শুধু ভালো লাগার ব্যাপার নয়, বরং বাস্তবিক উপকারও করে শরীরের।

তবে সাবধান! সব জায়গায় খালি পায়ে হাঁটা স্বাস্থ্যকর নয়। কোথায়, কখন ও কাদের জন্য এটা উপকারী, আর কখন তা বিপজ্জনক হয়ে উঠতে পারেজেনে নিন বিস্তারিত।

কী কী উপকার পাবেন খালি পায়ে হাঁটলে?

পায়ের পেশি ও গঠন মজবুত হয়

জুতোর ভেতরে দিনের পর দিন বন্দি থেকে আমাদের পায়ের পেশিগুলো অলস হয়ে পড়ে। খালি পায়ে হাঁটার ফলে সেই পেশি, লিগামেন্ট ও টেনডনগুলো সক্রিয় হয়, যা পায়ের গঠন উন্নত করে ও ব্যালান্স বাড়ায়। নিয়মিত এই অভ্যাসে পায়ের চাপবন্টন হয় সঠিকভাবে।

শরীরের ভারসাম্য ও ভঙ্গি উন্নত হয়

খালি পায়ে হাঁটার ফলে মাটির স্পর্শ ও গঠনের প্রতি সচেতনতা বাড়ে। এতে শরীরের proprioception (নিজ শরীরের অবস্থান বোঝার ক্ষমতা) বৃদ্ধি পায়, যা হাঁটার ভারসাম্য ও শরীরের ভঙ্গি উন্নত করতে সাহায্য করে।

জয়েন্ট ব্যথায় উপশম মিলতে পারে

গবেষণায় দেখা গেছে, নরম ও অসম মাটিতে খালি পায়ে হাঁটলে হাঁটু ও কোমরের উপর চাপ কম পড়ে। তবে মনে রাখতে হবে, এটা সব ধরণের জয়েন্ট সমস্যার সমাধান নয়।

রক্ত সঞ্চালন বাড়ে

পায়ের পাতায় রয়েছে অসংখ্য স্নায়ু ও রক্তনালী। খালি পায়ে হাঁটলে এদের উদ্দীপনা ঘটে, যা রক্ত চলাচল বাড়ায়। ঠান্ডা পা কিংবা দীর্ঘসময় বসে থাকা মানুষদের জন্য এটা দারুণ উপকারী।

‘আর্থিং’ বা ‘গ্রাউন্ডিং’ এর মানসিক প্রশান্তি

মাটির সাথে সরাসরি সংযোগ মানসিক প্রশান্তি এনে দিতে পারে। কিছু গবেষণায় দেখা গেছে, এটি স্ট্রেস, ঘুমের সমস্যা ও ব্যথা উপশমেও কার্যকর হতে পারে।

যেসব ক্ষেত্রে খালি পায়ে হাঁটা বিপজ্জনক?

ফ্ল্যাট ফুট, প্ল্যান্টার ফ্যাসাইটিস বা পায়ের যন্ত্রণায় কষ্ট পেলে সতর্ক হন

এ ধরনের সমস্যায় খালি পায়ে হাঁটা উল্টো ব্যথা বাড়াতে পারে। তাই এসব ক্ষেত্রে আগে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

শহরের রাস্তা বা ফুটপাতনা!

ঘাস বা বালির উপর হাঁটা যতই স্বাস্থ্যকর হোক না কেন, শহরের ধুলোবালি, ভাঙা কাচ, রাসায়নিক ও জীবাণুতে ভরা পথ খালি পায়ে হাঁটার জন্য একেবারেই উপযুক্ত নয়।

ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বিপজ্জনক

ডায়াবেটিসে পায়ের স্নায়ু ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় ব্যথা টের না পাওয়ার আশঙ্কা থাকে। ফলে ছোট একটি কাটা কিংবা পুড়ে যাওয়া বড় বিপদ ডেকে আনতে পারে।

চরম গরম বা ঠান্ডা থেকে বিরত থাকুন

গরম রাস্তায় খালি পায়ে হাঁটলে পুড়ে যাওয়া বা ফোস্কা পড়ার ঝুঁকি থাকে। আবার ঠান্ডা মেঝেতে হাঁটলে সংবেদনশীল মানুষদের ক্ষেত্রে পেশি শক্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।

কালস বা ছত্রাক সংক্রমণের ভয়

বারবার খালি পায়ে হাঁটলে পায়ের তলায় চামড়া মোটা হয়ে যেতে পারে বা ফাংগাল ইনফেকশন হতে পারে, বিশেষ করে ভেজা জায়গায় হাঁটলে।

কীভাবে নিরাপদে শুরু করবেন খালি পায়ে হাঁটার অভ্যাস?

  • শুরুতে নিজের বাসার লন, বারান্দা বা পরিচ্ছন্ন বালুর জায়গায় হাঁটা শুরু করুন।
  • দিনে কয়েক মিনিট, ধীরে ধীরে সময় বাড়ান।
  • ব্যথা বা অস্বস্তি অনুভব করলে জুতা পরে নিন।
  • ব্যায়াম করার সময় খালি পায়ে যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন করাও উপকারী হতে পারে।

খালি পায়ে হাঁটা নিঃসন্দেহে উপকারীতবে সবার জন্য না, সব জায়গায় না। সচেতনভাবে ও নিরাপদ পরিবেশে এই অভ্যাস গড়ে তুললে শরীর-মন দুটোই উপকৃত হবে। চেষ্টা করে দেখুনহয়তো খালি পায়ের স্পর্শে আপনি ফিরে পাবেন প্রকৃতির স্নেহছোঁয়া আর নিজের ভেতরের ভারসাম্য।

 

সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া।

 

রাকিব

×