ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ জুন ২০২৫, ২৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের রুট পারমিট বাতিল

স্টাফ রিপোর্টার, বরিশাল

প্রকাশিত: ০১:৪৬, ৮ জুন ২০২৫

কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের রুট পারমিট বাতিল

নানান অভিযোগে ও বরিশালে কোস্টগার্ডের দায়ের করা মামলার পর ঢাকা-বরিশাল নৌরুটের যাত্রীবাহী নৌযান এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের রুট পারমিট বাতিল করা হয়েছে।

বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের নৌ-নিরাপত্তা ও ট্রাফিক ব্যবস্থাপনা বিভাগের যুগ্ম-পরিচালক মুহম্মদ মোবরাক হোসেনের স্বাক্ষরিত এক আদেশে শনিবার (৭ জুন) দিবাগত রাতে তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত হওয়া গেছে।

বরিশাল নবগ্রাম রোডের মেসার্স সালমা শিপিং লাইন্সের পরিচালনাধীন এমভি কীর্তনখোলা-১০ এর মালিক ও ম্যানেজার বরাবরে ওই আদেশে উল্লেখ করা হয়েছে, ঢাকা-বরিশাল নৌপথে চলাচলকারী এমভি কীর্তনখোলা-১০ যাত্রীবাহী নৌযানটি গত ৫ জুন রাত এগারোটার দিকে বরিশালের উদ্দেশ্যে সদরঘাট টার্মিনাল ত্যাগ করার পর পোস্তগোলা ব্রীজ অতিক্রম করার পূর্বে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, লঞ্চের একটি প্রপেলার ভাঙ্গায় এক ইঞ্জিনে লঞ্চটি চালিয়ে নেয়া হচ্ছে।

এ সংবাদের পর পরিবহন পরিদর্শক এমভি কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের দায়িত্বরত ইনচার্জ মাষ্টার শুক্কুর এবং ইনচার্জ ড্রাইভার মিজানুর রহমানের সাথে মোবাইল ফোনে প্রপেলার ভাঙ্গার বিষয়ে জানতে চাইলে তারা তথ্যের সত্যতা স্বীকার করেন। 

তাৎক্ষনিক পরিবহন পরিদর্শক সম্ভাব্য নৌ-দূর্ঘটনা এড়াতে লঞ্চের মাষ্টারকে যাত্রা বাতিল করে সদরঘাট টার্মিনালে ফেরত আসার জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন। কিন্তু দায়িত্বরত মাষ্টার সদরঘাট টার্মিনালে ফেরত আসার অনিহা প্রকাশ করায় পরিবহন পরিদর্শক বিষয়টি যুগ্ম-পরিচালককে (নৌনিট্রা) অবহিত করেন। যুগ্ম-পরিচালক (নৌনিট্রা) লঞ্চের মাষ্টারের সাথে ফোনে কথা বলে সদরঘাট টার্মিনালে ফেরত আনার জন্য নির্দেশ প্রদান করেন। পরবর্তীতে মাষ্টারের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও মাষ্টারের মোবাইল নম্বারটি বন্ধ পাওয়া যায়। 

আদেশের আরও উল্লেখ করা হয়েছে, লঞ্চের মাষ্টার নির্দেশনা অমান্য করে সিঙ্গেল ইঞ্জিন চালিয়ে নৌযানটি বরিশালের উদ্দেশ্যে যায়। এহেন পরিস্থিতিতে বড় ধরনের নৌ-দূঘটনা ঘটা এবং ঈদ-উল-আযহায় ঘরমুখো যাত্রীদের জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির হওয়ার সম্ভাবনা ছিল। 

ফলে কর্তৃপক্ষের তথা সরকারের ভাবমুর্তি নষ্ট হতে পারতো। নৌযানের মাষ্টারের এমন আচরন এবং নির্দেশনা অমান্য করায় বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন (নৌ-রুট পারিমট, সময়সূচী ও ভাড়া নির্ধারন) বিধিমালা-২০১৯ সংশ্লিষ্ট ধারার পরিপন্থি। যেকারণে নৌযানটি পরিচালনা করায় লঞ্চটির চলাচল পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত সাময়িকভাবে স্থগিত করা হলো। 


কোস্ট গার্ডের মামলায় কীর্তনখোলা লঞ্চের দুইজন গ্রেপ্তার 

কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়, যাত্রী হয়রানি এবং বরিশাল লঞ্চঘাটে দায়িত্বরত কোস্টগার্ডের সদস্যদেরকে হুমকি দেওয়ায় ঘটনায় লঞ্চের মালিক পক্ষের বিরুদ্ধে থানায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।

গত ৬ জুন সন্ধ্যায় বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানায় কোস্টগার্ডের দক্ষিণ জোনের কন্টিজেন্ট কমান্ডার মো. শাহজালাল বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। কোতোয়ালি থানার ওসি মিজানুর রহমান বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। 

ওই মামলায় দুইজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন-কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের ম্যানেজার রিয়াজুল করিম বেলাল ও লঞ্চের মাষ্টার শুক্কুর আলী।

সূত্রমতে, গত ৫ জুন রাত নয়টায় কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চটি ঢাকার সদরঘাট থেকে ছাড়ার কথা থাকলেও প্রায় তিন ঘণ্টা বিলম্ব করে যাত্রা শুরু করে।

পথিমধ্যে যান্ত্রিক ত্রুটির অজুহাত দেখিয়ে মাঝ নদীতে লঞ্চ থামিয়ে নৌকা ও ট্রলারের মাধ্যমে অবৈধভাবে অতিরিক্ত যাত্রী উত্তোলন করা হয়। এতে লঞ্চের ধারণ ক্ষমতা ১ হাজার ৫৫০ জন হলেও লঞ্চটিতে প্রায় চার হাজার যাত্রী পরিবহন করা হয়।

ওইদিন ভোর রাতে বৃষ্টির সময় ছাদে অবস্থানরত যাত্রীদের লঞ্চের ভেতরে ঢুকতে না দিয়ে ছাদের দরজায় তালা দিয়ে রাখা হয়। ফলে ছাদে আটকিয়ে রাখা নারী, শিশু ও বৃদ্ধসহ অনেকে অসুস্থ হয়ে পরেন। পরেরদিন (৬ জুন) লঞ্চটি বরিশাল টার্মিনালে পৌঁছানোর পর অতিরিক্ত ভাড়া দাবিসহ লঞ্চ কর্তৃপক্ষের দুর্ব্যবহার ও লঞ্চের বিভিন্ন অনিয়মকে কেন্দ্র করে যাত্রীদের সাথে লঞ্চের স্টাফদের বাগবিতন্ডা থেকে হাতাহাতি শুরু হয়।

পরবর্তীতে যাত্রীদের অনুরোধে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কোস্টগার্ড, সেনাবাহিনী ও নৌ-পুলিশ এগিয়ে আসে। এরপর কোস্টগার্ডের কন্টিনজেন্ট কমান্ডারের মধ্যস্থতায় যাত্রী এবং লঞ্চ কর্তৃপক্ষের মাঝে সমঝোতা হয়। তবে পরবর্তীতে লঞ্চ মালিক মঞ্জুরুল আহসান ও তার ছেলে শান্ত হাসান ঘটনাস্থলে এসে আক্রমণাত্মক ও নাশকতামূলক আচরণসহ মারমুখী হয়ে দায়িত্বরত কোস্টগার্ডের সদস্যদেরকে হুমকি এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাজে বাঁধা প্রদান করে।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে লঞ্চ মালিক মঞ্জুরুল আহসান, তার ছেলে শান্ত হাসান ও লঞ্চ স্টাফদের বিরুদ্ধে যাত্রী হয়রানি, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর আক্রমণাত্মক ও নাশকতামূলক আচরণ এবং সরকারি কাজে বাঁধা প্রদান করায় থানায় মামলা দায়ের করা হয়।

রাজু

×