
ছবি: সংগৃহীত
যখন গোটা বিশ্ব মুসলিম সম্প্রদায় ঈদুল আজহার পবিত্র দিনটি উদযাপন করছে কোরবানির মাধ্যমে, তখন গাজা উপত্যকায় চলছে এক নির্মম বাস্তবতা—সেখানে পশু নয়, মানুষই নিজ জীবন দিয়ে কোরবানি দিচ্ছেন। প্রতিদিনই ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় গাজার বুকে ঝরছে শিশু, নারী, বৃদ্ধসহ নিরীহ মানুষের তাজা প্রাণ।
গাজা জুড়ে ঈদের কোনো উৎসব নেই। মসজিদভর্তি নামাজ নয়, চারপাশে শুধুই ধ্বংসস্তূপ। পবিত্র ঈদের সকালেও ইসরায়েলি ড্রোন ও কামানের গোলায় নিহত হয়েছেন বহু মানুষ। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেবল গত ২৪ ঘণ্টায় গাজায় নারী ও শিশুসহ অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন।
গাজার মানুষের কাছে এখন কোরবানির অর্থ দাঁড়িয়েছে ভিন্ন এক মানে—আল্লাহর পথে নিজের জীবন বিলিয়ে দেওয়া। খাদ্য, পানি, বিদ্যুৎ তো নেই-ই, এমনকি ঈদের দিনে কোরবানির পশু কেনার মতো অবস্থা কারো নেই। বরং প্রতিটি পরিবার আজ কেবল প্রার্থনা করছে যেন তারা কিংবা তাদের শিশুরা আর যেন একটি দিন বেঁচে থাকতে পারে।
এক গাজাবাসী মা বলেন, “আমার কোলের সন্তানটাও হয়তো আরেকটা ঈদ দেখবে না। আজ যে কোরবানি হচ্ছে, সেটা কোরবানির পশু নয়, এটা আমার সন্তান, আমার স্বামী, আমার ঘর।”
হাসপাতালগুলোয় উপচে পড়া আহতদের মধ্যে অধিকাংশই শিশু ও মহিলা। কোথাও নেই ওষুধ, নেই চিকিৎসাসেবা। এমন ঈদ যেন পুরো মানবতার প্রতি এক চরম প্রশ্নচিহ্ন।
জাতিসংঘ বলছে, গাজায় এখন খাদ্য-নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে ৯০ শতাংশ মানুষ। তাদের কাছে ঈদ নয়, প্রতিদিনই এক যুদ্ধ—বেঁচে থাকার লড়াই। এই মুহূর্তে গাজার শিশুরা নতুন জামা নয়, চায় একটু খাবার আর বেঁচে থাকার আশ্বাস।
এই ঈদের দিনে যখন মুসলিমরা পশু কোরবানি করে তাকওয়ার পরিচয় দিচ্ছেন, তখন গাজায় জীবন কোরবানিই যেন একমাত্র বাস্তবতা। প্রশ্ন ওঠে—মানবতা আজ কোথায়? বিশ্ববিবেক কি কেবল দর্শকের ভূমিকায় থাকবে?
গাজার ঈদ কোনো উৎসব নয়, এটা যেন এক অশ্রুভেজা আহাজারির নাম। সেখানে প্রতিটি জীবনই যেন এক ব্যতিক্রমী কোরবানি—নীরব, নিষ্ঠুর ও নিদারুণ। বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ ও মানবতা আজ যেন তাদের কান্নায় সাড়া দেয়, এটাই গাজার মানুষের একমাত্র প্রত্যাশা।
ফারুক