
ছবিঃ সংগৃহীত
শাকিব খান অভিনীত ‘তাণ্ডব’ সিনেমা চলাকালে কারিগরি ত্রুটি দেখা দেওয়ায় ক্ষুব্ধ দর্শকরা ময়মনসিংহের ছায়াবাণী সিনেমা হলে ভাঙচুর চালিয়েছে। এ সময় লুটপাটের অভিযোগও উঠেছে।
ঈদের দিন শনিবার (৭ জুন) বিকেলে নগরীর সি কে ঘোষ রোড এলাকার সিনেমা হলটিতে হামলার পর একটি শো বন্ধ থাকে। পরে পুলিশ এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনলে পুনরায় ছবি চালু হয়।
সাড়ে ৭০০ আসনবিশিষ্ট দোতলা হলটিতে সাড়ে তিনটার শোর শেষ সময়ে কারিগরি ত্রুটির কারণে সিনেমা বন্ধ হয়ে গেলে দর্শকরা উত্তেজিত হয়ে হলের ভেতর ও বাইরে ভাঙচুর করে। এতে বেশ কয়েকটি আসন, চেয়ার, পোস্টার, টিকিট কাউন্টারের দরজা-জানালা ভাঙা হয়। পরে সন্ধ্যা ৬টা থেকে ৭টা পর্যন্ত শো বন্ধ থাকে।
সিনেমার দর্শক আল-আমিন হোসেন বলেন, “বিভাগের মধ্যে এই হলটি মোটামুটি ভালো, তাই আমি শেরপুর থেকে এসেছি ছবি দেখতে। সবকিছু ঠিকঠাক ছাড়া ঈদের মতো ব্যস্ত সময়ে কীভাবে কর্তৃপক্ষ সিনেমা চালানোর সিদ্ধান্ত নিল!”
“টিকিট কাটতে গিয়ে পড়তে হয়েছে সমস্যায়, হলের ভেতরে পানি জমেছে। ছবি চলার সময় শেষ না হতেই বন্ধ হয়ে যাওয়া, এটা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। তাই দর্শকরা ক্ষুব্ধ হয়ে ভাঙচুর করেছে।”
হাসান জাকির নামে আরেক দর্শক বলেন, “হলের সামনে অপেক্ষমাণ শত শত দর্শক। শো শেষ না হলেও কর্তৃপক্ষ অনবরত টিকিট বিক্রি করছিলেন। এটা কোনো নিয়মের মধ্যে পড়ে না। ছবি চলাকালীন কখনো সাউন্ড নেই, আবার কখনো ডিসপ্লে বন্ধ হয়ে যাওয়া অত্যন্ত বিরক্তিকর। ‘তাণ্ডব’ সুপার হিট ছবি বলেই দর্শকরা এতটা উত্তেজিত হয়েছেন।”
হলের ক্যাশিয়ার আল-আমিন শেখ বলেন, “সমস্যা বলে কয়ে আসে না। কিন্তু দর্শকরা এমন করবে তা কল্পনাও করিনি। সমস্যা হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই তা সমাধান হয়। কিন্তু দোতলা থেকে দর্শকরা যেভাবে একের পর এক আসন নিচে ছুড়ে মারছিল, তাতে বড় ধরনের দুর্ঘটনাও ঘটতে পারত। তারা চেয়ার, ক্যাশ কাউন্টার ভাঙচুর করেছে এবং টাকাও লুট করেছে। এমন হলে হলে ব্যবসা চালানো কঠিন হয়ে যাবে।”
ময়মনসিংহ মহানগরের তিন নম্বর পুলিশ ফাঁড়ির এএসআই মো. রাসেল বলেন, “ভাঙচুরের খবর পেয়ে দ্রুত এসে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনি। অতিরিক্ত আবেগের কারণে এমন হয়েছে। কোনো কিছুতে সমস্যা হতেই পারে, তবে আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া ঠিক নয়।”
একসময় ময়মনসিংহ শহরে অজন্তা, ছায়াবাণী, অলকা, পূরবী ও সেনা অডিটোরিয়াম—এই পাঁচটি সিনেমা হল ছিল। আশির দশকে এসব হল ছিল দর্শকপ্রিয়। এক হল থেকে অন্য হলে ছুটতেন দর্শকরা পছন্দের সিনেমা দেখতে।
কিন্তু মানহীন সিনেমা, দর্শক সংকট ও ২০০২ সালে সিনেমা হলে বোমা হামলার ঘটনার পর ধীরে ধীরে হল বন্ধ হতে শুরু করে। একে একে বন্ধ হয়ে যায় অজন্তা, অলকা ও সেনা অডিটোরিয়াম। কিছুদিন আগেও পূরবী ও ছায়াবাণী হল দুটি চালু ছিল, যদিও দর্শক সংকটে চলছিল খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। সম্প্রতি ব্যবসায়িক কারণে পূরবী হল ভেঙে বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ চলছে।
টিকে থাকা ছায়াবাণী সিনেমা হলে বছরে কেবল দুই ঈদেই কিছুটা দর্শক পাওয়া যায়। শাকিব খানের ‘তাণ্ডব’ ছবি দেখতে ঈদের দিন সকাল থেকেই ছিল উপচে পড়া ভিড়। আসনের তুলনায় দর্শক বেশি হওয়ায় শো চালাতে হিমশিম খাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।
ইমরান