বিশ্বজুড়ে ইন্টারনেটের সমার্থক হয়ে উঠেছিল 'গুগল' নামটি। ১৯৯৮ সালে যাত্রা শুরু করে 'ব্লু লিংক' নির্ভর এক সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে গড়ে তোলে প্রায় দুই ট্রিলিয়ন ডলারের এক বিশাল সাম্রাজ্য। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই)-র আবির্ভাবের পর সেই আধিপত্যে এসেছে বড়সড় চ্যালেঞ্জ। বিশেষ করে ২০২২ সালের নভেম্বরে চ্যাটজিপিটি’র আত্মপ্রকাশ যেন ডিজিটাল দুনিয়ায় এক প্রকার ভূমিকম্প ডেকে আনে।
তবে গুগলের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বর্তমানে আলোচনায় এসেছে নতুন এক প্ল্যাটফর্ম— পারপ্লেক্সিটি। এটি শুধু একটি চ্যাটবট নয়, বরং নিজেকে দাবি করছে ‘আনসার ইঞ্জিন’ হিসেবে, যেখানে জেনারেটিভ এআই এবং প্রচলিত সার্চ ইঞ্জিনের নির্ভরযোগ্যতার মেলবন্ধন ঘটেছে।
ক্রমবর্ধমান জনপ্রিয়তা
ব্যাঙ্ক অফ আমেরিকার গবেষণা বলছে, গুগলের ট্রাফিক বছরে বছরে হ্রাস পাচ্ছে, যেখানে চ্যাটজিপিটি ও পারপ্লেক্সিটির মত প্ল্যাটফর্মগুলোর ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ছে। পারপ্লেক্সিটির ট্রাফিক এক বছরে বেড়েছে প্রায় ২৩৩ শতাংশ। যদিও গুগল এখনও দৈনিক ২.৭ বিলিয়ন ভিজিট পায়, পারপ্লেক্সিটির মাত্র ৪ মিলিয়ন ভিজিট হলেও বিশ্লেষকরা বলছেন— এই ব্যবধান দ্রুত কমে আসবে।
টেক জগতের নজর
পারপ্লেক্সিটি এতটাই সম্ভাবনাময় যে, অ্যাপল এবং স্যামসাং— বিশ্বের সবচেয়ে বড় দুই স্মার্টফোন নির্মাতা— তাদের সঙ্গে অংশীদারিত্বের কথা ভাবছে। অ্যাপলের সিনিয়র নির্বাহী এডি কিউ সম্প্রতি স্বীকার করেছেন যে, পারপ্লেক্সিটির সঙ্গে আলোচনা চলছে। আর যদি পারপ্লেক্সিটি ভবিষ্যতে ডিফল্ট সার্চ ইঞ্জিন হিসেবে iPhone বা Android-এ জায়গা পায়, তাহলে গুগলের জন্য সেটি এক বিশাল ধাক্কা হবে।
নতুন প্রজন্মের পছন্দ
জেনারেশন Z-এর অনেকেই এখন আর গুগল ব্যবহার করেন না— বরং সরাসরি প্রশ্নের উত্তর পেতে তারা ঝুঁকছেন চ্যাটজিপিটি বা পারপ্লেক্সিটির মতো প্ল্যাটফর্মে। নিউ ইয়র্কের SEO বিশেষজ্ঞ লিলি রে বলেন, "মানুষ গুগল ব্যবহার বন্ধ করে দিয়েছে— এটা এখন প্রতিনিয়তই শুনছি।"
গুগলের চ্যালেঞ্জ
এই অবস্থায় গুগল নিজেদের এআই সেবা উন্নত করতে হন্তদন্ত। তবে সমালোচকরা বলছেন, তাদের অনেক পণ্য এখনো পুরোপুরি প্রস্তুত না হয়েই বাজারে ছাড়া হচ্ছে। এতে ব্যবহারকারীর অভিজ্ঞতা ভালো না হওয়ায়, গুগল আরও পিছিয়ে পড়ছে।
ভবিষ্যতের প্রশ্ন
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, হয়তো এখনই গুগলের 'শেষ' বলা যাবে না, কিন্তু তারা যদি দ্রুত ও কার্যকরভাবে নিজেদের এআই এবং সার্চ অভিজ্ঞতা উন্নত করতে না পারে, তাহলে ‘নোকিয়া’ কিংবা ‘আস্ক জিভস’-এর মত অতীতের স্মৃতি হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া যায় না।
এখন সময় বলবে, আমরা ভবিষ্যতে যখন জিজ্ঞেস করব— "গুগলের কী হল?" — তখন উত্তরটা দেবে হয়তো চ্যাটজিপিটি বা পারপ্লেক্সিটিই।
রিফাত
